গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ধূম্রজাল সৃষ্টির পর এবার পুলিশের পক্ষ থেকে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য, এক যুবককে দেশী অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করছিলেন হামলাকারীরা। সেই দৃশ্য ধারণ করায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় সাংবাদিক তুহিনকে।
প্রাথমিক তদন্তের পর শুক্রবার (৮ জুলাই) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ উত্তর) মো. রবিউল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
এ পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেন, চাঁদাবাজি নয়, বাদশা নামে এক যুবকের ওপর হামলার ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় খুন হয়েছেন তুহিন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে। পরে হত্যার সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অভিযোগ ওঠে, রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজরা তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
এ ঘটনার জেরে ধূম্রজাল সৃষ্টির পর পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি খোলাসা করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায় এক নারী রাস্তায় এক যুবকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করছেন। ওই সময় এক যুবক ওই নারীকে আঘাত করেন। আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে ওই নারীর পূর্ব পরিচিত ৪-৫ জন চাপাতিসহ এসে ওই যুবককে কোপাতে থাকে। যুবকটি দৌড়ে পালানো চেষ্টা করে। পরে কি ঘটেছে তা আর সিসি ক্যামেরায় পাওয়া যায়নি। আমরা খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারি হামলার শিকার যুবকের নাম বাদশা মিয়া (৩৫)। তিনি শহীদ তাজউদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার বাড়ি বাসন ভোগড়া বাইপাস এলাকায়।
মো. রবিউল ইসলাম বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি, কোপানোর ওই ঘটনাটি সাংবাদিক তুহিন তার মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। পরে এই ঘাতকরা তুহিনকে চার্জ করেন। তিনি এই ভিডিও কেন করেছে তা জানতে চান এবং এটা ডিলিট করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এরপর তুহিন যখন ডিলিট করতে রাজি হননি কিংবা ভিডিওর বিষয়টি অস্বীকার করেন, তখন ওই অবস্থাতেই তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে এবং তাকে মেরে ফেলে হামলাকারীরা।
সিসিটিভি ফুটেজে নারীসহ থাকা যে যুবকের সঙ্গে হামলাকারীদের ধাস্তাধস্তি হয়েছিল পরে তিনি নিরুদ্দেশ যান, ওই ব্যক্তি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার নাম বাদশা মিয়া। পুলিশ কর্মকর্তা বাদশা মিয়ার তথ্য দিয়ে বলেন, ‘ওই মেয়েসহ একটা টিম আছে। যারা ওর কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর নগরের বাসন, ভোগরা ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি চক্র আছে, যারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। সিসিটিভির ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে, তারা সবাই ছিনতাইকারী দলের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ভিডিওতে যে নারীকে দেখা গেছে, তিনিও ওই চক্রের সদস্য হতে পারেন। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে ওই চক্র ছিনতাই করে থাকে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার রবিউল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের ওই মেয়ে ছিনতাইকারী দলের সদস্য। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে এরই মধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।’
এদিকে এ ঘটনার কিছু সময় আগে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি দোকানে বসে ছিলেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান ও তার সহকর্মী শামীম হোসেন।
ওই ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিক শামীম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আমরা দুজন একদিক থেকে অন্য পাশে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ঠিক এমন সময় একজন নারী ও পুরুষ আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যান। এমন সময় কয়েকজন লোক দেশি ধারালো অস্ত্র নিয়ে বলতে থাকে, “এই পাইছি, তোরা আয়।” ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালানো চেষ্টা করেন। তখন তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাকে ধাওয়া করেন। তখন তুহিন (সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন) মুঠোফোন বের করে তাদের পেছনে দৌড় দেন। পরে আমি তুহিনকে খুঁজতে এগিয়ে যাই। অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা হঠাৎ থেমে গিয়ে পেছনে তাকায়। তুহিন তখন দৌড়ে চায়ের দোকানে ঢুকে যায়। ঠিক ওই মুহূর্তে ওরাও চায়ের দোকানে ঢুকে ওকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। আমি চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশের গাড়ি খুঁজতে থাকি। কোনো গাড়ি দেখতে না পেয়ে বাসন থানার ওসিকে ফোন করি। কিছু সময় পর পুলিশ আসে।’
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শুক্রবার সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিক তুহিনের মরদেহ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য রাখা ছিল। সেখানে তার স্বজন এবং দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের সম্পাদক খায়রুল আলম রফিক সহর্কমীরা উপস্থিত আছেন।
নিহতের বড় ভাই মো. সেলিম বলেন, আমার ভাইকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।
দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের খায়রুল আলম রফিক বলেন, ঘটনার ১৫ ঘণ্টা অতিক্রম হলেও এখনও খুনিদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এটি দুঃখজনক।
এনএনবাংলা/আরএম
আরও পড়ুন
ছাত্রদলে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পেলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী!
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারে ৫০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কারের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
২৪ ঘন্টায় সারাদেশে গলা কেটে-কুপিয়ে চার হত্যা