শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছে রাজধানীবাসী। বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে শহরজুড়ে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।
সহিংসতার মাঝে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনের ক্যান্টিনে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এছাড়া টোল প্লাজায় ফের দেওয়া হয়েছে আগুন। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক পুলিশ বক্স। সংঘর্ষে আহত কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সহিংসতার মধ্যে রাস্তায় গণপরিবহন নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যে ২/১টি বাস চলতে দেখা গেলেও তাতে যাত্রীর ভিড় চোখে পড়ছে না। প্রাইভেটকারসহ ব্যক্তিগত যানবহনের চাপও কম।
সচিবালয়সহ কয়েকটি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতেও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষকেও বের হতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে রাজধানীজুড়ে।
অন্যদিনের তুলনায় সচিবালয়ে উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা গেছে। দর্শনার্থীদের তেমন আনাগোনা সচিবালয়ে দেখা যায়নি। সচিবালয়ের ভেতরেও পরিবহনের সংখ্যা কিছুটা কম পরিলক্ষিত হয়েছে।
সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে।
কী কারণে এই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে তা জানা যায়নি।
দুপুরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শিল্পমন্ত্রীর একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা অনিবার্য কারণে বাতিল করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন বাজার, বসুন্ধরা, নর্দ্দা ও কুড়িল এলাকায় ইউনাটেড ইউনিভার্সিটি, নর্থ-সাউথ, আইইউবিসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এসময় সড়কের দুই পাশেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কার্যত অচল হয়ে যায় কুড়িল থেকে রামপুরা ব্রিজের আগ পর্যন্ত সড়ক।
সকালে বাড্ডার সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়, বাঁধে সংঘর্ষ।
সংঘর্ষে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা, মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরে রামপুরায়ও রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। রামপুরায় ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। সেখানে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
কাকরাইল থেকে পল্টন মোড়েও শিক্ষার্থীদের মিছিল করতে দেখা যায়। প্রেসক্লাবের দিক থেকে আসা মিছিলটি পল্টন মোড় ঘুরে আবার প্রেসক্লাবের সামনে কদম ফোয়ারার পাশে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। ফলে এ রাস্তাটিতেও যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মালিবাগে আবুল হোটেল মোড়েও দুপুরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। আবুল হোটেল থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে কাকরাইল মোড়ে আসতেই দেখা যায়, রাস্তা অবরোধ করেছেন একদল শিক্ষার্থী।
উত্তরার জমজম টাওয়ার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের বক্সে ভাঙচুর করা হয়েছে। এসময় দুটি মিনিবাসও ভাঙচুর করা হয়। এলাকাটিতে আন্দোলকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
রাজধানীর মতিঝিলেও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মিরপুর-১০ নম্বর। সেখানে আন্দোলকারী ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এসময় পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে রাস্তায় রাস্তায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাজলা সংলগ্ন টোলপ্লাজা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আন্দোলনকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছেন। তাদের হাতে লাঠিসোঁটাও দেখা গেছে।
বুধবার থেকেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় যাত্রাবাড়ী। শনির আখড়া, কাজলা অঞ্চল এখনো শান্ত হয়নি। গতকাল হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে; রাতভর চলে সংঘর্ষ।
বৃহস্পতিবার সকালেও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে যাত্রাবাড়ী অঞ্চলে। আবারও টোল প্লাজায় আগুন দেওয়া হয়েছে।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
দক্ষিণ কোরিয়ায় বিমান বিধ্বস্তে নিহত বেড়ে ১৭৭
অবশেষে বিপিএলের টিকিট মূল্য প্রকাশ, কিনবেন যেভাবে
ঢাকায় নেমে আফ্রিদি বাংলায় বললেন, ‘আমি চলে এসেছি’