June 25, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, June 24th, 2025, 4:57 pm

কুলাউড়ায় শিক্ষার্থী আনজুম হত্যার বিচার চেয়ে আদালতের সামনে বিক্ষোভ

 

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

কুলাউড়ায় বহুল আলোচিত দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাফিসা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যাকারী জুনেল মিয়ার দ্রুত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও  প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থী, সচেতন যুব সমাজ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ এলাকাবাসী। ২৩ জুন সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে ও মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সর্ববৃহৎ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে সচেতন যুব সমাজ। মিছিলটি প্রথমে মৌলভীবাজার চাঁদনীঘাট বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে কোর্ট পয়েন্টের দিকে যায়। সেখানে আদালতের সামনে ঘাতক জুনেলের ফাঁসির দাবিতে প্রায় ৩০ মিনিট স্লোগান দিয়ে তারা আবার মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে মিছিল সমাপ্ত করেন। সেখানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভে শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী, যুব সমাজ, এলাকার লোকজন ও শেখ বোরহান উদ্দিন (রহঃ) ইসলামী সোসাইটি, কুলাউড়া ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশ মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রায় দুই সহস্রাধিক নেতৃবৃন্দ অংশ দেন।
এদিকে শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়। যার অনুলিপি দেয়া হয় অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়য়ের উপদেষ্ঠা, আইন উপদেষ্ঠা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ঠা, পুলিশ মহাপরিদর্শক, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মৌলভীবাজার,  ওসি কুলাউড়া থানা বরাবরে।
মানবববন্ধন কর্মসূচিতে সমাজকর্মী মুহিবুর রহমান মুহিবের সভাপতিত্বে ও সংগঠক আবু সামাদ সুজেলের পরিচালনায় বক্তব্য দেন কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান সাহেদ, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আব্দুল মতিন চৌধুরী, এপিপি এড. নিয়ামুল হক, সিনিয়র সাংবাদিক এস এম উমেদ আলী, মু. ইমাদ উদ-দীন, রাজনীতিবিদ মাহমুদ খান আক্তার, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছয়ফুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লুৎফুর রহমান, ব্যবসায়ী আবুল কালাম বাচ্চু, ছাত্র সমন্বয়ক কাজী মুনজের, শিক্ষক খালেদ আহমদ, তাজুল ইসলাম, ইহাম মুজাহিদ, নিহত আনজুমের পিতা আব্দুল খালিক, ভাই আফিফ ইসলাম রাদিন, শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান লিমন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থী আনজুম হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে এনে দ্রুত বিচারকার্য করে আসামী জুনেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যতায় আরো কঠোর আন্দোলন করা হবে। আসামী জুনেল পুলিশের কাছে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করলেও বিজ্ঞ আদালতে সে স্বীকার করেনি। আমরা ধারণা করছি, এই নৃশংস হত্যাকান্ডটি কেউ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে তা না হলে কেন আসামী আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়নি। মামলার আগামী তারিখে আসামী জুনেলের রিমান্ড মঞ্জুর করার জন্য আদালতের কাছে দাবি জানান। এদিকে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট আব্দুল মতিন চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, শিক্ষার্থী আনজুম হত্যার বিচার হবে। এই মামলা পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব আমি নিলাম। এই মামলায় কোন প্রভাব বিস্তার করতে দেয়া হবে না। হত্যাকারী জুনেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ জুন সকাল ৭টার দিকে শিক্ষার্থী আনজুম পাশ^বর্তী সিংগুর গ্রামে কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয় ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালিকের মেয়ে ও শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী নাফিসা জান্নাত আনজুম। বিষয়টি নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। নিখোঁজের দুইদিন পর ১৪ জুন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ির পাশের ছড়ার পাড়ে দুর্গন্ধ পেয়ে ভিকটিমের ভাই ও মামা তার অর্ধগলিত মরদেহ খুঁজে পান। পরে পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শিক্ষার্থী আনজুমকে হত্যা করে পাশ^বর্তী দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহির মিয়ার ছেলে জুনেল মিয়া (৩৯) নামে বখাটে এক যুবক। এ ঘটনায় আনজুমের মা নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গত ১৬ জুন দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছিল, শিক্ষার্থী আনজুম হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। নিহত আনজুমকে ধর্ষণ চেষ্ঠায় ব্যর্থ হয়ে ক্ষুব্দ হয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ছড়ায় ফেলে রাখে ঘাতক জুনেল। আসামি জুনেলের দেখানো মতে এবং পুলিশের তল্লাশীকালে হত্যাকান্ডের আশে পাশে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা ভিকটিমের পরিহিত বোরকা, স্কুল ব্যাগ, বই ও একটি জুতা উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে শিক্ষার্থী আনজুম হত্যার প্রতিবাদে হত্যাকারী জুনেলের দ্রুত বিচারের দাবিতে প্রতিদিন একের পর এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে যাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থী, স্থানীয় লোকজন ও যুবসমাজ। গত ১৫ জুন ঘাতক জুনেল মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, রাতে স্থানীয় ব্রাহ্মণবাজারে, ১৬ জুন কুলাউড়া শহরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে, ১৮ জুন দুপুরে লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজে, ১৯ জুন দুপুরে মহতোছিন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে, ভাটেরা স্টেশন বাজারে সচেতন যুব সমাজের ব্যানারে, ২০ জুন শুক্রবার দুপুরে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ ও সচেতন যুব সমাজের ব্যানারে এবং দুপুরে রাউৎগাঁও ইউনিয়নের চৌধুরীবাজারে সচেতন যুব সমাজের ব্যানারে, ২১ জুন বিকেলে শ্রীপুর জালালিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে বর্তমান ও প্রাক্তণ শিক্ষার্থীরা, ২২ জুন সকালে এম এ গণী আদর্শ ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে কলেজে শিক্ষকবৃন্দ, বর্তমান ও প্রাক্তণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এবং দুপুরে জালালাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তণ শিক্ষার্থীবৃন্দ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।