December 21, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 23rd, 2025, 6:30 pm

জাগানো চরে নাব্যতা হারাচ্ছে মনু নদী

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

হাওর বাওর খাল বিল আর নদী সমৃদ্ধ মৌলভীবাজার জেলার জলাশয় ও নদীগুলো পলি ভরাটের কারনে নাব্যতা হারাচ্ছে। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়াসহ তিন উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত মনু নদী এ জেলার প্রধান নদী। উজানের ভারত থেকে বয়ে আসা মনু নদী কুলাউড়ার শরীফপুর থেকে শুরু হয়ে ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মৌলভীবাজারের মনুমুখ এলাকায় কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে মিশেছে। ২০২২ ও ২৪ সালের পর পর দুই বারের ভয়াবহ বন্যায় ও দীর্ঘদিন থেকে নদী খনন না হওয়ায় নাব্যতা হারাচ্ছে মনু নদী। বন্যায় জমে থাকা পলিতে এই অঞ্চলের বসত বাড়ী কৃষি জমি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয় বিগত সময়। একাধিকবারের বন্যায় ভারতের উজান থেকে পানির সাথে প্রবাহমান পলিতে মনু নদী ভরাট হওয়ায় নদীর গভিরতা হ্রাস পাওয়াসহ বিভিন্নস্থানে জেগেছে চর। নদীর নাব্যতায় বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারনে বেড়িবাঁধে ভাঙ্গনসহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়া দীর্ঘ দিন থেকে নদী খনন না করায় দেশীয় মাছের যেমন উৎপাদন কমেছে তেমনি কৃষকসহ আশাপাশ এলাকার মানুষ নানা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই নদী খননের দাবি জানিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ।

সরেজমিন নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মনু নদীর পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের ধলিয়া, সুখনাভী, রাজাপুর, কটারকোনা, ইসমাইলপুর, রনচাপ, নিশ্চিন্তপুরসহ বিভিন্ন স্থানে জেগেছে বিশাল চর। এসব চরের কারনে গত বর্ষায় বেড়িবাঁধের শিকরিয়া এলাকায় প্রায় ৩ শত ফুট ভাঙ্গন দেখা দেয়। এছাড়া ২০২২ ও ২০২৪ সালের বন্যায় মিয়ারপাড়া, সন্দ্রাবাজ ও শালন এলাকায় নদী ভাঙ্গনে কুলাউড়া উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। জমে থাকা পলির কারনে নদীর তলভাগ ভরাট হয়ে  মনু নদীর নাব্যতা হারাচ্ছে। পলি ভরাটের ফলে নদীর নাব্যতা কমায় মাছের উৎপাদন হ্রাসসহ আশাপাশে লোকালয়ের ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

নদী তীরবর্তী এলাকার স্থানীয় কৃষক তানভীর আহমদ, তাজু মিয়া, মোবারক আলী, ইসমাইল আলী, আব্বাস আলী ও ফরিদ আহমদ জানান, পলির কারনে মনু নদী ভরাট হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন থেকে খনন না করায় বর্ষায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যার কবলে আমরা পড়ি। এজন্য আমাদের কৃষি জমি ও ফসলের ক্ষতি হয়। এছাড়াও এই নদীতে এক সময় ব্যাপক হারে দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে পলির কারনে নদীর ঢহর (গভীরতম স্থান) ভরাট হয়ে মাছের উৎপাদন কমেছে। নদীর ঢহরে পানি না থাকায় আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না জাল ও বড়শিতে। নদী খননে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

মনু নদীর রাজাপুর খেয়াঘাটের মাঝি রুবেল আলী ও ধলিয়া ঘাটের মাঝি হারুন মিয়া বলেন, নদীতে এখন আর আগের মতো গভীরতা নেই। পলি জমায় নদীর গভীরতা কমায় নৌকা চালানো যায় না। শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ও পায়ে হেটে এলাকার লোকজন নদী পারাপার হন। বর্ষায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি উতলে যায় নদীর গভীরতা কম থাকায়।

এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু মাসুদ বলেন, পলি মাটির কারনে প্রতি বছর মনু নদী, ফানাই নদী ও হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিল ভরাট হওয়ায় পানি ধরে রাখার ধারণ ক্ষমতা কমছে। এজন্য দেশীয় মাছের উৎপাদনও কমেছে। মনু নদীর ভারতীয় সীমান্তের উপরিভাগ থেকে কটারকোনা সেতু, ফানাই নদী ও হাকালুকি হাওয়রের কুলাউড়া অংশের কাংলী বিল খননের প্রস্তাব মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ বলেন, মনু নদীর কয়েকটি স্থানে বিগত সময় জমে থাকা পলি চর অপসারন করা হয়েছে। বিগত ২ বারের বন্যার পর নতুন করে জাগানো চরগুলো অপসারন ও নদী খননের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি প্রস্তাব আকারে পাঠানো হবে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন জানান, জমে থাকা পলি অপসারণ, বেড়িবাঁধ মেরামত ও নদী খননের জন্য স্থানীয়রা একটি আবেদন দিয়েছেন। নদীর নাব্যতা ফেরাতে ড্রেজিং ও খননের বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবো।