December 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, December 22nd, 2024, 5:18 pm

খুলনায় জীবন-জীবিকায় জড়িত বিলুপ্তপ্রায় ঘোড়ার গাড়ি 

মাসুম বিল্লাহ ইমরান, খুলনা:
আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে ঘোড়ার গাড়ি। বিয়ের বহরে সজ্জিত অবস্থায় ঘোড়ার গাড়ির দেখা মিললেও তা সীমিত। ইঞ্জিনের স্পর্শে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক যানবাহনই কালপরিক্রমায় পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়েছে। তেমনি মান্ধাতার আমলে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ঘোড়ার গাড়ি বহুবিধ কারণে বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে দৃশ্যপট থেকে। তবে এখনও গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে খুলনা জেলার পাইকগাছার বহু কর্মজীবী মানুষ।
তবে এই গাড়ি এখন আর মানুষকে বহন নয়, ব্যবহৃত হচ্ছে পণ্য বহনের কাজে। জীবন-জীবিকার তাগিদ আর সময়ের চাহিদা মেটাতে এবং যাতায়াত ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে পাইকগাছার মানুষ এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, বেশিরভাগ এলাকায় চিংড়ির চাষ করায় বড় বড় বিলগুলোতে বাঁধ দিয়ে খণ্ড খণ্ড করা হয়েছে। এসব এলাকায় স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল করতে পারে না। সেজন্য বিভিন্ন মালামাল পরিবহনের কাজে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার হয়ে থাকে এ উপজেলায়। এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেড় শতাধিক ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। প্রতিটি গাড়ি এ ধরনের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। গাড়িগুলো বিভিন্ন ইটভাটা থেকে নির্মাণাধীন সামগ্রী প্রতিষ্ঠান কিংবা বসতবাড়িতে পৌঁছে দেয়। এছাড়া বালির আড়ৎ এবং নদীর চর অথবা বিল থেকে মাটিবহন করার কাজে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বর্তমান যান্ত্রিক যুগে এ ধরনের যানবাহনের খুব বেশি প্রচলন না থাকলেও পরিবেশ ও শব্দ দূষণ রোধে ঘোড়ার গাড়ি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কৃষিপণ্য, বালু, মাটি, বাঁশ, কাঠ, গাছ এমনকি ভাটার ইট বহনে এখন একমাত্র বিশ্বস্ত বাহন এই বিলুপ্ত প্রায় ঘোড়ার গাড়ি। এই ঘোড়ার গাড়ির উপর ভর করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে অনেকেই।
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ঘোড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন পাইকগাছার মালত গ্রামের মেহের আলী মোড়ল । তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, যখন যে পণ্য পায় সেটি তার কাজ করি। আমার ঘোড়ার গাড়িতে ধান, বিচলী, বাঁশ থেকে শুরু করে ইট, বালু, কাঠ, মাছ সবই টানি। এই অঞ্চলের একশ’র অধিক মানুষ ঘোড়ার গাড়িতে পণ্য টানি।
ঘোড়ার গাড়ির মালিক হাফিজুর মোড়ল বলেন, প্রতিদিন ঘোড়ার খাবারের পেছনে ২০০ টাকার মতো ব্যয় হয়। কাজ করলে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এই ঘোড়ার গাড়ির আয় দিয়েই সংসার চলে। শুধু আমি না, অনেক গাড়িয়াল আছে এই এলাকায়। সবাই বিভিন্ন ধরনের পণ্য টানে।
পাইকগাছার আসলাম হোসেন বলেন, ঘোড়ার শক্তি বেশি। একটি ঘোড়া দিয়ে একটি গাড়ি টানা যায়। মানুষের আয়ের উৎস্য এটি। স্বল্প সময়ে সুন্দরভাবে আয় করা যায়। এ জন্য গরুর পরিবর্তে ঘোড়া দিয়ে গাড়ি টানে এই অঞ্চলের মানুষ। যারা এই কাজ করে তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে ঘোড়া রয়েছে।
পাইকগাছার মাধবী রায় বলেন, বুঝতি শেখার পর থেকে দেখছি ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মাল (পণ্য) টানে। ঘোড়া দিয়ে তেলের ঘানি টানে, দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। এছাড়া ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে ইট, কাঠ, ধান, বিচালী টানে।