কিশোরগঞ্জে একটি আলাদা রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনামলে বিভিন্ন পদে থেকে করেছেন হাওড় এলাকার প্রতিনিধিত্ব।
একাধারে সংসদ সদস্য, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং সর্বশেষ দুই বারের রাষ্ট্রপতি তিনি। আর তার প্রভাবে কিশোরগঞ্জ শাসন করতো তার ছেলে, ভাই, বোন, ভাতিজা ও স্বজনরা।
দীর্ঘদিন ক্ষমতার বলয়ে থাকায় আব্দুল হামিদের ছেলে রেজোয়ান আহমেদ তৌফিক হন এমপি, ভাই আব্দুল হক নুরু স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বোন আছিয়া আলম উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাতিজা শরীফ কামাল হন সদর ইউপি চেয়ারম্যান। পরিবারের প্রায় সবাইকে নানা পদপদবি দিয়ে প্রভাব বলয় গড়ে তোলেন।
ভাতিজা শরীফ কামাল এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে ইউপি চেয়ারম্যান হয়েও পুরো উপজেলা নিয়ন্ত্রণ করতেন। জমি দখল, জলমহলের নিয়ন্ত্রণ, সরকারি কাজকর্ম থেকে কমিশন, নিয়োগ ও তদবির বাণিজ্য সবই ছিল তার দখলে।
ক্ষমতায় থাকতে কেউ মুখ না খুললেও আব্দুল হামিদ এবং তার স্বজনদের অনিয়ম, দুর্নীতি, জুলুম নির্যাতনের কথা এখন মানুষের মুখে মুখে।
মিঠামইন বাজারে ছোট মাছের দোকান রাখাল সাহার। অবসরে গান বাজনাও করেন। শিল্পী হিসেবেও তার আলাদা পরিচিতি। একবার সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ভাই আব্দুল হকের কলেজের অনুষ্ঠানে সময় মতো যেতে না পারায় তাদের লোকজন তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে প্রায় পঙ্গু করে দেয়। শুধু রাখাল সাহা নন, তুচ্ছ কারণে প্রভাবশালী এই পরিবারের নির্যাতনের শিকার হয়েছে এলাকার অনেকে। যারা এখনো ভয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চান না।
এ প্রসঙ্গে রাখাল সাহা বলেন, ‘আমাকে ডেকে কলেজের ভিতরে নিয়া মারপিট কইরা জীবন পঙ্গু কইরা দিছে। লাস্টে তার কাছে বিচার চাইতে গিয়া উনি আরো ৬০ হাজার টাকা আমরার কাছ থেকে জরিমানা নিছে।’
ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামে একক রাজত্ব করেছেন আব্দুল হামিদের ছেলে রেজোয়ান আহমেদ তৌফিক। অসংখ্য ভূয়া মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হয়েছে। মিঠামইন বাজারে উপজেলা বিএনপির সভাপতির ভবনের প্রায় অর্ধেক দখল করে ‘জয় বাংলা’ মার্কেট নির্মাণ করা হয়।
এ বিষয়ে জায়েদুল আলম জাহাঙ্গীর জানান, ‘আব্দুল হামিদের লোকজন আমার বিল্ডিংয়ের অংশ কাইটা দিয়া একদিকে বিল্ডিং করছে।’
হাওর উপজেলা মিঠামইন সদরের কামালপুরে আব্দুল হামিদের বাড়ি। নিজের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ফাউন্ডেশন, ভাইয়ের নামে কলেজ, বাবা ও মায়ের নামে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
৫ আগস্টের পর কিশোরগঞ্জ সদরের খরমপট্টি এলাকায় আব্দুল হামিদের একটি বাড়ি এবং মিঠামইনে শরীফ কামালের একটি রিসোর্টে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা।
হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও তার স্বজনদের বাড়িঘর, বহুতল ভবনে এখন সুনসান নীরবতা। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে তালাবদ্ধ এসব অট্টালিকা। দেখাশোনা করেন একজন কেয়ারটেকার।
তথ্যসূত্র: একুশে টেলিভিশন
এনএনবাংলা/
আরও পড়ুন
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া সেনাসদস্যদের দ্রুত গ্রেপ্তার চান নাহিদ
শহিদুল আলমকে তুরস্কের সহায়তায় মুক্তির চেষ্টা করছে সরকার
সাইবার হামলার আশঙ্কায় দেশের সব বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি