অনলাইন ডেস্ক :
ইউরোপ, এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে গত রোববার রেকর্ড তাপমাত্রার পূর্বাভাস থাকায় কয়েক কোটি মানুষকে বিপজ্জনক তাপপ্রবাহের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সম্পর্কিত ঝুঁকির সর্বশেষ উদাহরণ বলে মত বিশ্লেষকদের। মোটের ওপর ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা থেকে শুরু করে বিশ্বের অনেক জায়গায়ই তীব্র দাবদাহের সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ (ইউএনডাব্লিউএস) জানিয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে টেক্সাস অঙ্গরাজ্য পর্যন্ত বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরো বাড়তে পারে। চলতি সপ্তাহে আবহাওয়া অত্যন্ত গরম ও বিপজ্জনক থাকতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেশি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আরিজোনার রাজধানী ফিনিক্সে ১৬ দিন ধরে ১০৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা গত শনিবার ১১১ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা অনুভব করেছে। এটি বেড়ে ১১৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পৃথিবীর অন্যতম উষ্ণ স্থান ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে গত রোববার তাপমাত্রা ১৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত ওঠার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ লোকজনকে দিনের বেলায় ঘরের বাইরে কাজ করতে নিষেধ করেছে। একই সঙ্গে পানিশূন্যতা থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। এদিকে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বেশ কিছু দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে কানাডা সরকার জানিয়েছে, চলতি বছর দাবানলে এক কোটি হেক্টর এলাকা পুড়ে গেছে, যা একটি রেকর্ড। গ্রীষ্মকাল অব্যাহত থাকায় আরো ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তীব্র গরমের পূর্বাভাস
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে চলতি সপ্তাহে রেকর্ড তাপমাত্রার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। রোম, বোলগনা, ফ্লোরেন্সসহ ১৬টি শহরে লাল সতর্কবার্তা জারি করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গ্রীষ্মকালীন সবচেয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ও সর্বকালের অন্যতম তীব্র তাপপ্রবাহের জন্য প্রস্তুত থাকতে নাগরিকদের সতর্ক করেছে ইতালির আবহাওয়া বিভাগ।সোমবার (১৭ জুলাই) রোমে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও আজ মঙ্গলবার ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে। ২০০৭ সালে রোমে সর্বোচ্চ ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এ ছাড়া সিসিলি ও সারদিনিয়া দ্বীপপুঞ্জে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অনুভূত হতে পারে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, এটি সম্ভবত ইউরোপে রেকর্ড হওয়া এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। টানা তিন দিন তীব্র গরমের কারণে গ্রিসের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র অ্যাক্রোপলিশ গত রোববার বন্ধ রাখা হয়। এদিকে ফ্রান্সে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে সৃষ্ট খরা কৃষি খাতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তাপমাত্রাকে গ্রীষ্মকালের স্বাভাবিক পরিস্থিতি আখ্যা দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন দেশটির কৃষিমন্ত্রী। দেশটির জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা বলেছে, গত জুন ছিল দেশটির ইতিহাসে অন্যতম উষ্ণ মাস। স্পেনের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত নতুন তাপপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।
এ সময় ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ ও আন্দালুসিয়া অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াতে পারে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপানে সোমবার তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এদিকে গত রোববার বেশ কয়েকটি তাপমাত্রা সতর্কতা জারি করেছে চীন। শিনচিয়াংয়ের মরু অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে। আর দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংজি অঞ্চলে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার আভাস দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে উত্তর আফ্রিকার মরক্কোর বেশ কয়েকটি প্রদেশে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। এতে দেশটিতে পানিসংকট নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এদিকে ইরাকের বাগদাদে প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এএফপি
আরও পড়ুন
হাসিনার মতো ‘বিশ্বস্ত মিত্র’কে হারানোর ঝুঁকি নেবে না ভারত
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে ৩৮ জনের মৃত্যু, আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় শোক পালন
বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষ বাড়ছে, কমছে ধনী দেশের সাহায্য