April 19, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, April 8th, 2025, 12:23 pm

খুলনা ওয়াসা চলে এখনো আওয়ামী ইশারায়

মাসুম বিল্লাহ ইমরান, খুলনা: ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরে সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। মেয়াদ শেষে চলেও গেছেন খুলনা ওয়াসার আলোচিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ। মধুমতী নদী থেকে পানি এনে খুলনা শহরে সরবরাহের প্রথম পর্বের কাজ শেষে এখন দ্বিতীয় অংশের প্রস্তুতি চলছে। চলমান রয়েছে পাইপলাইনের মাধ্যমে শহরের মানববর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্লান্টে নেওয়ার কার্যক্রমও।এছাড়া ও  একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচবার কাজ দেওয়া হয়।বারবার কিভাবে একটি বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায় সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।কথিত আছে ওয়াসা থেকে এখনও ভাগা নেন আওয়ামী লীগের নেতারা ।

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) তৎকালীন মেয়র, খালিশপুর অঞ্চলের একজন কাউন্সিলর ও কেসিসির প্যানেল মেয়র, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির একজন সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের তৎকালীন সভাপতিসহ আওয়ামী বলয়ের লোকদের মাধ্যমে চায়না জিও ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি এই প্রকল্পের কাজগুলো করছে। আর এসব কাজে দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে কী পরিমাণ তা কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব করা না গেলেও বাস্তবে দেখা মিলেছে অনেক দুর্নীতির চিত্র। কিন্তু সেসব দুর্নীতি-অনিয়মের তদন্ত না করে আবারও নতুন নতুন কাজের সঙ্গে ওই সব আওয়ামী বলয়ের লোকদের সম্পৃক্ত করার গুঞ্জন চলছে, যা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এমনকি ওয়াসার যেসব কর্মকর্তা আগেও প্রকল্প পরিচালকসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন, এখনো তাঁরা রয়েছেন বহাল তবিয়তে।বরং এক সাবেক মন্ত্রীর প্যাডে দেওয়া আওয়ামী পরিবারের লোক বলে যাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছিল, তাঁদের পদোন্নতির চেষ্টা চলছে। এমনকি ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তও স্থিমিত হয়ে পড়েছে।

গতকাল শনিবার সরেজমিনে খুলনা ওয়াসার স্যুয়ারেজের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, পানির লাইন ও স্যুয়ারেজের লাইনের পাইপের রং পৃথক থাকার কথা থাকলেও সেটি যেমন নেই, তেমনি পানি ও স্যুয়ারেজের পাইপগুলো এতটাই কাছাকাছি বসানো হচ্ছে যে কখনো পাইপ ফেটে গেলে তা যেমন সংস্কার করা দুষ্কর হবে, তেমনি পানি ও ময়লার সংমিশ্রণে ওয়াসার পানি দূষিত হবে এমন আশঙ্কাও নগরবাসীর। আবার শহরের বাড়িগুলোর সেপটিক ট্যাংক থেকে রাস্তার ম্যানহোল উঁচু হওয়ায় অনেক এলাকার সেপটিক ট্যাংকগুলো কোনো কাজে আসবে না।এ জন্য ঠিকাদারের সুবিধা অনুযায়ী এখন প্রতিটি বাড়িতে আলাদা সেপটিক ট্যাংক করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। যেটি নিয়েও নগরীর অনেক এলাকায় রয়েছে মতবিরোধ। দেখা গেছে, স্যুয়ারেজের কাজে অনেক স্থানেই দেওয়া হচ্ছে তিন নম্বর ইট, ম্যানহোলের চেম্বারের লোকেশন, এমনকি ঢালাইও ঠিক নেই অনেক স্থানে। যে পাইপ দিয়ে ময়লাগুলো যাবে, সেগুলোর স্লাবও ঠিক আছে কি না সেটি তদারকি করতেও দেখা যায়নি ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। অনেকটা ঠিকাদারের ইচ্ছামতোই চলছে কাজ।এর ফলে ভবিষ্যতে স্যুয়ারেজের পাইপলাইন দিয়ে মানববর্জ্য মাথাভাঙ্গা বা হোগলাডাঙ্গার টিকরাবন্দ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৪৬ বর্গকিলোমিটারের খুলনা মহানগরীতে ১৮ লাখ মানুষের বসবাস। নগরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকায় খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ হয়। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের মধুমতী নদীর পানি ৩৩ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে এনে রূপসায় পরিশোধনের পর খুলনা নগরে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু পাইপলাইন, ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, এমনকি নগরীর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও পাইপ বসানোর কাজ নিয়েও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। পানি সরবরাহের সেই কাজ যে প্রতিষ্ঠান করেছে পয়োনিষ্কাশনের কাজটিও করছে সেই চায়না জিও কম্পানি। এমনকি আওয়ামী আমলে যেসব কর্তাব্যক্তিরা সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজগুলো করেছেন, তাঁদের নিয়ন্ত্রণেই এখনো চলছে স্যুয়ারেজের চলমান প্রকল্প।

খুলনা ওয়াসার বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হুসাইন শওকত বলেন, ‘আগে যেসব দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে, এখন আর তেমন হবে না। যেসব অসংগতি রয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে তদারকি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্যুয়ারেজের নকশায় যেসব ত্রুটি আছে সেগুলোও পুনর্বিবেচনা করা হবে।’ শুধু খুলনা ওয়াসার পানির পাইপলাইন ও স্যুয়ারেজই নয়, বরং কেসিসির ড্রেনগুলোও অপরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, ‘খুলনা নগরীর স্যুয়ারেজের কাজে নাগরিকরা কতটা উপকৃত হবে সেটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তা ছাড়া রাস্তা, ড্রেন ও স্যুয়ারেজের কাজে কোনো সমন্বয় নেই। এতে জনদুর্ভোগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।’