August 23, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, August 23rd, 2025, 2:20 pm

গ্রাহকের ২০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে মুরাদনগরের ‘দানিক’

আবুল কালাম আজাদ,মুরাদনগর (কুমিল্লা)সংবাদদাতাঃ

দরিদ্র নিরসন ও কর্মসংস্থার (দানিক)’র পরিচালক পর্ষদ ও কর্মকর্তাগন গ্রাহকের প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) দুপুরে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুুল কালাম আজাদ’র উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভোক্তভোগী গ্রাহরা ওই অভিযোগ তুলে ধরেন।

বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দানিক’র পরিচালকগন গ্রাহকের ভয়ে এলাকায় আসতে পারতনা। তাদের অনুপস্থিতিতে গ্রাহকরাও টাকা পাচ্ছেনা। আমি গ্রাহক সমাবেশ ডেকে, নিজ উদ্যোগে রুহুল আমিন খোকনসহ পরিচালনা পর্ষদের লোকজনকে গ্রাহকদের মুখোমূখী করে টাকা পরিশোধের শর্তে এলাকায় থাকার সুযোগ দেই। গত কোরবানী ঈদের পর গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। মাসের পর মাস অতিবাহিত হতে থাকলেও গ্রাহকদের টাকা পরিশোধের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উপরন্ত রুহুল আমিন খোকন ধামঘর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ সৃজন করে এলাকায় প্রভাব খাটাচ্ছে। আমার ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন করতে আমার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করি নাই বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি ওই এনজিও থেকে কথনো ঋণ নেইনি। দানিক’র সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততাও নেই। ভোক্তভোগী গ্রাহকরা গত বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে পরমতলা ইদ্রিসিয়া ফাজেল মাদ্রাসা মাঠে ভোক্তভোগীরা সমাবেশ ও মানববন্ধন করে। আজ (২২ আগস্ট) শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের নিকট টাকা ফেরতের আবেদন জানাচ্ছেন।

এসময় দেবীদ্বার উপজেলার গজারিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম সরকার’র স্ত্রী শাহিনা আক্তার জানান, মাসিক ১০ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেয়ার কথা কথা বলে ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট ৫ লক্ষ টাকা জমা নেয়, মুরাদনগর উপজেলার পরমতলা গ্রামের শাহজাহানের স্ত্রী রেহানা বেগম জানান, ২০১৪ সালের ৩ জানুয়ারী ৫ বছর মেয়াদে দ্বিগুণ লভ্যাংশ দেয়ার কথা বলে দানিক তার থেকে ৫ লক্ষ টাকা জমা নেয়। ৫ বছর মেয়াদ শেষ হয়ে আরো ৫ বছর শেষ হলেও লভ্যাংশ থাক দুরের কথা মূল টাকাই পাচ্ছিনা। অফিসের সাইন বোর্ড খুলে ওরা পালিয়েছে। কামাল হোসেন ভ‚ইয়া বলেন, আমারন পরিবার থেকে ২৫ লক্ষ টাকা নিয়ে দানিক পালিয়েছে। এছাড়াও রাসেদা বেগম, সালমা আক্তার, হাছিনা আক্তার একই অভিযোগ করেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে পরমতলা সোনালী ব্যাংক শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, দানিক’র লোভনীয় প্রস্তাবে ২০১০ সালে ব্যাংক থেকে গ্রহকদের টাকা উত্তোলনের হিড়িক পড়ে, এক পর্যায়ে পরমতলা শাখাটি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এখন গ্রাহকরা ভুলের মাসুল দিচ্ছে।

দানিক’র প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমীন খোকন, সভাপতি সাদেক হোসেন, সাধারন সম্পাদক ফজলুল হক মাস্টার, মৎস বিভাগের পরিচালক বশির মাস্টার, পরিবহন পরিচালক মোসলেম সরকারসহ অনেকের সাথে মোবাইলে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।

তবে দানিক’র পরিচালনা পর্ষদ সদস্য সাইফুল ইসলাম ভুৃলু জানান, ২০১০ সালে মুরাদনগর উপজেলা সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে দানিক বহুমূখী সমবায় সমিতির কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে দেবীদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় সহশ্রাধীক অতিক্রম করে। তাদের টাকায় মৎস খামার, পরিবহন সেক্টর তৈরী, জমি বেচা কেনা, পোলট্রি ও ডেইরী ফার্মসহ নানামূখী প্রকল্পের কাজ শুরু করে। গ্রাহদের কাছেও প্রায় আড়াই কোটি টাকা আটকে যায়। ২০১৫ সাল থেকে ভাটার দিকে যেতে খাকে। গ্রাহরা টাকার জন্য অফিসে ভীড় করতে থাকে। এক পর্যায়ে অফিস বন্ধ করে দানিকের পরিচালকবৃন্দ অফিস বন্ধই না, অফিসের সাইনবোর্ড খুলে পালিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দানিক’র পরিচালক জানান, দানিক পরিচালকবৃন্দ প্রথম প্রথম শর্তানুযায়ী গ্রাহকদের প্রতি এক লক্ষ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা প্রদান করেন, এ ধারা বেশীদিন চালাতে পারেনি। পরিচালক পর্ষদের বেতন ভাতা ছিল অসঙ্গতিপূর্ণ, তাদের সকালের নাস্তা আনা হত কুমিল্লার ভিআইপ রেস্তোরা থেকে। বিলাসী জীবন যাপন ছিল তাদের অহঙ্কারী। মৎস, ডেইরী, পোল্ট্রি, পরিবহন সেক্টরে লস আসতে শুরু করে। জমি কেনায় বিপুল পরিমান পূঁিজ আটকে যায়, গ্রাহরা প্রায় আড়াই কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আটকে দেয়। জমি বিক্রি করতে না পারায় আয় কমলেও গ্রাহকদের টাকা নিয়মিত পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ২০১৫ সাল থেকে অফিস বন্ধ করে তারা পালিয়ে যায়। বিগত আ’লীগ সরকারের আমলে তারা জমি বিক্রি করে তাদের টাকা তুলে নেয়।

সংবাদ সম্মেলনে ভোক্তভোগী গ্রাহক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, আবুল কাশেম, মোখলেস মীর, আব্দুল হক মূন্সী, মো. এলাহী বক্স, সফিকুল ইসলাম, মোখলেছুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ।

মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদুর রহমান বলেন, টাকা আত্মসাৎতের বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।