মাসুম বিল্লাহ ইমরান, খুলনা ব্যুরো: খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম, রাজনৈতিক পক্ষপাত এবং শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান মানিক, পূর্বে কোটচাঁদপুরে একটি হ্যাচারিতে কর্মরত ছিলেন এবং তার বয়স নিয়োগের সময় ৪৫ বছর ১৫ দিন হলেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বয়সসীমা নির্ধারিত ছিল ৪০ বছর। তার পড়াশোনা ফিশারিজ বিষয়ে। নিয়োগ বোর্ডে ৫ সদস্য থাকলেও ডিনসহ দুইজন তার পক্ষে সুপারিশ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন, ক্ষমতাসীন নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাতেন, যা সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধির পরিপন্থী বলে মনে করছেন অনেকে।
যানাযায়, নিয়োগপ্রাপ্ত ওই সহকারি অধ্যাপক, যিনি পূর্বে কোট চাঁদপুর এলাকার একটি হ্যাচারীতে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করতেন, বয়স ছিল ৪৫ বছর ১৫ দিন, যা নিয়োগের সময় ৪০ বছরের মধ্যে থাকার শর্তের বিরোধী। তার পড়াশোনা ফিসারিজ বিষয়ে হলেও পিএইচডি করেছেন এগ্রিকালচার বিষয়ে। আর নিয়োগ পেয়েছেন একোয়াকালচার বিভাগে। একই সাথে নিয়োগ বোর্ডে ৫ সদস্য থাকলেও ডিনসহ মাত্র দুজনের সুপারিশ ছিল তার জন্য। অভিযোগ রয়েছে, তিনি একজন সহকারি প্রফেসর হয়েও সরকারি যানবাহন ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেন। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০২২ এ তিনি নীল দল (আওয়ামী লীগ) কর্তৃক মনোনীত সভাপতি ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন যে, তিনি ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময় ছাত্রলীগকে দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করাতেন এবং তাদের শাস্তি দিতেন। এমনকি, শিক্ষার্থীদেরকে শাসানোর জন্য তিনি নানা ধরনের অমানবিক আচরণ করতেন। ছাত্রদের মতে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তদবিরের মাধ্যমে তাদেরকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করানো হয়েছে। এই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কখনোই সঠিকভাবে আমলে নেওয়া হয়নি। জানা যায়, তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগ দলের প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতেন এবং নৌকা মার্কায় ভোট চাইতেন। তিনি নিয়মিত মিছিল, সভা, এবং ভোট প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতেন, এমনকি নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের প্রচার, প্রচারণায় ছিলেন সক্রিয়। এমন অসংখ্য ছবি, ভিডিও এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে। ৫ আগস্টের পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছিলেন না। থাকতেন গা ঢাকা দিয়ে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আন্দোলনের সময় তিনি ছাত্রলীগকে দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করাতেন এবং তাদেরকে শাসাতেন। এমনকি, খুলনার শেখ বাড়িতে আওয়ামী বিরোধী শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠাতেন। গত বছরের ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলে, তিনি এক শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘হল ছাড়, এখান থেকে বের হওয়ার পর তুমি মরলা না বাঁচলা, সেটা আমার দেখার বিষয় না।’ এই ধরনের আচরণ শিক্ষার্থীদের কাছে অমানবিক এবং অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ জানালেও তিনি এসব বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, এমন অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন গোয়েন্দা সংস্থার ব্যক্তি আসেন, যিনি নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ দলের প্রতি প্রবল অনুরাগী। তিনি নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন এবং তার প্রভাবশালী অবস্থান দিয়ে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়ন চলমান রেখেছে।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান মানিক বলেন, আমি কখনোই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। আমার নিয়োগের সময় বয়স ৪৫ বছরে পার হলেও তা বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ি শিথিল ছিল। আর ওই সময়ে বিশেষ কারণে নৌকায় ভোট চেয়ে থাকতে পারি। আমি কোন সরকারি যানবাহন ব্যবহার করিনা। বিশেষে কাজে ছাড়া। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে কোটচাঁদপুরে একটি ট্রেনিং সেন্টারের প্রিন্সিপ্যাল ছিলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আমি ছাত্রদের দমন-পীড়নের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. নাজমরুল আহসান যোগদান করেছেন ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছেন, এমন অভিযোগ আমার কাছে এখনো আসেনি। তবে অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা তাদের নিরাপত্তা এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, যদি এ বিষয়ে দ্রুত ও সুষ্ঠু পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। যা তাদের শিক্ষাজীবন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
আরও পড়ুন
মোংলা বন্দরে জাহাজ থেকে চুরি করা মালামালসহ তিনজন আটক
এই অ্যাওয়ার্ড শুধু স্বীকৃতি নয়, সকলের জন্য অনুপ্রেরণা : উপাচার্য
কালীগঞ্জে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফল