অনলাইন ডেস্ক :
২০১৯ সালে ভারতের কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করেছিল বর্তমান বিজেপি সরকার। অর্থাৎ, কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার বাতিল করা হয়েছিল। সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের সেই কাজকে বৈধ বলে রায় দিলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ এ রায় দেন। তবে অঞ্চলটিকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে বহু ব্যক্তি ও সংগঠন আদালতের দ্বারস্থ হয়। সেই সব মামলা একত্র করে এত দিন সুপ্রিম কোর্টে তার বিচার চলছিল।
গত ২ জুলাই থেকে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে মামলাটির ধারবাাহিক শুনানি চলছিল। গত ৫ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে রায় দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রায় ঘোষণা স্থগিত রাখেন বিশেষ সাংবিধানিক বেঞ্চ। জানানো হয়, সোমবার (১১ ডিসেম্বর) রায় ঘোষণা করা হবে। সেই মতো সোমবার রায় ঘোষণা করা হলো। পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এদিন জানিয়ে দেন, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা সাংবিধানিক এবং বৈধ। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, কাশ্মীর যে সময় ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, সে সময়েই তা ভারতের সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়। এই অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনেই কাশ্মীরের জন্য বিশেষ সাংবিধানিক সভা তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে যা উঠে যায়।
ফলে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা স্থায়ী ছিল না, অস্থায়ী বা সাময়িক ছিল। প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, ৭০ বছর পর আচমকা কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল হয়েছে—এমন ভাবার কারণ নেই। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়া চলেছে। শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া এবং কাজ বৈধ। এদিকে রায় ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। মোদী বলেছেন, ‘জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের মানুষকে জানাতে চাই, তাদের স্বপ্ন সফল করার দায়িত্ব আমাদের। সে কাজ আমরা চালিয়ে যাব।’ তবে ২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সময় কেন্দ্রীয় সরকার একই সঙ্গে জানিয়েছিল, রাজ্যটিকে ভেঙে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হচ্ছে।
লাদাখকে কাশ্মীর থেকে পৃথক করা হয়েছিল। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট এদিন জানিয়েছেন, কাশ্মীরকে পৃথক রাজ্যের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেখানে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। তবে লাদাখ পৃথক কেন্দ্রশাসিত রাজ্যই থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণার পর বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা জানিয়েছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। এ এক ঐতিহাসিক রায়।’ কাশ্মীরের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ‘রায় নিয়ে এখনো পর্যন্ত কাশ্মীরে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। মানুষ নির্লিপ্ত।’ কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, কাশ্মীরে যাতে শান্তি বিঘ্নিত না হয়, সে দিকে নজর রাখবে তার দল।
রায় ঘোষণার আগেই কাশ্মীরে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, পুলিশ একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। সেখানে আরো অনেক কিছুর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা নিয়েও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সাম্প্রদায়িকতা কিংবা সন্ত্রাসবাদে মদত জোগাতে পারে—এমন কোনো পোস্ট করা যাবে না। বিজেপিবিরোধী কাশ্মীরের প্রায় প্রতিটি দলই চেয়েছিল, উপত্যকায় আবার ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনা হোক। বিষয়টি নিয়ে আদালতে যুক্তি দিয়েছেন সাবেক কংগ্রেস নেতা কপিল সিবল। বিজেপি অবশ্য কোনোভাবেই ৩৭০ ধারার পক্ষপাতী নয়। বস্তুত, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পরই পার্লামেন্টে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির ঘোষণা করেন। যা নিয়ে দেশে-বিদেশে তীব্র বিতর্ক হয়েছিল। পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরকে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেও পরিণত করা হয়। তা নিয়েও বিপুল সমালোচনা হয়েছিল।
আরও পড়ুন
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে ৩৮ জনের মৃত্যু, আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় শোক পালন
বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষ বাড়ছে, কমছে ধনী দেশের সাহায্য
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চলছেই, একদিনে নিহত ৫৮