December 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, December 12th, 2022, 8:08 pm

কাল সেমিফাইনালে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া

অনলাইন ডেস্ক :

দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে এখন পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপে টিকে রয়েছে আর্জেন্টিনা। আগামীকাল মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে সেই আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে গতবারের রানার্স-আপ ক্রোয়েশিয়া। ইউরোপিয়ান দেশটির একটিই লক্ষ্য টানা দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপে ফাইনালে জায়গা করে নেয়া। দুটি দলই দারুন চাপ সামলে কোয়ার্টার ফাইনালে গন্ডি পার করেছে। জ্লাটকো ডালিচের ক্রোয়েশিয়া স্পট কিকে ব্রাজিলকে ও লা আলবিসেলেস্তারা ১২ গজ থেকে অর্থৎ পেনাল্টি শুটে নেদারল্যান্ডকে পরাস্ত করে সেমিফাইনালের টিকিট পায়। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে বিশৃঙ্খল মেজাজের ম্যাচ হিসেবে যদি একটি ম্যাচকে বেছে নিতে বলা হয় তবে তা নি:সন্দেহে আর্জেন্টিনার বনাম নেদারল্যান্ডের মধ্যকার কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটিই হবে। নাহুয়েল মোলিনা ও সাতবারের ব্যালন ডি’অর লিওনেল মেসির গোলে আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে পথে এক পা দিয়েই রেখেছিল। কিন্তু ১০০ মিনিটে ওট ওয়েগহর্স্টের গোলে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ২-২ গোলে শেষ হয়। অতিরিক্ত সময়ে আর কোন গোল না হওয়ায় পেনাল্টি শুট আউটে ম্যাচে ভাগ্য নির্ধারিত হয়। আরো একবার দুই দলের সামনে ভাগ্য নির্ধারনের জন্য পেনাল্টির প্রয়োজন হয়। পুরো ম্যাচে ১৭টি হলুদ কার্ডে ইতোমধ্যেই স্প্যানিশ রেফারি এন্টোনিও মাতেও লাহোজকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা শুরু হয়েছে। তারপরও পেনাল্টিতে আর্জেন্টিনা তাদের মানসিকতায় দৃঢ় থেকে জয় ছিনিয়ে নেয়। বিশ্বকাপে সম্ভবত সবচেয়ে আর্কষণীয় ম্যাচ হতে পারতো অল-সাউথ আমেরিকান সেমিফাইনালে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বৈরথ। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া তা হতে দেয়নি, নেদারল্যান্ডের কাছেও আর্জেন্টিনা কোনমত বেঁচে গেছে। কিন্তু সেমিফাইনালের রেকর্ড বলে দিচ্ছে এবারও হয়তো আর্জেন্টিনার ক্রোয়েশিয়ার বাঁধা টপকে ফাইনাল নিশ্চিত করবে। এ পর্যন্ত শেষ চারে বিশ্বকাপ থেকে কখনই বিদায় নেয়নি আর্জেন্টিনা। এর আগে পঞ্চমবার তারা শেষ চারের বাঁধা পেরিয়ে ফাইনালে খেলেছে, যার মধ্যে দু’বার সফল হয়ে শিরোপা হাতে নিয়েছে। অতি সম্প্রতি ২০১৪ সালের ফাইনালে জার্মানীর কাছে পরাজিত হয়ে তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। আর্জেন্টাইনরা আগে সব আসরেই শেষ চারে অন্তত দুটি করে গোল দিয়েছে। সব মিলিয়ে এই গোলের সংখ্যা ১৪টি। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি যে অন্য ধরনের এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনে আসছে তা মেসি ও তার দল ভালই উপলব্ধি করতে পারছে। ক্রোয়েশিয়ার জেদী রক্ষনভাগকে কোনভাবেই ফাঁকি দিতে পারেনি ব্রাজিলের আক্রমনভাগ। একইসাথে গোলরক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচকেও পরাস্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় ঘরের পথে পা রাখতে হয়েছে টুর্ণামেন্টের অন্যতম ফেবারিটদের। ডায়নামো জাগ্রেবের নাম্বার ওয়ান গোলরক্ষক বিবিশ্বকাপ শেষে ফিরে যাবার পর শীর্ষ কোন ক্লাব নিশ্চিতভাবেই তাকে দলে নিতে আগ্রহী হবে। ১০৬ মিনিটে নেইমার যখন শেষ পর্যন্ত কোয়ার্টার ফাইনালে দুর্দান্ত গোলে ডেডলক