পরিবেশ রক্ষায় সারাদেশের গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
রিট আবেদনটির উপর গত সোমবার ও মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান এবং বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি করেন।
সম্প্রতি তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি ও জনজীবন অতিষ্ঠ হওয়ার মধ্যেও বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হলে জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ গত রবিবার (৫ মে) হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করে।
রুলে সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে (ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ ব্যতীত) ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না; ঢাকা শহর সহ অন্যান্য জেলা এবং উপজেলা শহরে গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না; সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ এর বিধানে গাছ লাগানোর চুক্তিভুক্ত পক্ষকে অর্থ প্রদানের বিধান সংযুক্ত করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না; গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে ৭ দিনের মধ্যে পরিবেশবাদী, পরিবেশ বিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপকদের সমন্বয়ে একটি সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গাছ কাটা বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৭ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার ইস্যু করে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা পরিবেশ অফিসার, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি/সেক্রেটারি এবং সিভিল সার্জনের সমন্বয়ে কমিটি কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না; গাছ কাটা বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৭ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার ইস্যু করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজকল্যাণ অফিসার, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব ল্যান্ড এবং এলজিইডি এর এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারে সমন্বয়ে কমিটি গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না; কমিটি গঠন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সকল বিবাদীগণ নিজ নিজ এলাকায় যাতে কোনো গাছ কাটা না হয় সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
দুই সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালণয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র; দুই সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশল, প্রধান বন সংরক্ষক; সড়ক মহাসড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপিকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
মঙ্গলবার আদালতে শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে ও সরকারের অঙ্গীকার পরিবেশ রক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যত্রতত্র গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যেভাবে রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে গাছ কাটার এক মহা উৎসব চলছে।
মনজিল মোরসেদ, শুনানিতে আরও বলেন, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঢাকা শহরে যে পরিমাণ গাছপালা থাকা দরকার তা দিন দিন কমছে এবং সম্প্রতিকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। যার কারনে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। অন্যদিকে সামাজিক বনায়ন চুক্তিতে সারাদেশে লাগানো গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। যা বন্ধ না হলে বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে ও মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
পৃথক মামলায় আমু-আনিসুলসহ ৭ জনকে গ্রেফতার দেখানো হলো
হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো তুরিন আফরোজকে
সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন