November 3, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, October 31st, 2025, 6:02 pm

কালীগঞ্জে মাচায় লাউ চাষে সাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামীণ কৃষকরা

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন লাউ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কৃষকরা। অনুকুল আবহাওয়া, উন্নত জাতের বীজ ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে বাড়ছে লাউ চাষের পরিধি। কম সময়ে ফলন বেশী, মুজুরি খরচ কম ও বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাউ চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। এতে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। লাউ চাষ কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। বাণিজ্যিকভাবে মাচায় লাউ চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

সরেজমিনে উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বিরতুল গ্রামে দেখা যায়, উফসী জাতের বারি-১,২,৩,৪ এবং উন্নত হাউব্রীড জাতের ‘ময়না’ চাষ হচ্ছে ব্যাপক পরিমাণে।

স্থানীয় কৃষক মো. জয়নাল মিয়া জানান, দুই বিঘা জমিতে লাউ চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা, কিন্তু ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন ৫০ হাজার টাকারও বেশি লাউ। তিনি আরোও বলেন, কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফলন পাওয়া যায়। অন্য ফসলের তুলনায় লাউ চাষে ঝুঁকি কম, লাভও বেশি।

আরেক কৃষক রনি সরকার জানান, লাউ গরম ও আদ্র আবহাওয়ায় ভাল জন্মে। ফেব্রæয়ারী থেকে এপ্রিল এবং জুন থেকে আগষ্ট পর্যন্ত লাউ চাষের উপযুক্ত সময়। লাউ চাষে পানি সরবরাহ থাকা অত্যন্ত জরুরী। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতিটি লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রায় ২১৫ হেক্টর জমিতে এবার লাউ চাষ করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রতি বিঘায় গড়ে ১০ টন বা প্রতি হেক্টরে ৫০ টন ফলন পাওয়া সম্ভব। তবে উন্নত পদ্ধতি ও সঠিক জাত নির্বাচন করতে পারলে ফলন আরোও বাড়তে পারে। বারি লাউ-৪ ও ময়না জাত হচ্ছে উন্নত ফলনশীল জাত।

স্থানীয় একাধিক কৃষকরা জানায়, উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বিরতুল গ্রামে গড়ে উঠেছে ফসলের প্যাকেজিং হাউজ। যার মাধ্যমে দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশে সবজি রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সরকারী ভাবে সহায়তা পেলে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হতো এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা উম্মুচিত হতো।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির উদ্দিন মোল্লা বলেন, অত্র অঞ্চলের মাটি লাউ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। দো-আঁশ ও বেলে দোআঁশ ঝুরঝুরে মাটিতে লাউ ভাল জন্মায়। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দেয়ায় ফলন ও আগ্রহ দুটোই বেড়েছে। রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে লাউ চাষ করে কৃষকরা বছরে কয়েক গুণ বেশী লাভ করতে পারছে।

গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান মুঠোফোনে বলেন, মাচায় লাউ চাষ একটি লাভজনক কৃষি পদ্ধতি। সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচর্যা থাকলে ভালো ফলন হয়। উন্নত জাত ও সঠিক সময়ে চারা রোপণ করতে পারলে এবং পরিচর্যায় পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। জৈবিক পদ্ধতিতে বালাই দমন করে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে খরচও কম হয়। সবজি ও শাক হিসেবে লাউ এর চাহিদা রয়েছে। গাজীপুরে ৪ হাজার ২০০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সবজীর বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।