ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও চলমান যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইউরোপের বিভিন্ন বড় শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন ও পর্তুগালসহ কয়েকটি দেশে শনিবার এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। রোববার (৫ অক্টোবর) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্সেলোনায় বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছিল। তবে ইতালির রোম ও পর্তুগালের লিসবনে বিক্ষোভের আহ্বান আসে গাজামুখী ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’কে ইসরায়েলি বাহিনী ভূমধ্যসাগরে আটকে দেওয়ার পর।
ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙার প্রচেষ্টা হিসেবে নৌবহরটি বার্সেলোনা থেকে রওনা দিয়েছিল। ওই নৌবহরে থাকা ৪৫০ মানবাধিকারকর্মী ও সহযাত্রীদের মধ্যে ৪০ জনেরও বেশি স্পেনের নাগরিক, যাদের মধ্যে বার্সেলোনার এক সাবেক মেয়রও রয়েছেন।
এর আগে, শুক্রবার ইতালিতে গাজার জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে এক দিনের সাধারণ ধর্মঘটে প্রায় ২০ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে স্পেনে ফিলিস্তিনপন্থী সমর্থন ক্রমেই বেড়েছে। পাশাপাশি দেশটির সরকার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করেছে।
সম্প্রতি স্পেনে অনুষ্ঠিত এক সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলি দলের অংশগ্রহণ ঘিরেও বিক্ষোভ হয়, যা প্রতিযোগিতার আয়োজন ব্যাহত করে। তখন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ গাজায় চলমান যুদ্ধকে ‘জাতিগত হত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে আন্তর্জাতিক সব ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে ইসরায়েলি দলকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান।
ইউরোপজুড়ে যখন এসব বিক্ষোভ চলছে, তখন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস জানিয়েছে, তারা গাজা যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব আংশিকভাবে মেনে নিতে রাজি।
দুই বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত গাজায় ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো উপত্যকা।
বার্সেলোনা টাউন হল কর্তৃপক্ষের হিসাবে, শনিবারের বিক্ষোভে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন।
৬৩ বছর বয়সী বিক্ষোভকারী মারিয়া জেসুস পাররা বলেন, “১৯৪০-এর দশকে ইউরোপে যেমন একটি জাতিহত্যা দেখেছিলাম, তেমন আরেকটি এখন আমাদের চোখের সামনে ঘটছে। কেউ আর বলতে পারবে না যে তারা জানতেন না সেখানে কী ঘটছে।”
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে একটি সিনাগগে প্রাণঘাতী হামলার পর পুলিশ লন্ডনে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ স্থগিতের অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে নিষিদ্ধ সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সমর্থনে আয়োজকেরা বিক্ষোভ করেন। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সেখান থেকে অন্তত ৪৪২ জনকে আটক করা হয়; তবে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সংখ্যা প্রায় ৫০০।
গত বৃহস্পতিবার ম্যানচেস্টারের ওই সিনাগগে হামলায় দুজন নিহত হন এবং পুলিশ পরে হামলাকারী সিরীয় বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে গুলি করে হত্যা করে। হামলার পর লন্ডনে মসজিদ ও সিনাগগ ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বিক্ষোভ আয়োজকেরা বলেছেন, তারা পুলিশের অনুরোধ অগ্রাহ্য করেছেন কারণ বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছিল হামলার আগেই। ফিলিস্তিনপন্থী সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদেই এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
আরও পড়ুন
বেবি পাউডারে ক্যান্সারের উপাদান, জনসন অ্যান্ড জনসনকে ৯৬ কোটি ডলার জরিমানা
সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুরের ১৩ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ জব্দ
স্ত্রী ও ছেলেসহ সাবেক মন্ত্রী রুহুল হকের ৫৬টি ব্যাংক হিসাব জব্দ