জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
কুলাউড়ায় মাদক, জুয়া, ইভটিজিং ও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। এ ধরনের অপরাধ নির্মূলে থানাকে আগামী দুই সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার এম,কে, এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম সেবা। ৪ আগস্ট সোমবার রাতে কুলাউড়া থানা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ওপেন হাউজ ডে ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মাদক, জুয়া, ইভটিজিং এবং কিশোর গ্যাংয়ের স্থান কুলাউড়ায় হবে না। কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকার মাদক, জুয়া খেলার স্থান চিহ্নিত করে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি কঠোর হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, এখন থেকে থানায় আর কোনো সালিশ বৈঠক চলবে না। বিচারের নামে একটি দালাল চক্র পুলিশের নাম ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আইনের বাইরে কোনো প্রভাব খাটানো যাবে না। পুলিশ জনগণের বন্ধু। সেটা পুলিশকে প্রকৃত সেবা দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে।তবে অপরাধের বিষয়ে কোনো আপস নয়। একটা ঘটনা ঘটলে পুলিশ সঠিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও স্বাক্ষ্য গ্রহণ করে মামলা নিয়ে আদালতে পাঠাবে। বিচার করবেন আদালত। পুলিশের কাজ নয় থানায় বিচার করা।
কুলাউড়ার সার্কেল ও ওসিকে নির্দেশনা দিয়ে এসপি আরো বলেন, কুলাউড়ার সবক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে। সেখানে শিক্ষার্থীদের সাথে মাদক, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করতে হবে এমনকি প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতি শুক্রবার মসজিদ-মন্দিরে গিয়ে এলাকার লোকদের সাথে সামাজিক অবক্ষয়সহ অপরাধ নির্মূলে সচেতনতামূলক কথা বলতে হবে। পুলিশের কর্মকাণ্ড নিয়ে এসপি বলেন, বিগত ১৭ বছর পুলিশকে নির্দেশনা দিয়ে অনেক অন্যায় কাজ করানো হয়েছে। একজন সাধারণ কনস্টেবল দাঁড়িয়ে তার দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু যে কর্মকর্তা নির্দেশ দিয়ে তাকে গুলি করতে নির্দেশনা দিলেন তিনিইতো বড় অপরাধী। আমরা বিগত দিনের পুলিশ চাইনা। পুলিশ কোন অন্যায় কাজ করতে পারেনা। পুলিশ কোন সরকারের নয়, পুলিশের জনগণের। জনগণের টাকায় পুলিশের বেতনভাতা হয়। তাই জনগণের সাথে সর্বোচ্চ ভালো ব্যবহার করে প্রকৃত পুলিশিং সেবা দিতে থানার ওসিসহ সকল পুলিশ সদস্যকে তিনি নির্দেশনা দেন। এসপি আরও বলেন, থানায় পুলিশের সবধরণের সেবা পেতে কোনো টাকা লাগে না। যদি কোন পুলিশ সদস্য আগত সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে টাকা দাবি করে তাহলে সরাসরি এসপিকে জানাবেন। সকল সেবার স্বচ্ছতা ও পুলিশিং সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে থানায় চালু করা হয়েছে ‘আপনার এসপি’ নামে একটি ডেস্ক। এর মাধ্যমে সরাসরি এসপি (আমার) সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।
সম্প্রতি কুলাউড়া শহরে ব্যবসায়ীর ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে এসপি বলেন, অপরাধীদের কেউই ছাড় পাবে না। আসামিদের গ্রেপ্তার ও টাকা উদ্ধারে পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে। খুব কম সময়ের মধ্যে এটা উদঘাটন করা হবে।
কুলাউড়ার শ্রীপুরের শিক্ষার্থী আনজুম হত্যা মামলার অগ্রগতির কথা তুলে ধরে পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার পরপরই পুলিশ অভিযানে নামে এবং প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। মামলার বিচার দ্রুত ও সঠিকভাবে হবে- এতে পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই। ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে পুলিশের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।
কুলাউড়া থানার নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে ও কুলাউড়া সার্কেলের নবাগত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজমল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নওয়াব আলী আব্বাছ খাঁন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শওকতুল ইসলাম শকু, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক রেদোয়ান খান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুল হোসেন খান, উপজেলা জামায়াতের আমির সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মুন্তাজিম, নায়েবে আমির মো. জাকির হোসেন, সেক্রেটারি বেলাল আহমদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী,
ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির,
বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া, কমর উদ্দিন আহমদ কমরু ও সুফিয়ান আহমদ, ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান সজল, সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মুহিত বাবলু, সিনিয়র সাংবাদিক মোক্তাদির হোসেন, নাজমুল বারী সোহেল, মাহফুজ শাকিল, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সাইফুর রহমান, এনসিপি নেতা লিংকন তালুকদার, আব্দুস সামাদ, ওয়ারিয়র্স অফ জুলাই জেলা সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম, সদস্য আল আদনান চৌধুরী, নাহিদুর রহমান প্রমুখ। এসময় কুলাউড়া প্রেসক্লাব সভাপতি এম শাকিল রশীদ চৌধুরী, কুলাউড়া উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি মো: মছব্বির আলীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, ছাত্র প্রতিনিধি ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা কুলাউড়ার সদ্য বিদায়ী ওসি গোলাম আপছারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করে বলেন, বিগত ৫ আগস্টের পর কুলাউড়া থানায় যোগদান করে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড করেন। থানাকে বিচারালয়ে পরিণত করা হয়েছিল। দালাল চক্রের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত থানায় বিচার-সালিশ চলতো। সেবা নিতে আসা সেবাগ্রহীতাদের সাথে খারাপ আচরণ করা হতো। ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেক লোক বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ে থানায় ওসিকে জানালেও তিনি কার্যত কোন প্রদক্ষেপ নেননি। একটা দালাল সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে তিনি কুলাউড়ার মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন
আরও পড়ুন
শাহরাস্তির রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নে প্রকল্প থাকলেও দেখা মিলেনি কালভার্টের
ঘরে ঘরে সৎ নেতৃত্বের বার্তা ছড়িয়ে দিন: গোলাম কুদ্দুস
প্রতারক টিপুর ফাঁদে নিঃস্ব নওয়াপাড়ার অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী