শিক্ষকদের হাত দিয়েই দক্ষ, দেশপ্রেমিক ও রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা সম্পন্ন নেতৃত্ব গড়ে ওঠে বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেছেন, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদেরকে নৈতিক শিক্ষায় বলিয়ান করবেন এটাই জাতির প্রত্যাশা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি কল্যাণধর্মী ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে শিক্ষক সমাজের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আগামীতে জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবী দাওয়া পূরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করবে ইনশাআল্লাহ। রোববার (৩ জুলাই) বিকেলে নগরীর আল ফারুক সোসাইটি মিলনায়তনে আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন খুলনা মহানগরীর উদ্যোগে শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
ফেডারেশনের মহানগরী সভাপতি অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলামের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর শূরা সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম।
অন্যান্যদের মধ্যে মাওলানা শাহারুল ইসলাম, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, মাওলানা জাফর সাদিক ও ডি এম নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুস সালাম, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মহানগরী আমীর আরও বলেন, দেশ, জাতি এবং সমাজ পরিবর্তনে একটি বড় ভূমিকা পালন করেন শিক্ষক সমাজ। তারা মানুষকে উৎসাহ দেয়ার মাধ্যমে, দ্বীন ও ইসলামের পরিপূর্ণ শিক্ষা দিয়ে রাষ্ট্র এবং সমাজের পরিবর্তন করতে পারেন। এ কারণে শিক্ষকদের সবাই সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখে। তিনি আরো বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে নতুন করে যেভাবে দেশ স্বাধীন করেছে সেখানে শিক্ষকদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। নতুন সমাজ গঠনে তাদেরকে আবারো অগ্রণী ভূমিকায় থাকতে হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষকদের সঠিক শিক্ষা ও দিক নির্দেশনায় শিক্ষার্থী এবং যুব সমাজ সঠিক পথে এগিয়ে যাবে। তাই শিক্ষকদের দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামের সঠিক জ্ঞান ছাত্রদের জানাতে হবে, যেন আগামীতে তারা শিক্ষা ও সহবতে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে ওঠে।
মহানগরী আমীর আরও বলেন, শিক্ষকের ওপরই নির্ভর করে একটি জাতির সুষ্ঠু গঠন, সুন্দর বিকাশ ও উন্নতি-অবনতির পারদ। শিক্ষকের হাতে গড়া ছোট্ট শিশুটিই একদিন পরিণত হয় নামকরা অফিসার, খ্যাতিমান ডাক্তার, প্রকৌশলী, অকুতোভয় সেনানায়ক, চৌকস সমরনায়ক এবং বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়কে। তিনি বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, মাছের যেমন পতন শুরু হয় মাথা থেকে, ঠিক তেমনি জাতির অধঃপতন শুরু হয় জাতির নেতারা তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মাধ্যমে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে প্রবেশ করেছে যে উল্কার গতিতে তা পুরো জাতিকে ধ্বংসের দিকে তাড়িত করছে।
রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে মানহীন শিক্ষকের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরূপ শিক্ষকের হাতে অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সহকর্মী কেউই নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো অনেক শিক্ষকেরই নেই পর্যাপ্ত যোগ্যতা, উচ্চশিক্ষা, ব্যক্তিত্ব, গাম্ভীর্য ও স্বীকৃতি। কিছু শিক্ষকের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের শিকার হয়েই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বইবিমুখ হচ্ছে। পড়ার টেবিলের পরিবর্তে ক্লাব এবং পানশালায় ফুর্তি করছে। বিদ্যালয় ফাঁকি দিয়ে রাস্তাঘাট ও পার্কে আড্ডা দিচ্ছে। হিরোইজম দেখাতে কিশোর গ্যাংয়ে নাম লেখাচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষকদের প্রতি অবহেলা, নির্যাতন, লাঞ্ছনা, বঞ্চনার ফল এরই মধ্যে জাতি পেতে শুরু করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন মনুষ্যত্বের পরিবর্তে পশুত্বের চর্চা বেড়েছে। ফলে সনদধারীর সংখ্যা বাড়লেও আলোকিত মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। ইভটিজিং, বুলিং, র্যাগিং, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, শিক্ষার্থী নির্যাতন ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাসুম বিল্লাহ ইমরান
খুলনা ব্যুরো
আরও পড়ুন
কুড়িগ্রামে টিসিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত
সাপাহারে আবারো এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার
রংপুর জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আগামী ১২ই অক্টোবর রোববার থেকে সাড়ে ৮ লাখ শিশু-কিশোরকে টাইফয়েড টীকা দেয়া হবে