December 16, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, December 11th, 2025, 7:24 pm

চায়ের গুণগত মান বৃদ্ধি : নিলামবাজারে ন্যাশনাল টি কোম্পানির বিক্রির বাজিমাত

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:

সংকট, প্রতিকূলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শ্রমিক অসন্তোষ– সময়ের সবচেয়ে কঠিন প্রতিবন্ধকতার মুখেও শ্রমিক-মালিকের হাত ধরে লড়াই চালিয়ে চায়ের গুণগত মান বৃদ্ধির লোকসান পুষিয়ে এবারের নিলামবাজারে চায়ের রেকর্ড পরিমান বিক্রি ন্যাশনাল টি কোম্পানির।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগান, মদনমোহন পুর পাত্রখোলা, কুরমা, চাম্পারায় চা বাগানসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) পরিচালিত ১৩টি বাগানে এবার চায়ের গুণগত মান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গুণগতমান বৃদ্ধির এই ইতিবাচক পরিবর্তন সরাসরি প্রতিফলিত হয়েছে চট্টগ্রাম চা নিলামবাজারে। কোম্পানির শত বছরের ইতিহাসে এবার পরপর দুই নিলামে সর্বোচ্চ বিক্রির নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে বাজিমাত গড়েছে। যা এনটিসির সামগ্রিক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা সংস্কারের বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবারের নিলাম বাজার।

চট্টগ্রাম নিলামবাজারের ৩০ নম্বর নিলামে এনটিসির বাগানগুলোর উৎপাদিত চা প্রায় ৪ কোটি টাকার সর্বোচ্চ দরে বিক্রি হয়। এর পরের ৩১ নম্বর নিলামে এই বিক্রি বেড়ে প্রায় ৬ কোটি টাকায় গিয়ে পৌঁছায়। শুধু দুই নিলামেই প্রায় ১০ কোটি টাকার চা বিক্রি হওয়ায়

সরকারি মালিকানাধীন দেশের সর্ববৃহৎ ন্যাশনাল টি কোম্পানির চা বাগানগুলি পূর্বের লোকসানের সম্মুখীনের পর এবার লাভজনক অবস্থানে ফিরে আসায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে চা বাগান গুলি। যা দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে থাকা রাষ্ট্রীয় চা খাতকে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার সমন্বয়েই এই সাফল্য এসেছে।

২০২৪–২৫ অর্থবছরে সরকার পরিচালিত এনটিসি বাগানগুলোতে গুণগতমান নিশ্চিত করতে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর, মদনমোহন পুর,পাত্রখোলা, কুরমা, চাম্পারায়, বিজয়া,প্রেমনগর,লাক্কারতুরা,তেলিয়াপাড়া, জগদীশপুর, চণ্ডী,পারকুলসহ মোট ১৩টি বাগানে জৈবসারের ব্যবহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি সেচ ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করার কারণে খরা বা আবহাওয়াজনিত বৈরি পরিস্থিতিতেও উৎপাদন ব্যাহত হয়নি।

চা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণেও বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে বাগান গুলিতে। বাগান সূত্র জানায়, শ্রমিকদের কঠোরভাবে ‘দুটি কুঁড়ি ও একটি পাতা’ নীতি অনুসরণ করে পাতা সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে কাঁচা পাতা সংগ্রহের মান অনেক উন্নত হয় এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের পর চায়ের রং, স্বাদ ও ঘনত্বে আসে দৃশ্যমান উন্নতি। এরই ফলশ্রুতিতে নিলামবাজারে এনটিসির চায়ের প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ আগের চেয়ে বেড়েছে।

মাধবপুর চা বাগানের প্রধন ব্যবস্থাপক দীপন সিনহা বলেন, এনটিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা, নিয়মিত মনিটরিং এবং মাঠ পর্যায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলেই আমরা এবার মানসম্মত উৎপাদন ধরে রাখতে পেরেছি। শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা এবং কঠোর শ্রমই এই সাফল্যের মূল চালিকা শক্তি। আগামীতে যদি বাজার অনুকূলে থাকে তাহলে ন্যাশনাল টি কোম্পানির বাগানগুলো ভবিষ্যতে বিদেশেও মানসম্পন্ন চা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছি।

তিনি আরো বলেন,বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এস এম জিয়াউল আহসান স্যার একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা তিনি গত ২ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ হওয়ার পর থেকে সকল বাধা উপেক্ষা করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিক ব্যবস্থাপনায় চায়ের রং, স্বাদ ও ঘনত্বে দৃশ্যমান উন্নতিতে আমুল পরিবর্তন হয়েছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এনটিসির ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কাজের গতি বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত মনিটরিং, উৎপাদন পরিকল্পনা অনুসরণ, নির্দিষ্ট সময়ে কারখানা পরিচালনা এবং মান নিয়ন্ত্রণ টিমের কঠোর নজরদারিতে পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া আগের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর হয়েছে। এরই ফল আমরা নিলামবাজারে পাচ্ছি।

এনটিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) রফিকুল ইসলাম বলেন, ন্যাশনাল টি কোম্পানি সাম্প্রতিক বছর গুলোতে আর্থিক সংকটের মধ্যে ছিল। ২০২৩ সালে ন্যাশনাল টি কোম্পানিটি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে  জেড ক্যাটাগড়িতে নেমে যায়। তাই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এইচ এস এম জিয়াউল আহসান স্যারের নির্দেশে প্রতিটি চা বাগানে ব্যবস্থাপক স্টাফ ও চা শ্রমিকর চা বাগানে মনোযোগ দিয়েছে । কোম্পানির উৎপাদন ব্যয়