ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (আইটিজেপি) নামক একটি মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, তারা সিঙ্গাপুরের অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে গ্রেপ্তারের জন্য একটি ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছে।
এর আগে গোতাবায়া রাজাপাকসেকে তার দেশের অর্থনীতির পতনের কারণে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয় এবং চলতি মাসের শুরুতে তিনি সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান।
২০০৯ সালে শেষ হওয়া শ্রীলঙ্কার আলোচিত এই গৃহযুদ্ধের সময় তিনি প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন।
রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকা ভিত্তিক আইটিজেপি নামক মানবাধিকার সংগঠনটি জানিয়েছে, তাদের আইনজীবীরা রাজাপাকসেকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের অনুরোধ জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, রাজাপাকসে গৃহযুদ্ধের সময় জেনেভা কনভেনশনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছেন ‘এবং সার্বজনীন আইনগত অধিকার অনুযায়ী সিঙ্গাপুর দেশিয় বিচারব্যবস্থা অনুসারে এই ধরনের অপরাধের বিচার করতে পারে।’
আইটিজেপি’র নির্বাহী পরিচালক ইয়াসমিন সুকা বলেন,‘অর্থনৈতিক মন্দার ফলে সরকারের পতন ঘটেছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার সংকট সত্যিই তিন দশক বা তারও বেশি সময় ধরে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য কাঠামোগত দায়মুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
জাতিসংঘের অনুমান অনুসারে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধে এক লাখের মানুষ নিহত হয়েছিল। প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেলের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র লড়াইয়ের শেষ মাসগুলোতেই কমপক্ষে ৪০ হাজার জাতিগত সংখ্যালঘু তামিল বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
তামিল টাইগার বিদ্রোহীরা জাতিগত সংখ্যালঘু তামিলদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য লড়াই করেছিল। দেশের জাতিগত সিংহল সংখ্যাগরিষ্ঠরা গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং তার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসেকে যুদ্ধ জয়ের কৃতিত্ব দেয়।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তের প্রচেষ্টা রাজাপাকসে সরকারের নেতারা অনেকাংশে দমন করে।
গোতাবায়া রাজাপাকসে এই মাসের শুরুর দিকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর, আইন প্রণেতারা রনিল বিক্রমাসিংহেকে তার প্রেসিডেন্টের মেয়াদের অবশিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত করেন।
বিক্রমাসিংহে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার অজুহাতে ক্ষমতায় বসা মাত্রই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। তার শপথ নেয়ার একদিন পরই কয়েকশ’ সশস্ত্র সেনা প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভকারী দলের ওপর হামলা চালায় ও লাঠি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণ করে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহেকে অবিলম্বে সেনা ও পুলিশকে বলপ্রয়োগ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় গুরুতর অর্থনৈতিক সঙ্কট বিরাজ করছে। দেশটির দেশটির ২২ মিলিয়ন মানুষ ওষুধ, জ্বালানি ও খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবের সঙ্গে লড়াই করছে। গত দুই দশকের বেশির ভাগ সময় ধরে দেশ শাসনকারী রাজাপাকসে রাজনৈতিক রাজবংশের বিরুদ্ধে কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ চলছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বিক্রমাসিংহে সম্প্রতি বলেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে বেলআউট আলোচনা শেষ হওয়ার কাছাকাছি।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
কার দিকে, কেন তেড়ে গিয়েছিলেন তামিম
দাবানলে পুড়ছে হলিউড হিলস
জামায়াতে আমিরের সঙ্গে একান্ত বৈঠক প্রধান উপদেষ্টার