কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ঘাটের চাঁদাবাজির টাকা যায় জেলা-উপজেলার শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে। এ নিয়ে বোট মালিকের একটি বিস্ফোরক অডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এটি ‘টক অব নোয়াখালী’তে পরিণত হয়।
গত বছরের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের আগে এখানকার বহুল আলোচিত-সমালোচিত চরএলাহী ঘাটের নিয়ন্ত্রক ছিলেন চরএলাহী ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। তিনি এখন কারাগারে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চরএলাহী ঘাটটি সরকারি বিধিমত ইজারা নিয়েছিলেন ওই ইউনিয়নের যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ বেলাল। গণ-অভ্যুত্থানের পর ঘাটটির নিয়ন্ত্রণ নেন উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদারের নেতৃত্বে তার অন্যতম অনুসারীরা। এ নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চরএলাহী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মতিন তোতা ও চরফকিরা ইউনিয়নের যুবদল নেতা এরশাদ মাঝি খুন হন। এ ধারাবাহিকতায় এখনও সংঘর্ষ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ধর্ষণ, দখল, লুটতরাজ অব্যাহত রয়েছে।
সম্প্রতি চরএলাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন, তার ভাই প্রবাসী বেলাল, ছাত্রদল নেতা ইমন, মাসুদসহ কয়েকজন ইব্রাহিম তোতা বাহিনীর হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘাটের চাঁদাবাজির টাকার কমিশন নিয়ে নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইস্কান্দার মির্জা ও ঘাটের কেরানি সেলিমের ভাইরাল হওয়া অডিও কথোপকথনে শোনা যায়- উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদার, মৃত তোতা চেয়ারম্যানের ছেলে ইসমাইল তোতা, সবুজ তোতা, বাহাদুর তোতা, তোতা চেয়ারম্যানের জামাই আনোয়ার হোসেন, ছাত্রদল নেতা রুবায়ের, ফাহিম ও ৬ নেতার একটি করে বোট রয়েছে। চলাচলকারী বোটগুলোর আয়ের ২০ শতাংশ টাকা প্রতিদিন চরএলাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাস্টারের কাছে জমা হয়। এই টাকা বিএনপির উপজেলা নেতা, জেলা নেতা, ইউএনও, ডিসি, ওসি-এসপিকে ভাগ করে দিতে হয়।
ছাত্রদল নেতা ইস্কান্দার মির্জা প্রশ্ন করেন-সাইফুল, রুবায়ের, তোতার ছেলে শাহিন, ইব্রাহিম সবার বোট আছে। আবার নতুন একটা নামিয়েছে। তাদের তো ২০ শতাংশ কমিশন দিতে হয় না। উত্তরে কেরানি সেলিম বলেন, সবাইকে দিতে হয়। আমি মাস্টারকে দেই। পরে তিনি কাকে দেন, আমার জানার দরকার নেই। ইস্কান্দার বলেন, এ পর্যন্ত ১৪ লাখ টাকা তিনি চাঁদা দিয়েছেন।
ছাত্রদল নেতা ইস্কান্দার মির্জার সঙ্গে কথিত সাংবাদিক কামাল উদ্দিনের ফাঁস হওয়া অপর আরেকটি অডিওতে ছাত্রদল নেতা মির্জা বলেন, বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদার, ইব্রাহিম তোতা, ইসমাইল তোতা, তাদের মেয়ের জামাইয়ের বোট আছে। কিন্তু আপনি শুধু আমার বোটের কথা বললেন কেন? আমি এ পর্যন্ত ২০ শতাংশ কমিশনের প্রায় ১৪ লাখ টাকা দিয়েছি, একথা তিনি পুনরায় বলেন।
এসময় ছাত্রদল নেতা মির্জা কথিত সাংবাদিক কামালকে বলেন, প্রথমে তারা (ইসমাইল তোতা, ইব্রাহিম তোতারা) ৩০ শতাংশ চেয়েছে। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। অনেকদিন আমার বোট বন্ধও হয়েছে।
মির্জা বলেন, ইসমাইল তোতা, ইব্রাহিম তোতা আমার কাছ থেকে টাকা নিত। তাদেরকে যখন জিজ্ঞেস করতাম টাকা কাকে দিতে হয়? তারা বলেন, এ টাকা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদার, জেলা প্রশাসন, ইউএনও, ওসিকে দিতে হয়। বোট চালাতে হলে তাদের কমিশন দিয়েই চালাতে হবে।
নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর বলেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিএনপির ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত আছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম জানান, ঘাটের বিষয়ে পুলিশ কিছুই জানে না।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম চাঁদার ব্যাপারে সঠিক কোন মন্তব্য না করে তিনি জানান, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মুজাহিদুল ইসলাম নামের ব্যক্তি ঘাটটির অবস্থান ও মালিকানা সন্দ্বীপে দাবি করে উচ্চ আদালতে রিট করেন। এ কারণে ঘাটটি ইজারা দেওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন
আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী (রহ:) এর দ্বিতীয় শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে তার জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা
গ্রাহকের ২০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে মুরাদনগরের ‘দানিক’
কমলগঞ্জে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল চা জনগোষ্ঠী উন্নয়ন ফোরাম