জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
কুলাউড়ায় নানা আলোচনা-সমালোচনা ও আন্দোলনের পর অবশেষে আলোচিত স্কুলছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যার একমাত্র আসামী ঘাতক জুনেল মিয়া (৩৯) দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর ফারুক নিজে উপস্থিত থেকে তৃতীয় বারের মতো খুনী জুনেলের রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করলে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ৫নং আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল হোসেন দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। খুনি জুনেলের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার খবর শুনে নিহত আনজুমের পরিবারের সদস্য ও এলাকায় সাধারণ জনগণের মধ্যে এবার অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেমে এসেছে। আনজুমের একমাত্র খুনি জুনেলের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ায় এবার সুষ্ঠু বিচার পাবেন বলে মনে করেন আনজুমের পরিবার ও এলাকাবাসী।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুন শনিবার বিকেলে নাফিসা জান্নাত আনজুমের বাড়ির পাশে একটি ছড়ার পাড়ে জঙ্গল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গত ১২ জুন সকালে আনজুম স্থানীয় কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে আর বাসায় ফিরে আসেনি। এ ব্যাপারে নিহত আনজুমের মা নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। নিহত আনজুম উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালিকের মেয়ে এবং স্থানীয় শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আনজুম হত্যার ঘটনার দুই দিনের মাথায় পুলিশ একমাত্র খুনি জুনেলক গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে আনজুম হত্যার কথা স্বীকার করে ঘাতক জুনেল। এরপর প্রথমে গত ১৯ জুন তাকে আদালতে তুললে চত্বর খুনি জুনেল বিচারকের সামনে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী না দিয়ে বিচারকার্যকে বাধাগ্রস্ত করতে নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়। এরপর ২য় বারের মতো গত ৩০ জুন রিমান্ডের জন্য আদালতে জুনেলকে তুললে আদালত রিমান্ড না দিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দেন। এতে এতদিন থেকে আনজুম হত্যার সুষ্ঠু বিচার পাওয়া নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরপর কুলাউড়াসহ সমগ্র মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও এলাকায় এলাকায় শিক্ষার্থী আনজুম হত্যার প্রতিবাদে এবং ঘাতক জুনেল মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শুরু হয় লাগাতার মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবাদ সভা ও আন্দোলন। অবশেষে ৮ সেপ্টেম্বর (সোমবার) সকালে ৩য় বারের মতো মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ৫নং আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল হোসেনের খাস কামরায় রিমান্ড আবেদনের জন্য তোলা হয় খুনি জুনেলকে। এবার ও খুনি জুনেলের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে দাঁড়াননি। তবে আনজুমের হত্যা মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট কামরুল ইসলাম ছাড়াও অন্যান্য বেশ কয়েকজন আইনজীবী শুনানীতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আলোচিত এই হত্যা মামলায় ন্যায় বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আইনী লড়াই চালিয়ে যাবো এবং আনজুমের পরিবারের পাশে থাকবো।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর ফারুক রিমান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আলোচিত শিক্ষার্থী আনজুম হত্যা মামলার ঘটনাস্থল একাধিকবার পরিদর্শন করে নতুন করে তদন্ত শুরু করি। তদন্তে মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। আমরা আদালতে আসামী জুনেলের ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশে রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আরও পড়ুন
দুটি হত্যা মামলার আসামী যুবলীগ নেতা শাহিদ মাহমুদ গ্রেপ্তার
রংপুরে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত
রংপুরে আনসার ভিডিপির মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপনী