বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার বিষয়টি আপাতত স্থগিত হয়ে গেছে। শারীরিক অবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়ায় এবং ঝুঁকি পুরোপুরি না কাটায় তাঁকে এখনই বিদেশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে মেডিকেল বোর্ড।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বয়স ৮০ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ছাড়াও কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও চোখের নানা জটিলতায় ভুগছেন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৭ নভেম্বর তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন বৈঠক করছে। বোর্ডের এক সদস্য জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে কিছুটা উন্নতি হলেও তা এখনও ঝুঁকিমুক্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, লিভারের জটিলতা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনির অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ রয়েছে।
চিকিৎসকরা জানান, তাঁর কিডনির ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অনেক আগেই বর্ডার লাইনের ওপরে চলে গেছে। প্রতিনিয়ত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস বন্ধ করলেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। বয়সজনিত কারণে সুস্থ হতে অধিক সময় লাগছে এবং এক সমস্যার উন্নতি হলে নতুন আরেকটি জটিলতা দেখা দিচ্ছে।
সিসিইউতে থাকার সময় নিয়মিত নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। রিপোর্টগুলো খুব খারাপ না হলেও ঝুঁকি পুরোপুরি কাটেনি বলেও জানিয়েছেন মেডিকেল বোর্ড। দৈনিক বৈঠকে প্রত্যেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আলাদা করে মতামত দিচ্ছেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
চিকিৎসায় সমন্বয় করছেন তাঁর পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। তিনি দেশে ফিরে এসে সরাসরি মেডিকেল বোর্ডে অংশ নিচ্ছেন এবং দিনের অধিকাংশ সময় শাশুড়ির পাশে হাসপাতালে থাকছেন। কয়েকদিন তিনি দেশেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চিকিৎসকদের পরামর্শে গুলশানের বাসা থেকে প্রতিদিন খালেদা জিয়ার জন্য খাবার পাঠানো হচ্ছে। সার্বক্ষণিক তাঁর পাশে রয়েছেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান, শর্মিলা রহমান, গৃহপরিচারিকা ফাতেমা ও স্টাফ রূপা আক্তার। তাঁর ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমাও নিয়মিত পাশে থাকছেন।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালের এক ডজন চিকিৎসক এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করছে।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসছে না
উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ভাড়া করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আজ মঙ্গলবার ঢাকায় আসছে না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অপারেটরের আবেদনের ভিত্তিতে আগে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হলেও পরে সেই স্লট বাতিলের আবেদন করা হয়েছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, অপারেটর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই নির্ধারিত সময়সূচি বাতিল করেছে।
এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, তাঁর বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে শারীরিক অবস্থার ওপর। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসক দল।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
নির্বাচনের ট্রেনে আমরা উঠে গেছি: সিইসি
শোক ও শ্রদ্ধায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জীবন সংগ্রামের গল্প