আবুল কালাম আজাদ, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ জরাজীর্ণ ঘরেই স্বপ্ন বুনছে শিক্ষার্থীরা। একটি-দুটি নয়, ৩য়, চতুর্থ, পঞ্চম ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে বসে আছে কয়েকটি জীর্ণ কক্ষে।এছাড়া ঘরের চালা ঝড়ো হাওয়ায় নিয়ে গেছে।
ভাঙ্গা বাঁশের পালা ও টিনের চালা, বেড়া দরজা জানালা ভেঙে পারছে। একটু বৃষ্টি হলেই পানি পরে ক্লাস রুমে, এই মাদ্রাসা আর নিরাপদ নয় ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষকদের জন্য। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন মৃত্যুঝুঁকি মাথায় নিয়ে মাদ্রাসা ক্লাস করছে এতে অভিভাবকরা থাকছেন উদ্বেগে। যে কোন মুহূর্তে মাদ্রাসা ভেঙে পরতে পারে।
মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোঃ অলিউল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মেরামতের দাবি জানিয়ে এলেও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেক অভিভাবক বাধ্য হয়ে সন্তানদের দূরের মাদ্রাসা ও বিদ্যালয়ে ভর্তি করাচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে যেমন ভোগান্তি বাড়ছে, তেমনি ওই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। এই চিত্র কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা কুড়াখাল-কুরুন্ডী দাখিল মাদ্রাসা। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, শিক্ষক সংকট ও নিরাপত্তার অভাবে মাদ্রাসা আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী। প্রতিদিন কাঁধে বইয়ের ব্যাগ, চোখে ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে স্কুলে আসে একঝাঁক শিশু। কিন্তু তাদের স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে যাচ্ছে জরাজীর্ণ ভবনের কারণে। মাদ্রাসা ভাঙা টিনের চালা, ভেড়া, ভাঙা বাঁশের উপর হেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাদ্রাসা। শিক্ষার্থীদের মুখে হাসির বদলে ফুটে উঠছে আতঙ্ক।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা কুড়াখাল-কুরুণ্ডি দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার যুগ পেরিয়ে গেলেও সরকারি কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় কক্ষের ব্যবস্থা সরা সম্ভব হয়নি। ফলে ২ টিনশেড ঘরে মাত্র ৫টি কক্ষে চলছে ৪ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়া। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাঁশের বেড়া আর টিনের চালের ২টি ঘরে কয়েক বছর ধরে কোনো রকমে পাঠদান চালালেও এখন সেগুলোও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই দুরবস্থা বিরাজ চরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
অফিস সূত্রে জানায়, ১৯৯৫ সালে এলাকার বিদ্যোৎসাহী নিজ উদ্যোগে ৭৮ শতক জমি দান পূর্বক প্রতিষ্ঠা করেন কুড়াখাল-কুরুণ্ডি দাখিল মাদ্রাসা। ৭ জন শিক্ষক ও ৬ জন কর্মচারী নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। গত ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি ও শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্ত হয়। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নে এখনো সরকারি কোনো বরাদ্দ মেলেনি। যে কারণে শিক্ষার্থী বাড়লেও সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। বরং দিন দিন নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশেষ করে স্বল্প জায়গায় গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে মারাত্মক অসুবিধা দেখা দিয়েছে।
ছাত্র-ছাত্রীরা আয়েশা আক্তার,মারিয়া, মাহমুদুল রহমান ও ইয়ামিন বলেন, প্রতি ক্লাসে ৫-৬টি বেঞ্চ বসানোর মতো জায়গা নেই। তার ওপর ছেলে ও মেয়েদের আলাদাভাবে বসানোয় বেঞ্চে ৫-৬ জন করে বসতে বাধ্য হচ্ছে।
মাদ্রাসা সহ সুপার আবদুর শুক্কুর বলেন, প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীরা বাঁশের বেড়া আর টিন দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে অফিস রুম বানিয়েছেন। বেড়া ভেঙে একেবারে জরাজীর্ণ অবস্থা। নড়বড়ে হয়ে পড়েছে পুরো ঘরটি। এতে যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে মাদ্রাসাটি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ আন্ছারুল্ল্যাহ ও মো. রমিজ উদ্দিন এবং স্থানীয় অভিভাবক বলেন, তিন কিলোমিটার আশপাশের কোনো গ্রামে কোনো মাদ্রাসা নাই। এ কারণে এলাকার স্বার্থে আমার বাবা এই মাদ্রাসাটি গড়ে তোলেন। মাত্র ৩ রুমের একটি টিনশেড ঘর দিয়ে যাত্রা শুরু। প্রথম দিকে সমস্যা না হলেও মাদ্রাসা উন্নীত হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পাওয়ায় আসনের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে ৪ জন শিক্ষক নিয়ে এই স্বল্প পরিসরে ক্লাস করানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। সমস্যা বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হয়েও কোনো সমাধান পায়নি। অনতিবিলম্বে নতুন শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করা না হলে দুর্বিষহ অবস্থা আরও বাড়বে বলে জানান তারা। এ ছাড়া পাঠদান স্বাভাবিক রাখতে একটি একাডেমিক ভবন খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল জসিম উদ্দিন বলেন, এই সমস্যা সমাধানে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাদ্রাসাটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। ক্লাস রুমগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ন। অনেকবার লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। গত ১৮ বছরে আমি কোন সরকারি বরাদ্দ পাই নাই। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের আশু সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
আরও পড়ুন
ভাঙ্গুড়ায় নকল দুধ তৈরির কারখানায় অভিযান ও সীলগালা, অনুমতি ছাড়াই আবার চালুর অভিযোগ!
সাভারে বনগাঁও ইউনিয়ন যুবদলের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
রংপুরে মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক ক্যাম্প অনুষ্ঠিত