ভেঙ্গেছিল তখনো মনে হয়নি এটাই ব্রাজিলের এবারের আসরের শেষ ম্যাচ। ব্রুনো পেটকোভিচ ১১৭ মিনিটে গোল শোধ করে পুরো স্টেডিয়ামকেই কার্যত স্তব্ধ করে দেয়। এরপর ১২ গজের চাপ আর নিতে পারেনি সেলেসাওরা। রডরিগোর শট রুখে দিয়ে শুরুতেই লিভাকোভিচ ব্রাজিলের স্বপ্ন ভঙ্গ করে। এরপর মারকুইনহোসের শট পোস্টে লেগে ফেরত এলে আর কিছুই করার ছিলনা। নেইমার তার শেষ শটটিও নিতে পারেননি। তার আগেই টুর্ণামেন্ট ফেবারিটটদের বিদায় নিশ্চিত হয়। একইসাথে টানা দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের টিকিট পায় ক্রোয়েশিয়া। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে নক আউট পর্বে নির্ধারিত সময়ে কোন ম্যাচেই জিততে পারেনি। শেষ ষোল ও কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের পেনাল্টির মাধ্যমে ভাগ্যের সহায়তা নিয়েই পরের ম্যাচে যেতে হয়েছে। এরপর সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের সাথে অতিরিক্ত সময়ের গোলে জয়ী হয়ে ফাইনালে গিয়েছিল ডালিচের দল। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি এবারের আসরে হয়ে গেছে। এখন সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচের আগে ক্রোয়েশিয়া ১১ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। আর সেমিফাইনালে জিততে পারলে ক্রোয়েশিয়া পৌঁছে যাবে শীর্ষ তিন দলের সাথে একই কাতারে। এর আগে পরপর দুটি ফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন ইতালি, নেদারল্যান্ড ও জার্মানী। আরো একটি পরিসংখ্যান থেকে ডালিচের দল আত্মবিশ্বাস নিতেই পারে। বিশ্বকাপের ১০টি নক আউট ম্যাচে এ পর্যন্ত কোনটিতেই তারা গোল করতে ব্যর্থ হয়নি। এর আগে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে দুইবার আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি হয়েছে। ১৯৯৮ সালে লা আলবিসেলেস্তারা ১-০ গোলে জয়ী হয়েছিল। চার বছর আগে ক্রোয়েটরা ৩-০ গোলে ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে নেয়। দুর্দান্ত ঐ জয়ী দলটির বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ই মঙ্গলবার লুসাইলে খেলতে যাচ্ছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে হলুদ কার্ড পাওয়ায় টানা দুই কার্ডে আর্জেন্টাইন দুই ফুল-ব্যাক গঞ্জালো মনটিয়েল ও মার্কোস এ্যাকুনা মঙ্গলবার খেলতে পারছেন না, যা লিওনেল স্কালোনিকে দু:শ্চিন্তায় ফেলেছে। রাইট-ব্যাক পজিশনে মনটিয়েলের জায়গা নাহুয়েল মোলিনা ও এ্যাকুনার পজিশনে নিকোলাস টাগলিয়াফিকোর খেলার সম্ভাবনাই বেশী। তবে একটি জায়গা স্কালোনি স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে ১২০ মিনিটের ম্যাচে নতুন করে কোন খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়েননি। গোঁড়ালির ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন আলেহান্দ্রো গোমেজ। রডরিগো ডি পল ও এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া সেমিফাইনালের আগে পরিপূর্ণ ফিটনেস ফিরে পাবার আশা করছেন। নেদার‌্যলান্ডের সাথে স্কালোনি রক্ষনভাগে পাঁচজনকে রেখেছিলেন। কিন্তু ডি মারিয়া সুস্থ হয়ে দলে ফিরলে চারজন ডিফেন্ডার নিয়েই মাঠে নামবেন স্কালোনি। কোয়ার্টার ফাইনালের পর ক্রোয়েশিয়াও পরিপূর্ন ফিট দল হাতে পাচ্ছে। অসুস্থতা কাটিয়ে বোর্না সোসা ও মিসলাভ ওরসিচ দলে ফিরছেন। গোল করার ক্ষেত্রে খুব একটা স্বস্তিতে না থাকা দলে ডালিচ ব্রাজিলের সাথে প্রথম থেকেই খেলিয়েছিলেন মারিও পাসালিচকে। মঙ্গলবারও রাইট উইংয়ে তিনি তার পজিশন ধরে রাখবেন বলেই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। পেটকোভিচের নাটকীয় গোলের পর আন্দ্রেজ ক্রামারিজের মূল দলে ফেরাটা একটু কঠিন।