December 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, October 19th, 2024, 6:26 pm

খেজুর-দুধ-মধুসহ যেসব খাবার রাসুল (সা.) পছন্দ করতেন

নিজস্ব প্রতিবেক

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)। তিনি ও তাঁর পবিত্র জীবনধারা সর্বযুগে সবার জন্য অনুকরণীয়, অনুসরণীয়। তাঁর জীবনধারা, আচার-ব্যবহার সব কিছু আদর্শস্বরূপ। তিনি খাবার গ্রহণেও যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন।
সর্বদা পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতেন। তাঁর প্রিয় খাবারের তালিকায়ও আছে পুষ্টিকর খাবার। আজ আমরা তাঁর প্রিয় খাবারগুলো সম্পর্কে জানব।

খেজুর

আরববাসীর প্রধান খাদ্য খেজুর ও রুটি।
মহানবী (সা.) খেজুর খেতে পছন্দ করতেন। খেজুর সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরা। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে বার্লির এক টুকরা রুটির ওপর একটি খেজুর রাখতে দেখেছি। তারপর বলেছেন, এটিই সালন-মসলা।
’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৩০)

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়ির অধিবাসীরা অভুক্ত।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৩১)

খেজুরে আছে খনিজ লবণ, যা শরীর সতেজ রাখে। এ ছাড়া খেজুর আয়রনসমৃদ্ধ ফল। তাই মহানবী (সা.) প্রসূতি মায়েদেরও খেজুর খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। প্রসূতিদের রক্তের ঘাটতি পূরণে খেজুরের ভূমিকা অপরিসীম।

কিশমিশ

মহানবী (সা.) আঙুর ও কিশমিশ খেতে ভালোবাসতেন। এগুলো কিডনির জন্য খুবই উপকারী। এ ফলে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। কিশমিশ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। এর থেকেও আমরা শরীরের উপকারী শক্তি পেয়ে থাকি। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর জন্য কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হতো এবং তিনি সেগুলো পান করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০০৪

দুধ

দুধ একটি সুষম খাদ্য, যাতে সব পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে দুধ অতুলনীয়। রাসুল (সা.) নিয়মিত দুধ পান করতেন। দুধের উপকারিতা অনেক। ভালো ঘুম, হাড় মজবুত, ত্বক সুন্দর, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা প্রভৃতি কাজে সহায়তা করে দুধ। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘মিরাজের রাতে বায়তুল মাকদিসে আমি দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হলে জিবরাইল (আ.) আমার সম্মুখে শরাব ও দুধের আলাদা দুটি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। জিবরাইল (আ.) বললেন, ‘আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৩১৬৪)

মধু

মধু আল্লাহর বিশেষ নিয়ামতগুলোর একটি। এতে আরোগ্য আছে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫১১৫; মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৫)

মধুর নানা পুষ্টি ও ভেষজ গুণ রয়েছে। এটি অনেক রোগের পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মধু হলো উত্তম ওষুধ।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৯)

সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতাও অনেক।

সারিদ (গোশত, রুটিতে তৈরি খাবার)

সারিদ হলো গোশতের ঝোলে ভেজানো টুকরা টুকরা রুটি দিয়ে তৈরি বিশেষ খাদ্য। মহানবী (সা.) সারিদ খেতে পছন্দ করতেন। তিনি সারিদের প্রশংসা করে বলেন, ‘নারীদের মধ্যে আয়েশার মর্যাদা যেমন, খাদ্যের মধ্যে সারিদের মর্যাদা তেমন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪২৮)

পনির

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তাবুকের যুদ্ধে রাসুল (সা.)-এর কাছে কিছু পনির উপস্থাপন করা হয়। রাসুল (সা.) ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে একটি চাকু দিয়ে সেগুলো কাটেন এবং কিছু আহার করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮১৯)

ঘি মাখা রুটি

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) একদিন বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে বাদামি গমে তৈরি ও ঘিয়ে সিক্ত সাদা রুটি থাকত, তাহলে সেগুলো আহার করতাম।’ আনসারি এক সাহাবি এই কথা শুনে এ ধরনের রুটি নিয়ে আসেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৪০)

জয়তুন

রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা জয়তুন খাও এবং জয়তুনের তেল গায়ে মাখো। কেননা এটি একটি পবিত্র বৃক্ষ থেকে তৈরি।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০০৩; তিরমিজি, হাদিস : ১৮৫১)

