November 27, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, November 27th, 2025, 6:43 pm

কুমিল্লায় ৪ ডাকাত গ্রেফতার। দেশীয় অস্রসহ ২ পিকআপ উদ্ধার

কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লায় ৪ ডাকাত গ্রেফতার। দেশীয় অস্রসহ ২ পিকআপ উদ্ধার পুলিশ।পুলিশ সুপার অফিস সূত্রে জানা গেছে,

কুমিল্লা জেলা ডিবি পুলিশ, চান্দিনা থানা, সদর দক্ষিণ থানা, লালমাই থানা এবং লাকসাম থানা পুলিশের সমন্বিত টিম কর্তৃক দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ১১ মামলার আসামী নয়নসহ তাহার সহযোগী ৪ জন ডাকাত গ্রেফতার এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রসহ ২টি পিকআপ উদ্ধার।

সম্প্রতি কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন প্রান্তিক জায়গায় প্রায় ডাকাতির ঘটনা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় জেলার সকল থানায় টহল ডিউটি ও অতিরিক্ত চেকপোস্ট স্থাপনের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়।

গত ২৫ নভেম্বর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানা এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র একত্রিত হয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জেলা পুলিশ সুপারের সার্বিক তত্ত্বাবাবধানে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এর নেতৃত্বে অপারেশনাল টিম ঐ ডাকাত চক্রের গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। তথ্য প্রযুক্তি ও সোর্সের সহায়তায় নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ২টি পিকআপে করে প্রায় ১৫/১৬ জনের ডাকাত দল চান্দিনা থানাধীন এলাকার বরকরই নাথের বাড়ী গ্রামে ডাকাতি সংঘটনের জন্য অবস্থান করতেছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় সময় চান্দিনা থানাধীন চান্দিনা থানাধীন এলাকার বরকরই নাথের বাড়ী গ্রামের দোল্লাই নবাবপুর টু রহিমানগর রম্ভার জনৈক দেলোয়ার হোসেন এর ভাই ভাই মোটরসাইকেল শো-রুমের সামনে পৌছাইলে পুলিশের উপস্থিতি টের পাইয়া পালানোর চেষ্টাকালে নীল রংয়ের পিকআপের উপরে বসা ৪/৫ জন ডাকাত পিকআপ থেকে নেমে দৌঁড়ে পালিয়ে গেলেও পিকআপের ভিতরে থাকা ডাকাত দলের ৩ জন সদস্য এবং পিছনের বসা ৫/৬ জনের মধ্যে ১ জন অফিসার ইনচার্জ, চান্দিনা থানার নেতৃত্বে গ্রেফতার করে। অপর ১টি টিম হলুদ রংয়ের পিকআপটি ঘটনাস্থল হইতে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে, উক্ত হলুদ রংয়ের পিকআপে থাকা ডাকাতদেরকে আটকের লক্ষ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস), কুমিল্লা এর নেতৃত্বে অপর ১টি টিম হলুদ রংয়ের পিকআপটিকে ধাওয়া করে। ডিবি পুলিশের ২টি টিম পিকআপটিকে লাকসাম রেল ক্রসিং এর সামনে একবার আটক করার চেষ্টাকালে ডাকাত নয়নের উক্ত পিকআপটি উল্টা ঘুরিয়ে পালিয়ে যায়। এই সময় ডাকাত নয়ন উক্ত পিকআপ দিয়ে ডিবি টিমের দুই জন সদস্যকে পিকআপটি দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ডিবি টিমের ২ জন সদস্য লাফ দিয়ে পিকআপ এর সামনে থেকে সরে যেতে পারলেও আঘাত প্রাপ্ত হয়। এই সময় ডাকাত নয়ন ও তার সহযোগী উক্ত পিকআপটি নিয়ে সদর দক্ষিণ থানা এলাকার ভিতরে প্রবেশ করে। ডিবি উক্ত ২টি টিম ডাকাত নয়নকে ধাওয়া করতে থাকে। পরবর্তীতে, জেলা পুলিশ কন্ট্রোল রুম সমন্বয় করে অফিসার ইনচার্জ, লাকসাম থানা ও লালমাই থানা এবং লাকসাম, লালমাই ও সদর দক্ষিণ মডেল থানার ডিউটিরত সকল মোবাইল পেট্রোল লাকসাম, লালমাই এবং সদর দক্ষিণ মডেল থানা এলাকা ঘিরে রাখে। প্রায় দেড় ঘন্টা সময় উক্ত পিকআপটিকে ডিবি পুলিশের ২টি টিম লাকসাম, লালমাই এবং সদর দক্ষিণ মডেল থানা এলাকার ফিডার রুটে আটক করার জন্য দুঃসাহসিকভাবে ধাওয়া করতে থাকে। পথিমধ্যে, ডাকাত নয়ন এর সাথে পিকআপ এর উপরে থাকা ৪/৫ জন ডাকাত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ডাকাত নয়ন ও তার সহযোগী পিকআপটি চালিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। পরবর্তীতে, ডাকাত নয়ন ও তার সহযোগী উক্ত পিকআপটি নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের উল্টা পাশে গাড়ি চালিয়ে সদর দক্ষিণ থানাধীন ফিরিঙ্গির হাট এলাকায় প্রবেশ করে। এই সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এবং ডিবি পুলিশের ২টি টিম ডাকাত নয়ন ও তার সহযোগীসহ উক্ত পিকআপটিকে ধাওয়া করে সদর দক্ষিণ থানাধীন ফিরিঙ্গির হাট, সুয়াগাজী এলাকায় গিয়ে আটককালে ডাকাত নয়ন ও তার সহযোগী পিকআপ হতে নেমে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। প্রায় ৩০ মিনিট দৌঁড়ানোর পর ডাকাত নয়ন একটি পুকুরে লাফ দেয়। এই সময় ডিবি টিমের ৫ জন সদস্যও পুকুরে লাফ দিয়ে পুকুর থেকে ডাকাত নয়নকে আটক করতে সক্ষম হয়। তবে ডাকাত নয়ন এর সহযোগী ১ জন ডাকাত পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে, আটককৃত ডাকাতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চান্দিনা, দেবিদ্বার ও দাউদকান্দি এলাকায় অভিযান অব্যাহত থাকে।

গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা চলতি মাসে লাকসাম থানা এলাকায় মাদ্রাসা গরু ডাকাতি এবং চান্দিনা থানা এলাকায় গরু ডাকাতির ঘটনা স্বীকার করে।

গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের নাম ও ঠিকানাঃ

চান্দিনা উপজেলা বরকড়ই গ্রামের তাজুল ইসলাম মাতা ফিরোজা বেগম ছেলে মোঃ রায়হান (২০), একই গ্রামের পিতা মৃত মনির হোসেন মাতা রাবেয়া বেগম ছেলে মোঃ শাহাদাত হোসেন (২৪),

তিতাস উপজেলা দক্ষিণ নারান্দিয়া গ্রামে মোহাম্মদ আলী মাতা হোসনেয়ারা ছেলে মোঃ নয়ন (৩৪), চান্দিনার সুরিখোলা গ্রামের চেয়ারম্যান বারী মন্টু মিয়া মাতা সেলিনা বেগম ছেলে মোহ সজীব রানা(২৮), চান্দিনার দেওকামতা গ্রামের সিরা কাজী মাতা পানমতি ছেলে মোঃ নাছির (২৫)। উল্লেখ্য যে, ডাকাত নয়ন এর বিরুদ্ধে ১১টি মামলা, ডাকাত সজীব এর বিরুদ্ধে ৫টি মামলা, ডাকাত রায়হান এর বিরুদ্ধে ১টি মামলা রয়েছে।

ডাকাতি কার্যক্রমে ব্যবহৃত জব্দকৃত আলামত:একটি নীল রংয়ের রেজিঃ নম্বর বিহীন পিকআপ গাড়ী, একটি টোটো রিভাল বার, একটি বোল্ট কাটার,দুইটি  কাঠের বাটযুক্ত ছুরি, দুইটি  লোহার চাপাতি,একটি স্টিলের চাপাতি,একটি হেক্কো ব্লেড কাটার,একটি নীল-হলুদ রংয়ের রেজিঃ নাম্বার বিহীন পিকআপ গাড়ী, লাকসাম থানা এলাকায় ডাকাতি হওয়া ৩টি গরু এবং ২টি গরুর বাছুর উদ্ধার করা হয়।