November 24, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, November 24th, 2025, 5:25 pm

গ্রামীণফোনে ভারতীয়দের আধিপত্যের অভিযোগ: ১৩ বছরে ছাঁটাই ৩,৩৬০ বাংলাদেশি কর্মী

 

দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনে (জিপি) ভারতীয় নাগরিকদের প্রভাব ও নিয়োগ-বৈষম্য নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৩ বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩ হাজার ৩৬০ বাংলাদেশি স্থায়ী কর্মীকে ছাঁটাই করলেও, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ধারাবাহিকভাবে ভারতীয় নাগরিকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে কর্মীদের অভিযোগ। এতে তথ্য পাচার, মুদ্রা পাচার, কমিশন বাণিজ্য ও সেবার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

শীর্ষ পাঁচ পদে ভারতীয় কর্মকর্তা

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বর্তমানে গ্রামীণফোনের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বস্থানীয় পদে রয়েছেন ভারতীয় নাগরিকরা। তারা হলেন—চিফ টেকনোলজি অফিসার (সিটিও) জয় প্রকাশ, চিফ ইনফরমেশন অফিসার (সিআইও) নিরঞ্জন শ্রীনিবাসান, চিফ প্রকিউরমেন্ট অফিসার (সিপিও) ভাঙ্গু কাওস্টুভ, হেড অব সোর্সিং কুসতাভ এবং প্রকৌশল বিভাগের প্রধান শ্রীভাব। কোম্পানির প্রযুক্তি ও তথ্যভাণ্ডার এ কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে বলে অভিযোগ সূত্রের।

বাংলাদেশি কর্মীদের কাজ আউটসোর্সিং

ছাঁটাই হওয়া কর্মীরা জানান, তাঁদের দায়িত্বগুলো আউটসোর্স করা হয়েছে ভারতীয় মালিকানাধীন দুই প্রতিষ্ঠান—জেনেক্স ও উইথপ্রো-কে। অভিযোগ রয়েছে, অন্য দেশের যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করলেও নিয়োগে প্রাধান্য পাচ্ছেন শুধু ভারতীয়রা। এ নিয়ে প্রশ্ন করায় অনেক কর্মী রোষানলে পড়েন, এমনকি চাকরিও হারান।

বকেয়া বেতন-পাওনা এখনও পরিশোধ হয়নি

ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের দাবি, গ্রামীণফোনের বিভিন্ন অজুহাতে যাদের অপসারণ করা হয়েছে, তাঁদের পাওনা টাকার বড় একটি অংশ এখনও পরিশোধ করা হয়নি। বকেয়া আদায়ের আন্দোলনে পুলিশি হামলার অভিযোগও রয়েছে। একজন সাবেক কর্মী জানালেন, “১৩ বছরে যারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন, অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। হতাশায় গত এপ্রিলেই রাজিব নামে একজন মারা গেছেন।”

২০২০-২০২১: ‘লকআউট’, শ্রমবিভাগ ও আদালতে দীর্ঘ লড়াই

২০২০ সালের ৩১ মে ১৮০ স্থায়ী কর্মীকে ‘লক আউট’ করে গ্রামীণফোন। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর কর্মীদের কাজে পুনর্বহালের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপুট উত্থাপন করে গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (জিপিইউ)। কিন্তু তখন প্রতিষ্ঠানে একাধিক ইউনিয়ন রয়েছে যুক্তি দেখিয়ে জিপিইউয়ের আপত্তি খারিজ করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি একই আপত্তি শ্রম অধিদপ্তরের সালিশি শাখায় উত্থাপন করে ইউনিয়ন বলে, গ্রামীণফোন শ্রম আইন ভঙ্গ করে ১৮০ কর্মীকে কাজ থেকে বিরত রেখেছে। একই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রম অধিদপ্তর ডিসপুট খারিজ করে দেয়। এরপর বিষয়টি গড়ায় হাইকোর্টে। অধিদপ্তরের খারিজের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে ভুক্তভোগী কর্মীদের ইউনিয়ন। ওই বছরের ২০ জুন রাতে ১৫৯ জন স্থায়ী কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

ভারতীয়দের দীর্ঘদিনের প্রাধান্য—অভিযোগ কর্মীদের

কর্মীরা জানান, এক যুগের বেশি সময় ধরে গ্রামীণফোনে ভারতীয় কর্মকর্তাদের আধিপত্য চলছে। গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বও পালন করেছেন। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রধান নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিবেক সুদ। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রধান নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রিজভী শেঠি। ২০১৮ সালে হেড অব প্রোডাক্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সৌরভ প্রকাশ। প্রধান নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দিলীপ কুমার। সিটিও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যোগেশ। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হেড অব সার্ভিসে ছিলেন হিতেষ সুদ। হেড অব কালেকশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শরবোজিৎ সিং। জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন রবিন্দ্র শিখর।

কর্মীদের দাবি: “পাওনা পরিশোধ করুন, নইলে আন্দোলন কঠোর হবে”

চাকরিচ্যুত ও বকেয়া আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাদাত মো. শোয়েব বলেন— “আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করছি। আমাদের ওপর হামলাও হয়েছে। অবিলম্বে পাওনা পরিশোধ না করলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”

গ্রামীণফোনের ব্যাখ্যা

গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটারনাল কমিউনিকেশন আংকিত সুরেকা অভিযোগ নাকচ করে বলেন— “গ্রামীণফোন দেশের সব আইনকানুন ও বিধিবিধান মেনে ব্যবসা পরিচালনা করে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো সঠিক নয়। গ্রামীণফোনের কিছু সাবেক কর্মী চাকরিসংক্রান্ত নানাবিধ দাবিদাওয়া নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে একটি প্রচার চালাচ্ছেন। আমাদের জানা মতে তাদের বেশিরভাগ কয়েক বছর আগেই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যান এবং আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য গ্রহণ করেন।”

তিনি আরো জানান, “তারা যে দাবিগুলো তুলেছেন সেগুলো বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। বিচারিক ব্যবস্থার প্রতি গ্রামীণফোন শ্রদ্ধাশীল। তাই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতেই এসব বিষয়ের নিষ্পত্তি হবে বলে বিশ্বাস করে গ্রামীণফোন।”

নিয়োগে ভারতীয়দের প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণফোন বৈশ্বিক মানদণ্ড ও সুশাসনের নিয়ম মেনে কয়েক ধাপের বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে।”

এনএনবাংলা/