অনলাইন ডেস্ক :
বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে অপেক্ষা করে বিদেশগামীদের দ্রুত এসএমএস পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে একেকজনের কাছে থেকে নেওয়া হতো আড়াই থেকে ৫ হাজার টাকা। চলতি বছরের জুন থেকে এ ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় দুই শতাধিক বিদেশগামীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এই চক্রটি। এসএমএস পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে গত বুধবার রাজধানীর মুগদা থেকে প্রতারক চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মো. নুরুল হক, সাইফুল ইসলাম, ইমরান হক ও দুলাল মিয়া। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। রাজধানীর কাওরান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, রাজধানীর দুটি হাসপাতালে স্টোর কিপার ও রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সম্পর্কে আমরা তথ্য পেয়েছি। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তথ্য যাচাই হাসপাতালগুলোর নাম এবং ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, রাজধানীতে বিদেশগামীদের জন্য ৭টি হাসপাতাল চিহ্নিত ছিল, সেসব হাসপাতালের সামনে এসব দালাল চক্রের লোকজন অপেক্ষা করে বিদেশগামীদের টার্গেট করতো। এসএমএস পেতে দেরি হলে তারা বিভিন্নভাবে হাসপাতালগুলোতে এসে যোগাযোগ করতো, কীভাবে তাড়াতাড়ি টিকাটি পাওয়া যায়; যাতে করে তাদের বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনও সংশয় না থাকে। বিদেশগামী যারা হাসপাতালে এসে বিষয়টি জানতে পারলেও পরবর্তীতে একসময় দালালদের খপ্পরে পড়ে যায়। তাড়াতাড়ি এসএমএস পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছে থেকে জনপ্রতি আড়াই থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিতো। অনেক সময় স্বাভাবিক নিয়মেই এসএমএস চলে আসত আবার অনেক সময় এ দালাল চক্রের সঙ্গে হাসপাতালগুলোর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে বিদেশগামীরা টিকার এসএমএস পেতো। আবার অনেকেই এসএমএস পেতো না। এই চক্রের মূল হোতা নুরুল ইসলাম, সাইফুল এবং ইমরান হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে বিদেশগামীদের টার্গেট করতো। অনেককে এসএমএস পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রলোভন দেখাতো। পরবর্তীতে সাইফুল আর ইমরান টিকা প্রত্যাশীদের সঙ্গে নুরুলের পরিচয় করিয়ে দিতো। নুরুল দরদাম ঠিক করে টিকা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা নিতো। টাকার দেনা-পাওনা ঠিক হয়ে গেলে নুরুল পরবর্তীতে দুলালের কাছে নিয়ে যেতো। টাকার পরিমাণে নির্ধারিত হতো একদিনে পাওয়া যায় কিনা। গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, বিদেশগামীরা ছিল তাদের টার্গেট। চক্রটি মুগদা শাহবাগ রমনা শেরে বাংলা নগর মহাখালী এলাকায় সক্রিয় ছিল। এভাবে তারা দুই শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে এসএমএস পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করেছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এসএমএসের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রবাসী ছিল। ২০১৮ সালে ভিসা জটিলতার কারণে আর বিদেশ যেতে পারেনি। ১৯৯৮ সালে অবৈধভাবে বিদেশ গিয়েছিল। বিদেশে থাকায় পরবর্তীতে সাইফুলের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। গ্রেপ্তার হওয়া সাইফুল একটি সরকারি সংস্থায় চাকরিচ্যুত ছিল। অনৈতিক কাজের জন্য তার চাকরি হারাতে হয়। ইমরান একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করে। দুলাল একটি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে আউটসোর্সিং হিসেবে তার নিয়োগ। সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হয়, প্রতারক চক্রটি কীভাবে এসএমএস পাইয়ে দিতো এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিদেশগামীদের প্লেনের টিকেট কাটা, ভিসার মেয়াদের কারণে তারা দ্রুত টিকা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে। টিকা নিতে ইচ্ছুক হাসপাতালগুলোতে খবর নেওয়ার জন্য আসলে পরবর্তীতে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে তারা। বিদেশগামীদের প্রলুব্ধ করে তাড়াতাড়ি টিকা পাইয়ে দেওয়ার জন্য। তারা বলে, এক থেকে চার দিনের মধ্যে টিকার ব্যবস্থা করে দেবে। এতে করে বিদেশগামীরা প্রতারিত হয়ে আসছে। তিনি আরও বলেন, টাকা দিয়ে যারা টিকা পাননি তাদের সংখ্যা দুই শতাধিক। অনেক সময় স্বাভাবিক নিয়মে এসএমএস চলে এসেছে, এ ছাড়া নিবন্ধন করে যারা তাদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করার চেষ্টা করেছে। হাসপাতালে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের সঙ্গে কোন যোগসাজশ রয়েছে কিনা, সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করবো। তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সাতটি হাসপাতালে বিদেশগামীদের টিকাদান কর্মসূচি চলছিল। এসব হাসপাতালগুলোর সামনে তারা অপেক্ষা করতো। স্টোর কিপার বা রেজিস্ট্রেশনের এসএমএস পাঠায় তাদের সঙ্গে পূর্ব থেকেই সখ্যতা ছিল, সেসব কথাকে কাজে লাগিয়ে তারা বিভিন্ন সময় তাদেরকে উৎকোচ দিয়েছে; যে কারণে এসএমএস নিয়ে প্রতারণা করতে পেরেছে তারা।
আরও পড়ুন
শিগগিরই নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে যাচ্ছে জামায়াত: শিশির মনির
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত
যেসব কারণে প্রতিদিন ১টি কলা খাবেন