July 16, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, July 15th, 2025, 8:41 pm

খুলনা ওয়াসার নকশাকারক চলেন অফিসারের ভঙ্গিতে

পদোন্নতি, বদলি, মামলা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দুর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছেন জিএম আব্দুল গফফার। খুলনা ওয়াসার নকশাকারক পদে চাকুরী করেন। বিগত সরকারের শাসনামলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে খুলনা ওয়াসার কর্মচারী ইউনিয়নের সাদারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন। এরপর তার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পদোন্নতি, বদলি বাণিজ্য, আবাসন বরাদ্দ, টেন্ডারবাজী, আউট সোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ বানিজ্য, কর্মচারীদের দুই মাসের পেনশন সুবিধা প্রদান, মাস্টাররোল কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ, যারা মাস্টাররোল থেকে স্থায়ী হয়েছেন তাদের দুই মাসের মধ্যে সার্ভিস কাউন্ট করে দেওয়া, এবং  কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নিয়মিত অফিস না করেও মাসের পর মাস বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। চলাফেরায়, আচার-আচরণে তিনি নিজেকে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে জাহির করেন। তার বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ওয়াসার চার কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করায় ইউনিয়ন থেকে অনেকেই পদত্যাগ করেছেন।

ইতোমধ্যেই নিয়মিত অফিস না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় করায় কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সূত্র জানায়, জিএম আব্দুল গফফারের নিয়োগ হয়েছিল পাম্প অপারেটর পদে। এরপর তার চাকরি আত্মীয় করণ হয় নকশা কারক পদে। কিন্তু তিনি পাম্প চালক কাজে নিযুক্ত ছিলেন।  গত বছর ৫ আগস্টের পরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পাম্পের থেকে প্রধান কার্যালয়ে চলে আসেন। ৭ আগস্ট ভান্ডার রক্ষক রবিউল ইসলাম কে নিয়ে ওয়াসা নতুন ভবন ও পুরাতন ভবনে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করেন।তার আগে ১১ জুলাই পতিত সরকারের নেতাদের প্রভাবখাটিয়ে কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। এরপর থেকে তিনি অফিসের রুলস ভেঙ্গে নিয়মিত অফিস করতেন না। তার হাজিরা খাতা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় গত ২৬ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত হাজিরা বহিতে স্বাক্ষর করেননি। ফলে অফিসে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন ওয়াসার কর্মকর্তা (অর্থ ও প্রশাসন) ঝুমুর বালা বিশ^াস। কিন্তু এখনও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, গত ১৬ এপ্রিল জিএম গফ্ফার ও ভান্ডার রক্ষক রবিউল ইসলামের উপর হামলার ঘটনায় ৫জনকে আসামি করে খালিশপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে চারজনই ওয়াসার কর্মচারী।

এামলার আসামি ওয়াসা কর্মচারী ইমামুল ইসলাম, কাজি মোঃ ইলিয়াজ হোসেন, সরদার সাইফুল ইসলাম ও শহিদুল্লাহ বাবু অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে জিএম আব্দুল গফফার মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করে সমন্বয় পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন খুলনা ওয়াসা শ্রমিক কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ থেকেসাবেক সাধারন সম্পাদক  মুকুল হোসেন বলেন,তিনি  ৯টি কারণ উল্লেখ করে আমি পদত্যাগ করেছি।  । মামলার ভুক্তভুগীরা বলেন জি.এম আব্দুল গফ্ফার বর্তমান ইউনিয়নের ক্ষমতা ও দলের প্রভাব খাটিয়ে সম্প্রতি কিছু লোক নিয়োগ দিয়েছে সাধারন কর্মচারীদের কথা- জি,এম আব্দুল গফ্ফারকে চোর, বাটপার, দূর্নিতীবাজ স্বার্থান্নেশী, অর্থ লোপাটকারী বলে যখন বিভিন্ন যায়গায় এ ধরনের মন্তব্য করে। এই বিষয়টি নিয়ে জি,এম আব্দুল গফ্ফারের সাথে ইউনিয়ন  আলোচনা করতে গেলে তিনি পাশ কাটিয়ে এড়িয়ে চলেন।

মামলার ভুক্তভোগীরা  আরো বলেন, জি,এম আব্দুল গফ্ফার খুলনা ওয়াসার কতিপয় কর্মচারীকে প্রায় ৬ লক্ষ টাকার কাজের টেন্ডার পাইয়ে দেন। প্রতিবছর হিসাব দাখিল করার কথা থাকলেও তিনি হিসাব দেন না।  খুলনা সিটি করপোরেশনে চাকুরী কালীন দপ্তরে বিশৃঙ্খলা করার কারনে জি এম আব্দুল গফফারের বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল এবং একই ধরনের অভিযোগে খুলনা ওয়াসাতেও তার বিরুদ্ধে জুতা মিছিল করেছিল সাধারন কর্মচারিরা। বর্তমানে ইউনিয়নের যে অবস্থা তাতে করে যে কোন সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটতে পারে বলে তিনি আশংকা করেছেন।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে জি এম আব্দুল গফ্ফার বলেন, প্রতিপক্ষরা মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে। ওয়াসার চারটি অফিস রয়েছে, সেসব অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। কর্মচারীদের বিভিন্ন সমস্যা দেখতে হয়। এজন্য মাঝে মাঝে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে পারিনা। এটা কোন বিষয় না। আজ দুপুরে না খেয়ে সচিব স্যারের সাথে কাজ করছি। আপনি এসে দেখে যেতে পারেন।

কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্ণীতি ও নিয়মিত াফিস না করা সম্পর্কে জানতে চাইলে নব নিযুক্ত খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু সায়েদ মোঃ মঞ্জুরুল আলম বলেন, আমি তিনদিন আগে দায়িত্ব পেয়েছি। এখনও অফিসে যাইনি। আজ বিকালে অফিসে গিয়ে বিষয়গুলো খোজ নেব। অফিসে কোন অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি দেখছি।

মাসুম বিল্লাহ ইমরান

খুলনা