নিজস্ব প্রতিবেদক:
কর পর্যবেক্ষণে অডিট কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমানো হয়েছে। কর আদায়ের আগে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কর নির্ধারণ করতে হয়। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর নির্ধারণ হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা অডিট বিভাগের ছিল। কর নির্ধারণে কোনো ধরনের সন্দেহ হলে রাজস্ব বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র নিয়ে অডিট বিভাগ যাচাই-বাছাই করতো। কিন্তু আয়কর আইন-২০২৩ এ নতুন এক বিধান অন্তর্ভুক্ত করে অডিট বিভাগের সেই পর্যবেক্ষণের সক্ষমতাকে বাতিল করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে কর নির্ধারণ ও আদায়ে কোনো ধরনের সন্দেহ হলেও নিরীক্ষা বিভাগ রাজস্ব বিভাগের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করতে পারবে না। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে আয়কর আইনটি পাশ হয়েছে এবং ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। অডিট বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কর পর্যবেক্ষণে নিরীক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা খর্ব হওয়ায় করসংক্রান্ত রাজস্ব আদায়ে কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে রাজস্ব আদায়ের ওপর। আইনটি কার্যকরের পর থেকে অডিট কর্মকর্তাদের কর অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ে কোনো নথি যাচাই-বাছাই করতে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ ওসব নথি যাচাই-বাছাই করা গেলে প্রকৃত অ্যাসেসমেন্ট হয়েছে কিনা তা নিরূপণপ করা যেত। অনেক সময় আপত্তি দেয়ার কারণে প্রকৃত রাজস্ব আহরণ কেস টু কেস ভিত্তিতে আদায় বেড়েছে। এখন তা বন্ধ হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা বাড়ছে।
সূত্র জানায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স-১৯৮৪’ আইনের ১৬৩ ধারায় (এফ ও জি) বলা আছে কর নির্ধারণ সংক্রান্ত সব নথিপত্র নিরীক্ষা করার ক্ষমতা অডিট ডিপার্টমেন্টের। কিন্তু নতুন আয়কর আইনে এ ক্ষমতা খর্ব করা হয়। আয়কর আইনে ১৯৬ ধারার (১) উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ‘দেশে বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা কোনো কর নির্ধারণ পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করিতে পারবে না।’ অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসহ সার্বিকভাবে রাজস্ব বিভাগ যেভাবে কর নির্ধারণ করবে এ নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না। তবে ওই আইনের ধারা ৪-এ উল্লিখিত আয়কর কর্তৃপক্ষ এবং কর আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট প্রশ্ন তুলতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, মুখ্য কর কমিশনার, মহাপরিচালক (পরিদর্শক), কর কমিশনার (আপিল), কর কমিশনার (বৃহৎ করদাতা ইউনিট), মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ), মহাপরিচালক (কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল), অতিরিক্ত কর কমিশনার (আপিল, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল, প্রশিক্ষণ ও পরিদর্শন), যুগ্ম কর কমিশনার (আপিল, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল, প্রশিক্ষণ ও পরিদর্শন), উপকমিশনার, সহকারী কর কমিশনার, অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার ও কর পরিদর্শককে বোঝানো হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, অডিট বিভাগের আপত্তির কারণে রাজস্ব বিভাগ যেখানে কর নির্ধারণ করেছে ৬শ’ কোটি টাকা, অডিট আপত্তিতে সে কর ৩ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। বিদ্যমান আইনে এখন কর নির্ধারণ পদ্ধতি যাচাই-বাছাই করা যাবে না। এতে অডিট বিভাগ বুঝতে পারবে না প্রকৃত অর্থে একটি ঘটনায় কর নির্ধারণের অঙ্ক সঠিক পদ্ধতিতে হয়েছে কিনা। বিধান না মেনে কর নির্ধারণ নিয়ে কেউ আপত্তি জানালে সেটি বাতিল বলে গণ্য হবে।
অর্থাৎ বিদ্যমান আইনের বাইরে কেউ কর নির্ধারণের স্বচ্ছতা, পদ্ধতি ও কর নির্ধারণের অঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। এ বিষযে অতিরিক্ত উপ-মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সংসদ) মো. আহসান হাবীব জানান, বাংলাদেশ সংবিধানের ১২৮(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে অডিট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের সব সরকারি দপ্তরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত। সে অনুযায়ী রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন আয়কর দপ্তরগুলোর কর আদায় ও নির্ধারণসংক্রান্ত কাগজপত্র নিরীক্ষা করার অধিকার রাখে অডিট ডিপার্টমেন্ট। কিন্তু নতুন আয়কর আইন পাশ হওয়ার পর মাঠপর্যায়ে অডিট কর্মকর্তাদের নথিপত্র দিয়ে আগের মতো সহায়তা করছে না আয়কর অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন
এলো ফার্স্টলুক, কবে মুক্তি পাবে রানির নতুন সিনেমা
গরমে কিশমিশ ভেজানো পানি পান করা কেন জরুরি?
কর্মস্থলে ‘তুই-তুমি’ সম্বোধন বন্ধের সুপারিশ কমিশনের