রাজধানীর চানখারপুলে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেল ৩টার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার অবশিষ্ট সাক্ষ্য প্রদান শুরু করেন।
দুপুর সোয়া ২টার পর ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন আসিফ মাহমুদ। এরপর ২টা ৫৫ মিনিটে এজলাসকক্ষে প্রবেশের পর তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
এর আগে গত ৯ অক্টোবর তিনি এই মামলায় ১৯ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিতে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত তার সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। তবে তা শেষ না হওয়ায় প্রসিকিউশনের আবেদনের ভিত্তিতে আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ৯ অক্টোবরের জবানবন্দিতে আসিফ মাহমুদ জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরেন এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চালানো নৃশংসতা বর্ণনা করেন। তিনি জানান, ডিবি পরিচয়ে রাতের আঁধারে তাকে গুমের চেষ্টা করা হয়েছিল। এসব ঘটনার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সংশ্লিষ্টদের সরাসরি দায়ী করেন তিনি।
এর আগে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দিনে এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন নিহতদের পরিবারের সদস্য, প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ সদস্য ও অন্যান্য সাক্ষীরা।
১১ আগস্ট প্রথম সাক্ষী হিসেবে শহীদ আনাসের বাবা সাহরিয়ার খান পলাশ জবানবন্দি দেন।
১২ আগস্ট দ্বিতীয় দিনে সাক্ষ্য দেন কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আঞ্জুয়ারা ইয়াসমিন এবং শেখ জুনায়েদের বাবা শেখ জামাল হাসান।
১৩ আগস্ট তৃতীয় দিনে সাক্ষ্য দেন শহীদ ইয়াকুবের মা রহিমা আক্তার, প্রতিবেশী শহীদ আহমেদ ও ভাই মহিবুল হক।
২১ আগস্ট চতুর্থ দিনে শহীদ রাকিব হোসেন হাওলাদারের বাবা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও ভাই রাহাত হাওলাদার সাক্ষ্য দেন এবং হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
৭ সেপ্টেম্বর পঞ্চম দিনে জবানবন্দি দেন আনাসের মা সানজিদা খান দীপ্তি, প্রত্যক্ষদর্শী রাব্বি হোসেন ও ব্যবসায়ী আবদুল গফুর।
১১ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ দিনে সাক্ষ্য দেন দোকানকর্মী মো. টিপু সুলতান ও নৌবাহিনীতে সরবরাহকারী মো. মনিরুজ্জামান।
১৪ আগস্ট সপ্তম দিনে সাক্ষ্য দেন এপিবিএন সদস্য কনস্টেবল অজয় কুমার ও আবদুর রহমান
২৫ সেপ্টেম্বর অষ্টম দিনে তিনজন সাক্ষী, এর মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য, জবানবন্দি দেন।
৫ অক্টোবর নবম দিনে একজন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন।
এ মামলার চার আসামি বর্তমানে কারাগারে আছেন— শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন এবং মো. নাসিরুল ইসলাম।
পলাতক চারজন হলেন— সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
গত ১৪ জুলাই ট্রাইব্যুনাল এই আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালায়। এতে বহু মানুষ হতাহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক।
এনএনবাংলা/
আরও পড়ুন
সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত
সাবের হোসেন চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইসি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল