গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী উৎসব নৌকাবাইচ চার দশক পর আবারও প্রাণ ফিরে পেল নাটোরের চলনবিলে। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশা নদীতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত হয় এই প্রতিযোগিতা। ‘নদী দূষণ রোধ করি, নির্মল বাংলাদেশ গড়ি’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এ নৌকাবাইচ ঘিরে নদীর দুই তীরে নেমেছিল লাখো মানুষের ঢল। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ মিলে প্রায় দুই লাখ মানুষ ভিড় জমায় নদীর দুই পাড়ে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে দর্শকদের উল্লাস, ঢাক-ঢোল আর বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজে মুখর হয়ে ওঠে পুরো বিলশা নদী। বৈঠার তালে তালে মাঝিদের গান আর স্লোগান প্রতিযোগিতাকে রূপ দেয় উৎসবে।
নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার ২১টি নৌকা থেকে বাছাই করা ১২টি নৌকা অংশ নেয় প্রতিযোগিতায়। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে ‘নিউ একতা এক্সপ্রেস’ চ্যাম্পিয়ন হয়। রানারআপ হয় ‘বাংলার বাঘ’ এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে ‘আল মদিনা’। বিজয়ীদের হাতে যথাক্রমে চ্যাম্পিয়ন দলকে মোটরসাইকেল, রানারআপ দলকে রেফ্রিজারেটর ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলকে এলইডি টেলিভিশন তুলে দেন অতিথিরা।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, “চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ দীর্ঘ ৪০ বছর পর পুনর্জীবিত হলো। নৌকাবাইচ শুধু প্রতিযোগিতা নয়, এটি নতুন প্রজন্মকে সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন নিয়ে প্রগতিশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এ আয়োজন গ্রামীণ সংস্কৃতির পুনর্জাগরণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”
জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন বলেন, “দীর্ঘ চার দশক পর চলনবিলের মূলপয়েন্টে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হলো। নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ, র্যাব, সেনা, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেছেন।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল হায়াত বলেন, “নৌকাবাইচ আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। আমরা চাই আগামী প্রজন্মও এই আনন্দ উৎসব উপভোগ করুক। বৈঠার তালে নদীর ঢেউ আর প্রায় দুই লাখ দর্শকদের উল্লাসে বিলশা নদী রূপ নিল গ্রামীণ বাংলার উৎসবের এক অনন্য রূপে।”
ইউএনও ফাহমিদা আফরোজ বলেন, “এবারের নৌকাবাইচ কেবল প্রতিযোগিতা নয়, এটি চলনবিলের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার এক মহৎ উদ্যোগ।”
নৌকাবাইচকে ঘিরে নদীর দুই তীরে বসেছিল মেলা। স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকজ আয়োজন প্রতিযোগিতার আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
গুরুদাসপুর উপজেলা থেকে নৌকাবাইচ দেখতে আসা জাহিদ হাসান (৭৫) বলেন, “ছোটবেলা থেকেই নৌকাবাইচ দেখে আসছি। আগে এটি ছিল গ্রামের মানুষের সবচেয়ে বড় উৎসব। আবার তা ফিরে আসায় আমরা ভীষণ আনন্দিত।”
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ডিআইজি মো. শাহজাহান আলী, নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রধান শামীম হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল হায়াত, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট,আসমা খাতুন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব আরিফ হোসেন, গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা আফরোজ,জেলা ক্রীড়া অফিসার এস এম রাকিবুল ইসলামসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন
ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভোটার সমাবেশ ও গণসংযোগ
বড়লেখা সীমান্তে বিএসএফের পুশইনকৃত ২০ রোহিঙ্গাসহ আটক-২১
মুছাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের গেইটে হাঁস মুরগি হাট: শিক্ষক,শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ চরমে