March 19, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, March 18th, 2025, 2:18 pm

গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩০ জন, বেশিরভাগ নারী ও শিশু

এএফপি ও রয়টার্স:

গাজা উপত্যকার বিভিন্ন জায়গায় আজ মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩০ জনে পৌঁছেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান মোহাম্মেদ জাকুত এএফপিকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৩৩০ জনের মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত করেছে। তাদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু। কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।

গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনায় অচলাবস্থার মধ্যে এ হামলা হলো।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার উত্তরাঞ্চল, গাজা সিটি, দেইর আল বালাহ, খান ইউনিস, রাফাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, নিহত মানুষের অনেকেই শিশু।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা বেশ কয়েকটি জায়গাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ পর্যন্ত এ হামলা অব্যাহত থাকবে এবং তা শুধু বিমান হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের স্বজনেরা আহাজারি করছেন
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের স্বজনেরা আহাজারি করছেনছবি: এএফপি

গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়। ওই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রচেষ্টা চালানো হলেও তা ব্যর্থ হয়। তখন থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা ছোট দলকে লক্ষ্য করে নিয়মিত ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছিল। তবে আজকের হামলার মাত্রা অনেক বেশি ছিল।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস বলছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভন্ডুল করেছে। আর এর মধ্য দিয়ে গাজায় এখনো আটক থাকা ৫৯ জনের ভাগ্য অনিশ্চিত করে তুলেছে তারা।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের অভিযোগ, হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে বারবার অস্বীকৃতি জানাচ্ছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘এখন থেকে ইসরায়েল সামরিক শক্তি বাড়িয়ে হামাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বলেন, বিমান হামলা চালানোর আগে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা হামাসের মাঝারি পর্যায়ের কমান্ডার ও নেতৃত্বস্থানীয় কর্মকর্তা এবং সংগঠনটির মালিকানাধীন অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসরায়েল ও হামাসের আলোচক দল এখন দোহায় অবস্থান করছে। প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির আওতায় গাজায় জিম্মি থাকা ৩৩ ইসরায়েলি ও ৫ থাই নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে হামাস। এর বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট ইসরায়েল একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে গাজায় এখনো থাকা ৫৯ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসকে চাপ দিচ্ছে। এ যুদ্ধবিরতির আওতায় মুসলিমদের রোজার মাস ও এপ্রিল মাসে ইহুদিদের পাসওভার উৎসবের ছুটির পর পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে।

অন্যদিকে হামাস চাইছে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ অবসানের জন্য আলোচনায় বসতে। তারা চায়, মূল যুদ্ধবিরতির শর্তের সঙ্গে সংগতি রেখে ইসরায়েলি বাহিনীকে পরিপূর্ণভাবে গাজা থেকে প্রত্যাহার করা হোক।

হামাস বলেছে, ‘আমাদের দাবি, মধ্যস্থতাকারীরা চুক্তি লঙ্ঘন এবং তা ভন্ডুল করতে নেতানিয়াহু ও ইহুদিবাদী দখলদারদের সম্পূর্ণরূপে দায়ী করুক।’

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত হওয়া বাড়ির ধ্বংসাবশেষে প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজে বেড়াচ্ছেন এক নারী
ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত হওয়া বাড়ির ধ্বংসাবশেষে প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজে বেড়াচ্ছেন এক নারীছবি: এএফপি

গত জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে চলতে ব্যর্থতার জন্য দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করেছে। প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলাকালে বেশ কিছু বাধাবিপত্তি দেখা গেছে। তবে তা পুরোপুরি লড়াইয়ে রূপ নিতে পারেনি।

গাজায় ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। বিভিন্ন সময়ে তারা হামাসকে হুমকি দিয়েছে, জিম্মিদের ফেরত দিতে রাজি না হলে আবারও তারা লড়াই শুরু করবে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আজ মঙ্গলবার ভোরে হওয়া ওই হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা রয়টার্সকে বলেছে, গাজার অসংখ্য জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে থাকছে।

চিকিৎসাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, গাজা সিটির একটি ভবন এবং মধ্যাঞ্চলীয় গাজার দেইর আল বালাহ এলাকার কমপক্ষে তিনটি বাড়িতে হামলা হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস এবং রাফার বিভিন্ন জায়গাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ১৫ মাসের যুদ্ধে গাজা উপত্যকা অনেকটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছ। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েলের হিসাব অনুসারে এ হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন এবং ২৫১ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।