নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনা প্রাদুর্ভাবে এবার কোরবানি ঈদের পশু ও কাঁচা চামড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এখনো তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারছে না। পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে চলমান লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কোরবানি ঈদের পশু বিক্রি এবং কোরবানি পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই এবার গবাদিপশুর বেচাকেনা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও মজুদে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি খারাপের বিষয়টি মাথায় রেখেই কোরবানি প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কারণ ব্যবসায়ীরা এখনই প্রস্তুতি শুরু না করলে পশু বেচাকেনা থেকে শুরু করে কোরবানি কাঁচা চামড়া সংগ্রহে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। যদিও কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও মজুদ নিয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি বৈঠক করেছে। ওই বৈঠক থেকে ব্যবসায়ীদের কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বলা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এ্যাসোসিয়েশন এবং ট্যানারি শিল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পবিত্র ঈদ-উল-আজহায় সারাদেশে কোরবানি হয়ে থাকে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ পশু। বিগত কয়েক বছর ধরে পশু আমদানি বন্ধ থাকায় দেশের প্রায় সাড়ে ১২ লাখ খামারে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষসহ অন্যান্য পশুর প্রজনন ও লালন-পালন করা হচ্ছে। যদিও করোনা মহামারীর কারণে গত বছর কাক্সিক্ষত হারে দেশে কোরবানি হতে পারেনি। ফলে দেশে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণও কম হয়েছে। এবার করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ। এমন অবস্থায় কোরবানি ঈদে পশু জবাইয়ের অনুমতি পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় বাড়ছে।
সূত্র জানায়, করোনা মহামারীর কারণে পোস্তার আড়ত ও সাভারের ট্যানারি ব্যবসায়িরা কাঁচা চামড়ার ব্যবসা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। গত বছর কাক্সিক্ষত হারে চামড়া সংগ্রহ না হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শেষ পর্যন্ত কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়নি। যদিও ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার স্বার্থে বাণিজ্যমন্ত্রী গত বছর কোরবানির আগে কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়া হবে বলে আগাম ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু কোরবানি কম হওয়া এবং কাঁচা চামড়া সংগ্রহ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের অনুরোধে কাউকেই কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়া হয়নি। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারও কাঁচা চামড়া সংগ্রহ কমে গেলে দেশের চামড়া শিল্প খাত কাঁচামাল সঙ্কটের ঝুঁকি পড়বে। কারণ কোরবানির সময়ই সারা বছরের অর্ধেক চামড়া সংগ্রহ করা হয়। সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতিমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা করোনা পরিস্থিতি ও চলমান লকডাউনে কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণে তাদের প্রস্তুতির ঘাটতির কথা জানিয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের রফতানি বাণিজ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চামড়া শিল্প খাত। কিন্তু এক দশকের বেশি সময় ধরে কোরবানির চামড়া নিয়ে কারসাজির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এ শিল্প খাত ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখা এখন চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন বাস্তবতায় সরকারি-বেসরকারী খাতের অংশীদারিত্বের (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ, পিপিপি) ভিত্তিতে চামড়া সংরক্ষণে গুদাম নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সবচেয়ে বেশি চামড়া আহরিত হয় এমন সব গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চামড়া সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় গুদাম নির্মাণ করা হবে। ওই লক্ষ্যে চামড়া আহরণের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে সারাদেশে ৩ আকারের গুদাম নির্মাণের কথা জানানো হয়। কোরবানির সময় প্রায় সোয়া কোটি পিস চামড়া আহরিত হয়ে থাকে। তার মধ্যে ৪০-৪৫ লাখ গরুর চামড়া পাওয়া যায়। বাকি চামড়া ছাগল, বকরি ভেড়া ও মহিষসহ অন্যান্য গবাদিপশুর। সারাবছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আরো সোয়া কোটি কাঁচা চামড়া আহরিত হয়। কিন্তু কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে দেশে কোন সংরক্ষণাগার নেই। এবার কাঁচা সংরক্ষণে সরকারের চারটি মডেল গুদাম করার প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে সব কিছু থমকে আছে।
এদিকে করোনা পরিস্থিতি ও চলমান লকডাউনের কারণে পশু খামার মালিকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ছোট-বড় মিলিয়ে দেশে এখন সাড়ে ১২ লাখ খামারে গবাদিপশু লালনপালন করা হচ্ছে। আর ভাল দাম পাওয়া এবং সরকারি নীতিগত সহায়তার কারণে প্রতিবছর প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ হারে গবাদিপশু পালনের খামার বাড়ছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষিত তরুণ বেকাররা এগিয়ে আসছে। চাকরির পেছনে না ছুটে তারা এখন নিজেরাই কিছু করার চেষ্টা করছে আর সফল হওয়ার দৃষ্টান্তও উল্লেখযোগ্য। আগে পাবনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নাটোর এবং সীমাÍ জেলাগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গবাদিপশু পালন করা হলেও এখন সারাদেশে খামার গড়ে উঠেছে। গ্রামাঞ্চলের বাড়িগুলোতে সাধারণ মানুষ ছোট ছোট খামার গড়ে তুলছে। ওসব খামারে গরু, মহিষ ও ছাগল লালন-পালন করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি মো. শাহ ইমরান জানান, গবাদিপশু উৎপাদনে দেশে বিপ্লব ঘটে গেছে। তবে করোনা পরিস্থিতি ও চলমান লকডাউনের কারণে গবাদিপশুর খামার মালিকদের উদ্বেগ বাড়ছে। কাক্সিক্ষত হারে কোরবানি না হলে পশু বেচাকেনা কমে যাবে। আর তখন ভাল দামও পাওয়া যাবে না। খামার মালিকদের বাঁচাতে পশুর ভাল দাম নিশ্চিত করতে হবে। কোরবানিতে যাতে ভাল দাম পাওয়া যায় সেজন্য পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ এবং হাটগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করা এবং খামারিদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা থাকতে হবে। খামার মালিকরা এখন গরু বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও মজুদে ব্যবসায়িদের আগাম নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চামড়া সংরক্ষণ এবং ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। শিগগিরই কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়া হবে। যদিও করোনার কারণে সৃষ্ট জটিলতার কারণে কাক্সিক্ষশত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি ভাল। এমন পরিস্থিতিতেও কোরবানি হবে ওই রকম আশা রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন
গাজা যুদ্ধে ইসরাইলি সেনা নিহত বেড়ে ৮০০
শাকিবের ডাকে হাজির যেসব তারকা
ডেঙ্গুতে একদিনে ৫ মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৩৪ রোগী