দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান ইসরায়েলি গণহত্যামূলক যুদ্ধের ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা উপত্যকায় শীত মৌসুমের তীব্র আবহাওয়া ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, এমন সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যেও প্রয়োজনীয় মাত্রায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
সংস্থাটির কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ লাজ্জারিনি বলেন, আরও বৃষ্টি মানেই আরও দুর্দশা, হতাশা এবং প্রাণহানি। তিনি জানান, গাজার মানুষ বর্তমানে জীর্ণ-শীর্ণ পুরোনো তাঁবু ও ধ্বংসস্তূপের মাঝেই কোনোমতে জীবন ধারণ করছে।
লাজ্জারিনি আরও বলেন, যদি পর্যাপ্ত সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে ইউএনআরডব্লিউএ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের মানবিক কার্যক্রম বহুগুণ বাড়াতে সক্ষম হবে।
এদিকে পৃথক এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি সরকার জানিয়েছে, তীব্র শীত ও প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে বাস্তুচ্যুত মানুষের জরুরি মানবিক চাহিদা পূরণে গাজায় প্রায় দুই লাখ প্রিফেব্রিকেটেড আবাসন ইউনিট প্রয়োজন।
সরকারের অপারেশন রুম জানিয়েছে, ঝড়-বৃষ্টিসহ বর্তমান বৈরী আবহাওয়ার কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবু পানিতে তলিয়ে গেছে এবং বহু তাঁবু উড়ে গেছে। এতে গাজাজুড়ে মানবিক জরুরি পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, গত শনিবার থেকে গাজার ওপর দিয়ে একটি মেরু নিম্নচাপ প্রবাহিত হচ্ছে। চলতি শীত মৌসুমে এটি তৃতীয় নিম্নচাপ, যার প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত ও তীব্র বাতাস বইছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গাজার ফিলিস্তিনিরা একদিকে প্রতিকূল আবহাওয়া, অন্যদিকে ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। আগের দুটি আবহাওয়াগত নিম্নচাপের সময় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ধসে পড়ে এবং বন্যায় হাজার হাজার বাস্তুচ্যুতের তাঁবু ধ্বংস হয়ে যায়। এতে চার শিশুসহ অন্তত ১৭ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান।
এই আবহাওয়াগত পরিস্থিতি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে, বিশেষ করে যারা জরাজীর্ণ তাঁবু কিংবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস করছেন। এসব ভবন ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে বারবার ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় এখন পর্যন্ত ৭১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এতে আহত হয়েছে আরও অন্তত ১ লাখ ৭১ হাজার ২০০ জন। এই হামলায় পুরো গাজা উপত্যকা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এনএনবাংলা/এফএইচ

আরও পড়ুন
স্পেনে পৌঁছানোর চেষ্টায় এক বছরে ৩ হাজারের বেশি অভিবাসীর মৃত্যু
এনসিপিতে যোগ দিয়ে মুখপাত্র হলেন আসিফ, করবেন না নির্বাচন
জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশিদ