October 9, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, October 7th, 2025, 2:58 pm

চীন থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০টি যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন ও জাতীয় আকাশ প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে, সরকার চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। এই ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট কেনা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য খরচসহ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৭,০৬০ কোটি টাকা।

চুক্তিটি সরাসরি ক্রয় বা জিটুজি পদ্ধতিতে চীন সরকারের সঙ্গে করা হতে পারে এবং চলতি ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এটি বাস্তবায়নের আশা করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের হাতে আসা আনুষ্ঠানিক নথিপত্র অনুযায়ী, এই যুদ্ধবিমানের মূল্য ২০৩৫-২০৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে পরিশোধ করতে হবে।

জে-১০ সিই জঙ্গিবিমান মূলত চীনের বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত জে-১০সি-এর রপ্তানি সংস্করণ। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে তৈরি করা সম্ভাব্য খরচের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি ফাইটার জেটের মূল্য ৬ কোটি ডলার প্রাক্কলন করা হয়েছে, এতে ২০টি বিমানের মোট মূল্য দাঁড়ায় ১২০ কোটি ডলার বা প্রায় ১৪,৭৬০ কোটি টাকা।

স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি কেনা এবং পরিবহন খরচ বাবদ আরও ৮২ কোটি ডলার বা ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা যোগ হবে। এর সঙ্গে বীমা, ভ্যাট, এজেন্সি কমিশন, পূর্ত কাজসহ অন্যান্য খরচ যোগ করলে মোট ব্যয় হবে ২২০ কোটি ডলার।

উল্লেখ্য, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে পাকিস্তান এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ফ্রান্সের তৈরি ভারতের একাধিক রাফায়েল যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি করেছিল (যদিও তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি), যার ফলে জে-১০ সিই বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে।

চীনের তৈরি জে-১০ সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। ছবি: ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া

চলতি বছরের মার্চে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের সময় চীনের কাছ থেকে এই বহুমাত্রিক জঙ্গিবিমান কেনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল এবং চীন প্রস্তাবটিতে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিল বলে জানা যায়। এই যুদ্ধবিমান কেনার জন্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে গত এপ্রিলে বিমানবাহিনীর প্রধানকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই কমিটি খসড়া চুক্তিপত্র নিরীক্ষণ করবে, জিটুজি পদ্ধতিতে কেনা সমীচীন হবে কি-না তা যাচাই-বাছাই করবে এবং চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে চূড়ান্ত মূল্য, পরিশোধের শর্তাবলী (টার্মস অব পেমেন্ট) ও চুক্তিপত্র চূড়ান্ত করবে। চুক্তিপত্রে যুদ্ধবিমানের সংরক্ষণ সহায়তা, প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ-এর প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল এ এন এম মনিরুজ্জামান (অব.) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের বিমানবাহিনীর অনেকদিন ধরেই জঙ্গিবিমানের প্রয়োজন রয়েছে এবং তারা কেনার জন্য পরিকল্পনাও করছিল।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বে এক ধরণের ভূ-রাজনৈতিক বলয় সৃষ্টি হয়েছে। তাই কোনো দেশ থেকে কেনার আগে তার ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এখন টানাপোড়েন চলছে। এটি যেমন বিবেচনায় নিতে হবে, তেমনি আমাদের যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন আছে, তাও বিবেচনা করতে হবে।’

চীনের বাইই অ্যারোবেটিক টিম তাদের প্রদর্শনী বহরে সর্বাধুনিক জে-১০সি মডেল অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা বর্তমানে চীনের অন্যতম উন্নত মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচিত। এই ফাইটার জেটের উন্নত পারফরম্যান্স, পাইলটদের দক্ষতা এবং ওয়াইইউ–২০ এরিয়াল ট্যাংকারের সহায়তায় আন্তর্জাতিক এয়ারশোতে দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) মোট ২১২টি এয়ারক্রাফট রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি ফাইটার জেট। এর মধ্যে ৩৬টি চীনা নির্মিত এফ–৭ যুদ্ধবিমান। বিএএফের বহরে পুরানো মডেলের পাশাপাশি ৮টি মিগ-২৯বি এবং রাশিয়ান ইয়াক–১৩০ লাইট অ্যাটাক বিমান রয়েছে। জে-১০ সিরিজ যুক্ত হলে তা বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে।

সূত্র: টিবিএস

এনএনবাংলা/