নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধের মধে কোরবানির পশু কিনতে ডিজিটাল হাট জমে উঠেছে। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম (মার্কেট প্লেস), ই-কমার্স সাইট, ওয়েবসাইট, ফেসবুকভিত্তিক সাইটগুলোতেও ইতিমধ্যে কোরবানির পশুর বুকিং ও বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। দেশের ক্রেতাদের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও ক্রেতারা অনলাইনে কোরবানির পশুর বুকিং দিতে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে অনলাইনে ২০০ কোটিরও বেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে। অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো ঈদের এক বা দু’দিন আগে ক্রেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে কোরবানির পশু পৌঁছে দেবে। শুধু কোরবানির পশু বিক্রিই নয়, বুকিং করে দিলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) পশু জবাই দিয়ে বাসায় মাংস পৌঁছে দেয়ার কথা জানিয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং ই-ক্যাব সংশ্লিষ্ট সূতে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার কোরবানির পশু কেনাবেচায় ডিজিটাল পদ্ধতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। গত বছর এ পদ্ধতিতে ভাল সাড়া মিলেছিল। এ বছরও গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি পশু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। যদিও বিগত বছর পশু বিক্রি নিয়ে কিছু প্রতারণার অভিযোগ ছিল। ওই অভিযোগের সংখ্যা সামান্য হলেও এ বছর যাতে তেমন ধরনের কোন ঘটনা না ঘটে সেজন্য পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টের সঙ্গে পশুর ছবি আপলোড করার জন্য বলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে ডিজিটাল হাটে ব্যাপক নজরদারি থাকবে, যাতে কেউ কোন প্রতারণার চেষ্টা করতে না পারে। আর প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, কোরবানির চাহিদা মেটাতে দেশে গবাদিপশুর পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। গত বছর হৃষ্টপুষ্টকরণের আওতায় কোরবানির জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনসহ সারাদেশে গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি। এ বছর ওই কার্যক্রমের আওতায় মাঠ পর্যায়ের তথ্যানুযায়ী, ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার গরু-মহিষ, ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং অন্য ৪ হাজার ৭৬৫টি পশুসহ মোট এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে। চলতি বছর হৃষ্টপুষ্টকৃত গরু-মহিষের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০টি, হৃষ্টপুষ্টকৃত ছাগল-ভেড়া ২৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৮ এবং গৃহপালিত গরু-মহিষের সংখ্যা ৬৮ লাখ ৮৮ হাজার ২০০ ও গৃহপালিত ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৪৯ লাখ ৯২ হাজার ২৫২টি। গত সপ্তাহ পর্যন্ত সারাদেশে ১ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি পশু বিক্রির জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর অনলাইনে পশু বিক্রির সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর কোরবানি উপলক্ষে সারাদেশে অনলাইন-অফলাইনে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার গবাদিপশু বিক্রি হয়েছিল।
সূত্র আরো জানায়, অনেক খামারি এবার আগেই তাদের পশু অনলাইনে বিক্রি করতে শুরু করেছে। তবে তার বাইরেও অনেক খামারি আছে যারা তাদের পশু অনলাইনে বিক্রি করছে। ডিজিটাল হাট উদ্বোধনের পর ওই হাটে এখন পর্যন্ত আড়াই লাখেরও বেশি ভিজিটর দেখা গেছে। সম্প্রতি জুম প্ল্যাটফর্মে ‘ডিএনসিসি ডিজিটাল গরু হাট ২০২১’-এর উদ্বোধন হয়। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার মানুষ ওই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে গরু কিনতে পারবে। তাছাড়া রয়েছে পশু বিক্রি সংক্রান্ত বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যারা সারাদেশে সার্ভিস দিচ্ছে। অনলাইনে কেনা কোরবানির পশুতে কোন ত্রুটি পেলে ফোনে বা ই- মেলে ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন (ই-ক্যাব) কাছে অভিযোগ করা যাবে। অভিযোগ গ্রহণের ৩ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগের সুরাহা করবে ই-ক্যাব। অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রেখে ২০২১ সালের ঈদ-উল-আজহায় অনলাইনে পশু বিক্রির ব্যবস্থা রেখে অনলাইনে পশু বিক্রয়ের নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে।
এদিকে অনলাইন পশুর হাট বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, গতবার অনলাইনে তিন সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২৭ হাজার গরু। এবারের টার্গেট কমপক্ষে ১ লাখ গরু যেন অনলাইনে বিক্রি করা যায়। এক লাখ লোকের কাছে যদি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গরু বিক্রি করা যায় তাহলে কমপক্ষে ৫ লাখ লোক গরুর হাটে যাবে না। যা করোনা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করবে। তবে ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট নিয়ে সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল জানান, ডিজিটাল গরুর হাট সবার জন্যই উন্মুক্ত একটা প্ল্যাটফর্ম। ডেইরি ফারমার্স এ্যাসোসিয়েশনের অধীনে দেশব্যাপী অনেক উদ্যোক্তা রয়েছে, প্রান্তিক খামারিকে তাতে যুক্ত করা হয়েছে। ই-কমার্স সাইটগুলোও অনেক খামারির সঙ্গে যুক্ত আছে। তাদের এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যুক্ত করার চেষ্টা করা চেষ্টা হচ্ছে। তাছাড়া সময় মতো পশু ডেলিভারির বিষয়ে ই-ক্যাবের কঠোর দিকনির্দেশনা রয়েছে।
ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রি নিয়ে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, প্রথম দিনেই অনেক সাড়া পাওয়া গেছে। আরো বেশি মানুষকে এই হাট সম্পর্কে জানানোর জন্য ই-ক্যাব থেকে টিভিসি ও বিলবোর্ড টাঙ্গানো হয়েছে। তাছাড়া রাজধানীতে যতোগুলো অস্থায়ী পশুর হাট বসবে, সেগুলোর প্রতিটির গেটের ব্যানারে ওই হাটের বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। আশা করা যায়, গতবারের চেয়ে এবার ডিজিটাল হাটে ক্রেতার সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে।
আরও পড়ুন
সুপার স্টার গ্রুপের ‘ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট সাপোর্ট পলিসি’
যোগ্য ব্যক্তিকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত করা হবে : রাষ্ট্রপতি
নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা