October 11, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, October 4th, 2025, 8:06 pm

ক্লিবডন চা বাগানের সর্দার হত্যা রহস্য উদঘাটন হত্যাকারীর ফাঁসির দাবিতে উত্তাল শ্রমিকরা

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

কুলাউড়া উপজেলার ক্লিবডন চা বাগানের শ্রমিক সর্দার রামবচন গোয়ালা (৪০) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যার মূল আসামি গোলাপ সতনামী (৩৩) কে আলামতসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, আসামির কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত লাঠি, ভিকটিমের মোবাইল ফোন, জুতা, লাঠি বাঁধার গামছার টুকরা এবং আসামির মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রামবচন গোয়ালা বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। স্বজনরা খোঁজাখুঁজি ব্যর্থ হলে ২৭ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরদিন সকালে জুড়ী উপজেলার কাপনাপাহাড় চা-বাগান এলাকায় রক্তের দাগ ও স্যান্ডেল দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে বাবুনালা ছড়া থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার পর পুলিশ সুপার এম.কে.এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম-সেবার নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা ও কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজমল হোসেনের তত্ত্বাবধানে ওসি মো. মুরশেদুল আলম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বিশেষ টিম তদন্ত শুরু করে। গোপন তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ৩ অক্টোবর ভোরে কামিনীগঞ্জ বাজার থেকে গোলাপ সতনামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, সেদিন সন্ধ্যায় আসামি গোলাপ সতনামী রামবচনকে মদ খাওয়ার প্রস্তাব দেয় এবং মোটরসাইকেলে রত্না চা বাগানে যায়। সেখানে চন্দন নামের এক ব্যক্তিসহ তারা মদ পান করে। এসময় চাকরি ফেরত চাওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। রামবচন গোলাপকে গালিগালাজ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে সে হত্যার পরিকল্পনা করে। ২০১৭ সালে গোলাপও রামবচনের কারণে চাকরি হারিয়েছিল, তাই তার দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল। রাত আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিটে সাগরনাল চা বাগান থেকে ফেরার পথে বাবুনালা ছড়ার কাছে মোটরসাইকেল থামিয়ে গোলাপ কোদালের হাতল দিয়ে রামবচনের মাথায় একাধিক আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। হত্যার পর গোলাপ সোনারূপা চা বাগানে গিয়ে এক ব্যক্তিকে বিষয়টি জানায়। পরে দু’জনে মিলে লাশ টেনে বাবুনালা ছড়ায় ফেলে দেয় এবং গাছপালা ও মাটি চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) মোঃ আজমল হোসেন। এসময় জুড়ী থানার ওসি মো. মুরশেদুল আলম ভূঁইয়া ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফরহাদ মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে চা-শ্রমিক সর্দার হত্যার অভিযোগে আটক গোলাপ সৎনামের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্লিভডন চা-বাগানের শ্রমিকরা। শনিবার (৪ অক্টোবর) কাজে না গিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাগানের অফিসের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। পরে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা একটি বিক্ষাভ মিছিল নিয়ে বাগানের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অজিত গোয়ালার সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে একাত্বতা পোষণ করে বক্তব্য দেন জয়চন্ডী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিলন বৈদ্য, সাবেক চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু, উপজেলা বিএনপির নেতা ময়নুল হক বকুল, বদরুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য শংকর উরাং, সাবিত্রী রানী রাজভর, সাবেক ইউপি সদস্য সুবাস গোয়ালা, বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মনিরাম উরাং, সাবেক সভাপতি মোহনলাল গোয়ালা, রামবচন গোয়ালার স্ত্রী হেমন্তি গোয়ালা প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জয়চন্ডী ইউনিয়নের ক্লিভডন চা-বাগানের সিনিয়র দফা সর্দার রামবচন গোয়ালা সর্বজন প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। তারসাথে কারো কোন শত্রুতা ছিলনা। এ ঘটনায় বাগানের মাদক ও গরু চোরের সর্দার গোলাপ সৎনামকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু এই গোলাপের অনেক সহযোগী এখনও প্রকাশ্যে রয়েছে। তাদের কারণে আতংকিত হয়ে আছেন বাগানের সাধারণ শ্রমিকরা। তারা গোলাপের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি এবং তার সহযোগীদের আটকের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।  চা-শ্রমিক নেতারা বলেন, গোলাপ সৎনাম একজন চিহ্নিত মাদক