খুলনা ব্যুরো:
‘জুলাই স্মৃতি উদযাপন কমিটি’ ও ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে খুলনার শিববাড়ী মোড়স্থ জিয়া হলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী একটি প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজনের অনুমতি দাবিতে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কক্ষে প্রায় ৪ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে এনসিপি ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
রবিবার (২৯ জুন) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের কক্ষে অবস্থান করেন তারা। পরে লিখিত আবেদন জমা দিয়ে কক্ষ ত্যাগ করেন আন্দোলনকারীরা।
আয়োজকদের দাবি, জুলাই মাসজুড়ে ‘জুলাই স্মৃতি প্রদর্শনী’, ‘জুলাই মঞ্চ’, ‘জুলাই কর্নার’ এবং LED স্ক্রিনে বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র ও স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। সেই সঙ্গে থাকবে বইয়ের স্টল, দেশীয় কুটির শিল্প ও খাবারের স্টল। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, এটি মূলত একটি বাণিজ্যিক মেলা, যেখানে এরই মধ্যে বাঁশসহ স্টল নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমি একা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। এটি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
জেলা প্রশাসকের অনাগ্রহে ক্ষুব্ধ হয়ে এনসিপি ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ডিসিকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ বলে অভিযোগ করেন। তারা ডিসির পদত্যাগ দাবি করে বলেন, ‘জুলাই স্মৃতি উদযাপন’ বাধাগ্রস্ত হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
এ সময় ডিসি কক্ষে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক ওয়াহিদুজ্জামান, ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি, মহানগর সদস্য সচিব জহুরুল তানভীরসহ আরও অনেকে।
তবে একই সংগঠনের অভ্যন্তরেই এই আয়োজন নিয়ে দ্বিধা তৈরি হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর সভাপতি আল শাহরিয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “জুলাই স্মৃতি উদযাপন আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। কিন্তু এই আয়োজনে মেলার রূপ দিয়ে সেটিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “আমাদের পরিকল্পনায় ছিল শহীদ পরিবারদের সঙ্গে মতবিনিময়, আলোচনা সভা, পথ নাটক ও ক্যালেন্ডার বিতরণ। কিন্তু যারা এই আয়োজন করেছে, তারা আলোচনা না করেই নিজেদের মতো করে এগিয়েছে।”
বিকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, “মেলা শব্দটি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আমাদের মূল লক্ষ্য জুলাই স্মৃতিকে কেন্দ্র করে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করা। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে খুলনায় এই আয়োজন করছি। জেলা প্রশাসক ‘মেলা’ শব্দটি যেভাবে বলেছেন, তা কটূক্তির শামিল।”
এদিকে আন্দোলনকারীরা জানান, তারা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবেন। অনুমতি না দিলে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে।
খুলনায় জুলাই স্মৃতি উদযাপনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে আয়োজনের ধরন ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিতর্ক। প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়া, অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনার প্রশ্নে এটি একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কে রূপ নিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন এটি স্মৃতিচারণমূলক প্রদর্শনী, তবে বাস্তবে সেটি কতটা আদর্শভিত্তিক হবে নাকি বাণিজ্যিক, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
খুলনায় প্রেস সচিবকে আটকে রেখেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ও এনসিপির নেতা কর্মীরা
খুলনার উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ দৃষ্টি আছে: প্রেস সচিব
কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