গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জারি করা হয়েছে রেড এলার্ট। পানি বিপদসীমা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তাবেষ্টিত ৭ ইউনিয়নের ৪২’শ পরিবারের প্রায় ১৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়ে। আতঙ্কে কাটায় রাত। তারা আসবাবপত্র ও গবাদিপশু সরিয়ে নেয় উঁচু স্থানে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে বাড়িঘর ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলো ও পানিবন্দি পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উজানে ভারতের গজলডোবা, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন এলাকায় গত ৪ অক্টোবর থেকে বিভিন্নভাবে বৃষ্টি ও অতিবৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে ওইসব এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়। উজানের নেমে আসা পানি আর উত্তরের জেলাগুলোর বিভিন্ন এলাকায় দুদিনের বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ৫ অক্টোবর বিকাল ৩ টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার সমতলে প্রবাহিত হলেও তা বৃদ্ধি পেতে পেতে রাত ১২ টায় (বিপদসীমা ৫২.১৫) প্রবাহিত হয় (৫২.৫১) ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাবে এবং বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হবে এ বার্তা দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড আগাম সর্তক বার্তা দিয়ে লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেয়। এদিকে মানুষজনকে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসকগণ রোববার সন্ধ্যায় মাইকিং করে। তবে তিস্তার পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে মানুষজন পানিবন্দি হয়ে পড়ে। অনেকে আসবাবপত্র ও গবাদিপশু সরিয়ে নিতে পারলেও আবার অনেকেই পারে নাই। তারা কোন রকম পানির মধ্যে সরিয়ে নেয়। তবে মানুষজনকে বিপাকে পড়তে হয় ছোট শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, আসবাবপত্র ও গবাদিপশু একসাথে নিরাপদে আশ্রয় নিতে। এসব মানুষজন পারেনি কোন খেতে। যেন তাদেন সুখের সংসার এলোমেলো হয়ে গেলো। আশ্রয় নেওয়াদের আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাঙ্খীগণ খাবার দিয়েছে আবার কেউ শুকনো খাবার কিনে খাচ্ছে। রাস্তা, উচু জায়গায় পলিথিন দিয়ে কোন রকম আছে। আবার অনেকে মাছ জাল দিয়ে মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের মিনার বাজার, বাগডোহরা, বৈরাতী, কচুয়াচর, চরনোহালী, সাংগের বাজার, আলমবিদিতরের হাজীপাড়া, ব্যাংকপাড়া, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনাচর, মটুকপুরচর, চিলাখালচর, খলাইরচর, সাউদপড়া, কুড়িবিশ্বা বাঁধের ধার, উত্তর কোলকোন্দ বাঁধের ধার, দক্ষিণ কোলকোন্দ বাঁধের ধার, গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের বোল্লারপাড়া ও ধামুর মাঝাপাড়ার বাঁধের ধার, গান্নারপাড়, লক্ষীটারী ইউনিয়নের ইচলী, বাঘের হাট, শংকরদহ, কলাগাছি, কাশিয়াবাড়ি, গজঘণ্টা ইউনিয়নের জয়রাম ওজা, ছালাপাক, গাউসিয়া বাজার, মর্নেয়া ইউনিয়নের মর্নেয়ারচরসহ তিস্তাবেষ্টিত চরাঞ্চল ও নিমাঞ্চলের বসবাসরত মানুষজনের বাড়িতে পানি ঢুকে ৪ হাজার ২’শ পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। নোহালী ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ আলী জানান, তার ইউনিয়নে ৮’শ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। লক্ষীটারী ইউপি আব্দুল্লাহ আল হাদি বলেন, তার ইউনিয়নে ১ হাজার ২’শ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। গঙ্গাচড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান দুলু জানান, তার ইউনিয়নে ৬’শ পরিবার ও কোলকোন্দ ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন তার ইউনিয়নে ৮’ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এছাড়া গজঘণ্টা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বকুল মিয়া বলেন তার ইউনিয়নে ৭’শ ও মর্নেয়া ইউপির প্রশাসক মাহমুদুর রহমান জানান তার ইউনিয়নে ৪’শ এবং আলমবিদিতর ইউপির প্রশাসক আবতাবুজ্জামান চয়ন বলেন তার ইউনিয়নে ১’শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানগণ পানিবন্দি পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। পানিবন্দি কোলকোন্দের মনোয়ারুল, জয়নাল, নোহালীর মমিন, লক্ষীটারীর আলম, রাজ্জাক বলেন, আমরা কোন রকম গরু, ছাগল, মুরগী ও কিছু আসবাবপত্র নিয়ে উচু জায়গায় আসি। অনেক জিনিস বাড়িতে রেখে আসি। সবচেয়ে সমস্যা হয়েছে খাবার, থাকা ও গরু, ছাগল নিয়ে। টিউবওয়েল ও পায়খানা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পানি পান করা এবং পায়খানা প্রশাবে হয়েছে সমস্যা। অপরদিকে আলমবিদিতর ও নোহালী ইউনিয়নে গত রোববার সকালে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে ১২’শ পরিবারের বাড়িঘর ও গাছপালা ভেঙে যায়। এ সকল পরিবারও মানিবক জীবন করছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ খুঁটি ও তাদের ক্ষতি হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের উদ্ধার কাজে সহায়তা করে। বিদ্যুতের লোকজনও ক্ষতিগ্রস্থ খুঁটি, তার মেরামত করছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ হাসান মৃধা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ ও পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেন। ঘূর্ণিঝড়ে ও পানিতে অনেক ধান নষ্ট হয়েছে। এদিকে উপজেলা জামায়াতে পক্ষে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়ি মেরামতে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে এবং তাদের খিচুরি রান্না করে খাওয়ানো হয় বলে জানান উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা নায়েবুজ্জামান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ ও পানিবন্দিদের জন্য ২০ মেট্রিকটন চাল ও ২ লক্ষ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
কুড়িগ্রামে টিসিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত
সাপাহারে আবারো এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার
রংপুর জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আগামী ১২ই অক্টোবর রোববার থেকে সাড়ে ৮ লাখ শিশু-কিশোরকে টাইফয়েড টীকা দেয়া হবে