রংপুর ব্যুরো:আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘অন্তর্রবতী সরকারের আমলেই আবু সাঈদ হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন হবে। আমরা এমন বিচার করতে চাই যা সারা পৃথিবীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’ গতকাল বুধবার দুপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদতবার্ষিকী ও ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষ্যে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা কথায় কথায় তাঁর বাবার মৃত্যুর কথা বলতেন। এরপরও তাঁর বাবার হত্যার বিচার করতে সাড়ে তিন বছর সময় লেগেছে। আমরা সেই শেখ হাসিনার আমলে বিচার করতে আসিনি। আমরা আশাবাদী, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের শাসনামলে আবু সাঈদ হত্যাকান্ডের বিচার আপনারা দেখে যাবেন।’
তিনি বলেন, ‘আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা ১৬ তারিখে দেখিনি, পরদিন ১৭ জুলাই বিকেলে দেখেছি। যে ছেলে এভাবে মরতে পারে একজন অভিভাবক হিসেবে বসে থাকতে পারিনি। আমার মনে হয়েছিল, আমাদের আর ভয় পাওয়ার অধিকার নেই। আবু সাঈদের আদর্শ ছিল সত্য ও ন্যায়ের। মৃত্যুর জন্য সে প্রস্তুত ছিল। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বহু মানুষ বহুভাবে মারা যায়। কিন্তু তারমতো এভাবে কেউ মারা যাননি। এটা জেনে শতশত তরুণ আত্মত্যাগ করেছে। আবু সাঈদ হত্যাকান্ডের বিচার কাজ পূর্ণগতিতে এগিয়ে চলছে।’
তিনি বলেন, ‘রংপুর অবহেলিত হলেও মানুষগুলো সহজ-সরল। সারাদেশে সুষম উন্নয়ন সাংবিধানিক অধিকার। সেই লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করছে। নীলফামারীতে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘিরে সর্বাধুনিক হেলথ সিটি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। মানুষ যেন সিঙ্গাপুর না গিয়ে রংপুর যায়।’
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকত আলী। এ সময় বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এসএমএ ফায়েজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের ও মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. তানজীমউদ্দীন খান উপস্থিত ছিলেন।
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রংপুরে পালিত হয় জুলাই শহীদ দিবস। দিবসের শুরুতেই বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় রংপুরের পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে শায়িত শহীদ আবু সাঈদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত করা হয়।
শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকাত আলীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী বলেন, আবু সাঈদের আত্মদানের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কোনোদিন ভুলে যাবে না। তার স্মৃতি নিয়ে কাজ করছে তারা। একই সঙ্গে আবু সাঈদ হত্যার বিচার দ্রুত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বদা সক্রিয় ভূমিকা রাখার কথাও জানান তিনি।দোয়া মোনাজাতের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। তিনি দাবি করেন, ছেলে হত্যার বিচার এবং আবু সাঈদের সম্মানার্থে দিবসের স্বীকৃতির।
দিবসটি উপলক্ষে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কালো ব্যাজ ধারণ করে একটি শোক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।সকাল সাড়ে ১০টায় উদ্বোধন করা হয় আবু সাঈদ তোরণ ও মিউজিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর এবং তার নিহত হওয়ার স্থানে ‘আবু সাঈদ চত্বর’ ঘোষণার মাধ্যমে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
আব্দুর রহমান মিন্টু
রংপুর ব্যুরো চীফ
আরও পড়ুন
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলায় প্রতিবাদে খুলনা মহানগরী জামায়াতের বিক্ষোভ
গোপালগঞ্জের ঘটনায় খুলনা উত্তপ্ত
গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে সিলেটে ‘ব্লকেড’