চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মেম্বার আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে এ বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় ৩ সাংবাদিক।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার হওয়া ৩ সাংবাদিক হলেন— মাইটিভি ও স্থানীয় দৈনিক সময়ের সমীকরণের প্রতিনিধি মিঠুন মাহমুদ (৩১), দৈনিক খোলা কাগজের প্রতিনিধি মো. আজিজুর রহমান ডাবলু (৩৫) ও গ্রামের কাগজের প্রতিনিধি মো. তুহিনুজ্জামান তুহিন।
এ ঘটনায় মিঠুন মাহমুদ বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪—৫ জনের বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়। ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রশিদ ভুয়া নামে কার্ড তৈরি করে টিসিবির পণ্য আত্মসাৎ করেছেন বলে খবর পান সাংবাদিকরা।
বিকালে সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান সাংবাদিক মিঠুন মাহমুদ, আজিজুর রহমান ডাবুল ও তুহিনুজ্জামান তুহিন। এ সময় উক্ত মেম্বারের বাড়ির রান্নাঘরে টিসিবির ২ বস্তা চাল ও বেশ কয়েক বোতল তেল পাওয়া যায়।
বিষয়টি সম্পর্কে ইউপি মেম্বার আব্দুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি গালাগালি শুরু করে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন। পরে তার নেতৃত্বে তার ভাই তরিকুল ইসলাম তরি (৪৬), আব্দুর রশিদের ছেলে আমির হামজা অঙ্কন (২৫), মৃত মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে মো. হাসিবুর রহমান সুমনসহ (৩০) অজ্ঞাত আরও ৪—৫ জন সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়। এ সময় সংবাদ সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত ক্যামেরা, মাইক্রোফোন বুম ও মোবাইল ভাঙচুর করেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, ইউপি মেম্বার আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের রেকর্ড রয়েছে। গর্ভকালীন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নাম করে ভুক্তভোগী অনেক নারীর কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে কার্ড বাণিজ্য করেছেন। তার কাছে নাগরিক সেবা নিতে গেলে তিনি টাকা দাবি করেন।
হামলার শিকার সাংবাদিক মিঠুন মাহমুদ বলেন, ‘গোপনে খবর পাই মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও মৃত ফকির চাঁদের ছেলে আব্দুর রশিদ দীর্ঘদিন ধরে কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে অন্য মানুষের ভুয়া নাম ব্যবহার করে টিসিবির কার্ড তৈরি করে টিসিবির পণ্য আত্মসাৎ করছেন। তিনি সম্প্রতি বেশ কয়েকজনের টিসিবির পণ্য তুলে বাড়ি নিয়ে গেছেন- এমন সংবাদ পেয়ে আমরা তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে গিয়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আব্দুর রশিদের স্ত্রী বলেন, তার স্বামী টিসিবির পণ্য তুলে এনে রান্নাঘরে রেখেছেন। আমরা রান্নাঘরে গিয়ে টিসিবির ২ বস্তা চাল আর বেশ কয়েক বোতল তেল দেখতে পাই। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে আব্দুর রশিদ ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগালি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার নেতৃত্বে ৭—৮ জন আমাদের ওপর হামলা চালায়।’
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘টিসিবির ডিলারদের কাছ থেকে অনেকজন তেল ও ডাল নিলেও চাল নেয়নি। আমি সেখান থেকে দুই বস্তা চাল কিনে এনেছিলাম এলাকার গরিব মানুষকে দেওয়ার জন্য। আমি বাইরে কাজে থাকায় চাল বিতরণ করতে দেরি হয়েছে। আমার বাড়িতে কোনো তেল ছিল না।’
মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, ঘটনাটি তিনি এখনও শোনেননি। তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন।
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখব। যদি মামলা নেওয়ার মতো হয়, তাহলে মামলা রেকর্ড করা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ বলেন, ‘আমি বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। এ বিষয়ে আমি খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে, ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জীবননগর প্রেসক্লাবের সভাপতি এম আর বাবু বলেন, ‘যারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়ে ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, মোবাইল ভাঙচুর করেছে, লাঞ্চিত করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। শুধু গ্রেপ্তার নয়, খুব দ্রুত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
চট্টগ্রাম ইপিজেডে ভয়াবহ আগুন: ধসে পড়ল ৮ম তলা, রোবট ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা
সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত
টাঙ্গাইলে ভ্যান-মাহিন্দ্রা-পিকআপের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৪ জন নিহত