December 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, June 20th, 2023, 8:47 pm

খাদ্যসঙ্কটে উত্তর কোরিয়া

অনলাইন ডেস্ক :

সারাবিশ্বে ২০২০ সালে থাবা বসিয়েছিল করোনাভাইরাস। মহামারির গ্রাসে এক ধাক্কায় পৃথিবী থেকে মুছে গিয়েছে বহু প্রাণ। তছনছ হয়ে গেছে স্বাভাবিক জনজীবন। কোভিডের মোকাবিলা করতে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন রকম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করেছিল। দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল পরিবহন ব্যবস্থা। তবে ওই সবই এখন অতীত। বর্তমানে করোনার প্রকোপ থেকে মুক্ত বিশ্ব। ভাইরাস হয়ত নির্মূল হয়ে যায়নি। তবে সংক্রমিতের সংখ্যা কমেছে। কমেছে করোনায় মৃত্যুর পরিমাণও। দেশে দেশে ছন্দে ফিরেছে স্বাভাবিক জীবন। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই করোনার বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে। স্বাভাবিক করা হয়েছে যোগাযোগ এবং পরিবহণ ব্যবস্থা। কিন্তু একটি দেশ এখনো ২০২০ সালেই থমকে রয়েছে। তার নাম উত্তর কোরিয়া। করোনা মহামারির শুরুতে উত্তর কোরিয়ার দ্বার রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন একনায়ক কিম জং উন। চীন সীমান্ত-সংলগ্ন দেশটি ওই সময় থেকে বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন।

এখন পর্যন্ত নিজের দেশকে রুদ্ধই করে রেখেছেন কিম। করোনাভাইরাস যেন বাণিজ্যিক পণ্যের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে, তাই উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত ‘সিল’ করে দিয়েছিলেন কিম। এতে চীনের সাথেও পণ্যের আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্যিক পণ্যের একটি বড় অংশই আসে চীন থেকে। খাদ্যশস্য ও কৃষিকাজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও চীন থেকে দেশটিতে আমদানি করা হয়। ২০২০ সালের পর থেকে যা বন্ধ রয়েছে। সীমান্ত ‘সিল’ করে দেয়ার পর থেকে দেশের অভ্যন্তরে কৃষিকাজের মাধ্যমে উৎপন্ন ফসল দিয়েই দিন কাটাচ্ছিল উত্তর কোরিয়া। কিন্তু তাতে বেশি দিন চলার কথা নয়। ফলে খাদ্যসঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে কিমের দেশ। পরিস্থিতি এমনই যে দেশে অনেকেই না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে। দিনের পর দিন খাবার জোটাতে না পেরে অনাহারে কাটাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। সবচেয়ে দুরবস্থা দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। উত্তর কোরিয়ার জনসংখ্যা দুই কোটি ৬০ লাখ। অনেকেই বলছে, একনায়কের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের জন্য দিন দিন দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। সেখানে স্থানীয়দের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করা যাচ্ছে না। উত্তর কোরিয়ার এক বাসিন্দা গোপনে বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি তার প্রতিবেশীদের বাড়িতে পানি পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন। কেউ দরজা খোলেনি। পরে দেখা যায় পানি ও খাবারের অভাবে ওই পরিবারের তিন সদস্যেরই মৃত্যু হয়েছে।

চীন সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকার এক বাসিন্দা জানিয়েছে, তিনি চোখের সামনে তার গ্রামের পাঁচজনকে না খেতে পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছেন। খাবার পানিটুকুও সংগ্রহ করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে উত্তর কোরিয়ায়। রুদ্ধ সীমান্তে রয়েছে কিমের সেনার কড়া নজরদারি। সীমান্তের কাছাকাছি কেউ গেলে বা সীমান্ত পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেই সাথে সাথে গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে রক্ষীদের। পরিস্থিতি এমনই যে একসময় দেশের মানুষ কোভিডে মৃত্যুর ভয় পেত। এখন অনাহারে মৃত্যুর দিন গুনতে হচ্ছে তাদেরই। অভিযোগ, প্রশাসন দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাসে কর্ণপাত করছে না।মানবাধিকার-সংক্রান্ত বর্ষীয়ান গবেষক লিনা ইউন সংবাদ সংস্থ সিএনএনকে জানিয়েছেন, অবিলম্বে উত্তর কোরিয়ার উচিত সীমান্ত উন্মুক্ত করে বাণিজ্য আবার চালু করা। দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে খাদ্যের জোগান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তা বাণিজ্য বা বাইরে থেকে আমদানি ছাড়া সম্ভব নয়। অনেকেই মনে করছে, উত্তর কোরিয়া এখনো কোভিডের আশঙ্কায় নিভৃতবাসকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়লে নিভৃতবাসেও কোনো লাভ হবে না। শিগগিরই নিজের বিপদ ডেকে আনছেন কিম।

কিমের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ, তিনি দেশের মানুষের সাধারণ সমস্যাগুলো পাত্তা না দিয়ে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির দিকে ঝুঁকছেন। এক দিকে মানুষ খাবার জোটাতে পারছে না। আর কিম লাখ লাখ টাকা পরমাণু অস্ত্রভা-ারের জন্য খরচ করে চলেছেন। দেশের হালচাল দেখে প্রমাদ গুনছেন উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিবিদেরাও। তারা জানিয়েছে, দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। দেশে খাদ্যসঙ্কট দিন দিন মাথাচাড়া দিচ্ছে। তবে এখনো দুর্ভিক্ষ বা সমাজব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার কথা স্বীকার করতে চাচ্ছে না অর্থনীতিবিদরা। দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়, এ কথা মেনে নিয়েও তারা আগামীর জন্য আশা রাখছেন তারা। নব্বইয়ের দশকে উত্তর কোরিয়া ভয়ানক দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হয়েছিল। ওই সময় ৩০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল শুধুমাত্র না খেতে পেয়ে। আগামী দিনে এমন পরিস্থিতি এড়াতে অবিলম্বে দেশকে ‘মুক্ত’ করা উচিত কিমের, মনে করছে বিশেষজ্ঞেরা।