সিরকা

জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) তাঁর পরিবারের কাছে সালন কামনা করেন। তাঁরা বলেন, আমাদের কাছে তো সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। মহানবী (সা.)-এর কাছে সেগুলো নিয়ে আসা হলে তিনি তা থেকে খেতে শুরু করে বলেন, ‘সিরকা কতই না উত্তম সালন! সিরকা কতই না উত্তম সালন!’ জাবের (রা.) বলেন, ‘সেদিন থেকে আমি সিরকা পছন্দ করতে শুরু করি।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০৫১)

লাউ

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার একজন দর্জি রাসুল (সা.)-কে খাওয়ার দাওয়াত করেন। আমিও মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সেই দাওয়াতে অংশ নিই। রাসুল (সা.)-এর সামনে বার্লির রুটি এবং গোশতের টুকরা ও কদু (লাউ) মেশানো ঝোল পরিবেশন করা হয়। আমি দেখেছি, রাসুল (সা.) প্লেট থেকে খুঁজে খুঁজে কদু নিয়ে খাচ্ছেন। আর আমিও সেদিন থেকে কদুর প্রতি আসক্ত হয়ে উঠি। (বুখারি, হাদিস : ৫০৬৪)

তরমুজ

তরমুজ মিষ্টিজাতীয় ফল। গরমের দিনে তরমুজ খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) তরমুজের সঙ্গে রাতাব (পাকা তাজা খেজুর) খেতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫১৩৪)

শসা

শসা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এটি শরীর ঠাণ্ডা রাখে। শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট দূর করে। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে শসার সঙ্গে ‘রাতাব’ খেতে দেখেছি। (মুসলিম, হাদিস : ৩৮০৬)

খাসির পায়া

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট খাসির পায়া রান্না করতাম। রাসুল (সা.) কোরবানির ১৫ দিন পরও সেগুলো খেতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫১২২)

মোরগ

জাহদাম (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন আবু মুসা একটি মোরগ নিয়ে আসেন। ফলে উপস্থিত একজন গলার স্বর ভিন্ন করে আওয়াজ করল। আবু মুসা জিজ্ঞেস করলেন, কী হলো তোমার? লোকটি বলল, মোরগকে আমি বিভিন্ন খাবার খেতে দেখে আমার অপছন্দ হওয়ায় শপথ করেছি, কোনো দিন মোরগ খাব না। আবু মুসা তাঁকে বললেন, ‘কাছে আসো। খাওয়ায় অংশগ্রহণ করো। কারণ আমি রাসুল (সা.)-কে মোরগ খেতে দেখেছি। আর তুমি তোমার শপথ ভঙ্গের কাফফারা আদায় করে দেবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫১৯৮,৪৬৬২)

খরগোশের গোশত

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, মাররুজ জাহরান নামক স্থানে আমাদের পাশ দিয়ে একটি খরগোশ লাফিয়ে পড়ে। দৃশ্য দেখে আমাদের সঙ্গীরা খরগোশটিকে ধাওয়া করে, কিন্তু তারা সেটিকে পাকড়াও করতে না পেরে ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। তবে আমি ধাওয়া করে এর নাগাল পাই এবং ধরে হজরত আবু তালহার কাছে নিয়ে আসি। তিনি মারওয়া নামক স্থানে সেটি জবাই করেন। এরপর খরগোশটির ঊরু ও নিতম্ব আমাকে দিয়ে রাসুল (সা.)-এর কাছে পাঠান। রাসুল (সা.) সেগুলো ভক্ষণ করেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসুল কি তা খেয়েছিলেন? তিনি বলেন, গ্রহণ করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ২৪৩৩)

সামুদ্রিক মাছ

সামুদ্রিক মাছে প্রচুর আয়োডিন থাকে, যা শরীরের জন্য খুব দরকারি। মহানবী (সা.) সামুদ্রিক মাছ পছন্দ করতেন। এ বিষয়ে আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)-এর একটি দীর্ঘ হাদিস রয়েছে। হাদিসের শেষাংশে মাছ খাওয়ার বৈধতা নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘খাও। এটি তোমাদের জন্য রিজিক, আল্লাহ পাঠিয়েছেন। আর তোমাদের কাছে কিছু অবশিষ্ট থাকলে আমাদেরও খাওয়াও। মাছটির কিছু অংশ নবী (সা.)-কে এনে দেওয়া হলো। তিনি তা খেলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৩৬২)