October 12, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, September 28th, 2025, 6:03 pm

‘কেউ আমা‌রে একটা ঘর বানাইয়া দিত, একটা টিউবওয়েল বসাইয়া দিত সারাজীবন নামাজ পড়ে দোয়া করতাম’

সখীপুর (টাঙ্গাইল) :

জরাজীর্ণ মা‌টির ঘ‌রে বিধবা ফি‌রোজা বেগ‌মের (৭৩) ক‌ষ্টে দিন কাট‌ছে! টিউবওয়েল-ল্যাট্রিন নেই, বয়স্ক ভাতাও পান না! নেই খাবা‌রের নিশ্চয়তাও! জীব‌নের স‌ঙ্গে লড়াই করা বৃদ্ধা ফি‌রোজা বেগ‌মের বেঁচে থাকাই যে‌নো বোঝা! চলৎশ‌ক্তিহীন বৃদ্ধা ফি‌রোজা বেগ‌ম টাঙ্গাই‌লের সখীপু‌র উপ‌জেলার কচুয়া পূর্বপাড়া গ্রা‌মের মৃত আবুতা‌লেব মিয়ার স্ত্রী।

শ‌নিবার (২৭ সে‌প্টেম্বর) দুপু‌রে স‌রেজ‌মিন ওই বৃদ্ধার বা‌ড়ি গি‌য়ে দেখা যায় তার যা‌পিত জীব‌নের এক করুণ চিত্র।

৭৩ বছর বয়সী বিধবা ফিরোজা বেগমের জীবন যেন এক অবিরাম কষ্টের শোকগাথা। জরাজীর্ণ ভাঙা মাটির ঘরে আশ্রয় নিয়েই তাঁর কাটছে দুঃসহ দিন। নেই টিউবওয়েল, নেই শৌচাগার, নেই বয়স্ক ভাতার সুবিধা। এমনকি তিন বেলা খাবারেরও নিশ্চয়তা নেই তাঁর জীবনে।

ফিরোজা বেগমের ঘরটির অবস্থা একেবারেই নাজুক। চারপাশের মাটির বেড়া হেলে পড়েছে, যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। চালে মরিচাধরা পুরনো টিন, যেখানে অসংখ্য ছিদ্র ও ফাটল দিয়ে বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। রাতে জায়নামাজের ওপর বসানো একটি পুরনো জলচৌকিতেই ঘুমাতে হয় তাঁকে। ঝড়-বৃষ্টি একসাথে হলে ওই ঘরে থাকা আরও কষ্টকর হয়ে ওঠে।

কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই অসহায় বৃদ্ধা। তিনি বলেন, ‘কোনো দয়ালু মানুষ যদি আমারে একটা ঘর বানাইয়া দিত আর একটা টিউবওয়েল বসাইয়া দিত, আমি সারাজীবন নামাজ পড়ে তাঁর জন্য দোয়া করতাম। রাতে যদি একটু শান্তিতে নামাজ পড়তে আর ঘুমাতে পারতাম, তবে সব দুঃখ ভুলে যাইতাম।’

স্বামীর রেখে যাওয়া ভাঙা মা‌টির কোঠা ঘর ছাড়া তাঁর কোনো জমিজমা নেই। অ‌ন্যের টিউবওয়েলে পা‌নি আন‌তে এবং অ‌ন্যের ল‌্যা‌ট্রিন ব‌্যবহা‌রে দারুণ গালমন্দ শুন‌তে হয় তা‌কে। তাই তি‌নি নতুন এক‌টি ঘ‌রের আশা ক‌রে ব‌লেন, ওই নতুন ঘ‌রে ল‌্যা‌ট্রিন, একই ঘ‌রে বিশুদ্ধ পানির টিউবওয়েল ও বিদ্যুৎ ব‌্যবস্থা থাক‌বে।

তি‌নি আরও ব‌লেন, ছা‌নি পড়া চোখ দু‌টো অ‌ন‌্যদের সহ‌যো‌গিতায় অপা‌রেশন করা হ‌য়ে‌ছে। এখন বেশ ভা‌লো দে‌খি। চো‌খে চশমা দি‌য়ে কোরআন পড়‌তে পা‌রি। কিন্তু প্রতিরা‌তেই তো আত‌ঙ্কে থা‌কি এই বু‌ঝি ঝড়-বৃষ্টি এ‌লো!

ফিরোজা বেগমের স্বামী আবু তালেব মিয়া মারা গেছেন ২০ বছর আগে। তিন ছেলেই সংসার নিয়ে টানাপোড়েনে আছেন। তাই মায়ের জন্য ঘর নির্মাণ বা সহযোগিতা করার সামর্থ্য নেই তাদের। জমিজমা না থাকায় অন্যের শৌচাগারে যেতে হয় তাঁকে। এরই ম‌ধ্যে শরী‌রে বাসা বে‌ঁধে‌ছে নানা রোগ! সব মি‌লি‌য়ে তার জীবন যে‌নো এক ক‌ষ্টের শোকগাথা জীবন।

ওই গ্রামের সাধারণ মানুষ বলছেন, অবিলম্বে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে ফিরোজা বেগমকে একটি ঘর, টিউবওয়েল ও বয়স্ক ভাতার আওতায় আনতে হবে। না হলে এই অসহায় বৃদ্ধার মানবেতর জীবনযাত্রা চলতেই থাকবে।

প্রতিবেশী মিনা বেগম ও না‌র্গিস আক্তার জানান, ফিরোজা বেগমের দুর্দশা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। কোনো সরকারি সহায়তা তিনি এখনো পাননি। স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি ইতিমধ্যে নজরে এসেছে, শিগগিরই তাঁর জন্য সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।