November 2, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, November 1st, 2025, 6:55 pm

জাতি আশায় বুক বেঁধে আছে

আবদুল আউয়াল ঠাকুর

অবগুণ্ঠিত নারীর মতই নির্বাচন এখন গণতন্ত্রের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। ভেতর থেকে দরজা খুলে দিলেই শুরু হবে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। এবারের দিনটি বহু প্রতীক্ষিত, প্রতিক্ষিত এবং বড় আকাঙ্ক্ষার। গণতন্ত্র বিপর্যয়ের এক মহাপ্রলয় হয়ে গেছে গত সাড়ে পনের বছর। সেই ধ্বংসযজ্ঞের পর ত্যাগতিতিক্ষা এবং ছাত্রযুবকের রক্তের বিনিময়ে বিনির্মিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নতুন ভিত।

যেভাবেই ব্যাখ্যা করা যাক না কেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পথচলা কখনোই খুব মসৃণ হয়নি। বারবার হোঁচট খেয়েছে, কোমর ভেঙেছে, বাকা হয়েছে আবার দাঁড়িয়েছে। তবে টিকে থাকার যে ব্যবস্থা, তা এখনো হয়ে ওঠেনি। কার্যত আমরা গত ৪৩/৫৪ বছর ধরে ঠিক করতে পারিনি, আমরা কী ধরনের শাসনব্যবস্থা চাই এবং তার জন্য কতটা মনস্থির আমরা করেছি বা করতে পেরেছি।

এর জন্য যদি সোজা ভাষায় বলা যায়, তাহলে দায় এবং দায়িত্ব আমাদের রাজনীতিকদের উপরই বর্তাবে। তারা নিজেরা ঠিক করতে পারেননি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি কী হওয়া উচিত। কথাটা আমরা যখন বলছি, তখন কিন্তু একথাও ঠিক যে আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গণতন্ত্র লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং একথা মান্য করতে আমরা বহুবার শপথ নিয়েছি বটে, তবে এর প্রতি আমরা আস্থাশীলসে কথা দৃঢ়ভাবে তো নয়ই, খুব ঢিলেঢালা ভাবেও বলা যাবে না। কেন বলা যাবে না, বোধকরি সেকথা খুব বড় করে না লিখলেও চলে। মোটা দাগে বলা যায়, আমাদের মনমানসিকতায় এখনো গণতন্ত্র ঠিক বাসা বেঁধে ওঠতে পারেনি। না পারার পেছনে বড় কারণ গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের অনাগ্রহ। বলা যায়, আমাদের মধ্যে রাষ্ট্র, সমাজ, সংস্কারে ডানবাম নানা ধারণার ফলে আমরা ঠিক করে বুঝে উঠতে পারিনি, আমরা কোন পথে চলব।

আমাদের স্বাধীনতা লড়াইয়ের অন্যতম বিষয় ছিলআমরা কথা বলতে চাই, গণতান্ত্রিক অধিকার পেতে চাই। সে অধিকার পাবার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি, জীবন দিয়েছি। প্রায় আড়াই বছরের লড়াই করে অর্জন করা পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছি। আসলে যে গণতন্ত্রের কথা আমরা বলছি, তা আমরা স্বাধীন দেশে বছর দুএক ভোগ করলাম নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে। এর পর যা হবার তা হলো। সেই পাকিস্তানি কালো আইনের প্রয়োগ করে স্তব্ধ করে দেওয়া হলো। দেশে একদলীয় বাকশাল কায়েম হলো। যেভাবে এই স্বৈরাচার পদ্ধতি জনগণের ঘাড়ের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসল, তার নজির মেলা ভার। সংসদে সেদিন প্রতিবাদ হলো। সংসদ সদস্য জেনারেল এম জি ওসমানী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনসহ অনেকে প্রতিবাদ করলেন। তাতে কাজের কাজ কিছুই হলো না। যা হবার তা হলো। গোটা জাতি ধাবমান লাল ঘোড়ার খুরের চাপায় পিষ্ট হলো। টিকল না। কিন্তু তারপরের পথচলা নির্বিঘ্ন হলো না।

আমাদের সংবিধানে গণতন্ত্র সুস্পষ্ট করে বলা থাকার পরেও কেন এই অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের ঘাড়ে চাপল, তার সঠিক বিবরণ হয়তো আমাদের কাছে নেই। এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করে জেনারেল এম জি ওসমানী যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি বলেছিলেনবাকশাল গঠনের ব্যাপারে নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে কোনো ম্যান্ডেট নেওয়া হয়নি। সে কারণে এটি সমর্থনযোগ্য নয়। আসলে তিনি হয়তো সে সময়ের প্রেক্ষিতে যা যৌক্তিক মনে করেছেন, সেটাই তুলে ধরেছেন।

এখানে একটি বড় বিষয় হচ্ছে মানসিকতা। বলা উত্তমআমরা কি জনগণের কাছে এমন কোনো আবদার করতে পারি, যা জনকল্যাণের বিপরীতে অবস্থান করে? বাকশাল পরবর্তী অনেকটা সময় কেটে গেছে। বাংলাদেশে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত হয়েছে। আসলে কি গণতন্ত্র আমাদের সমাজজীবনে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে প্রশ্ন গুরুতর আকারে দেখা দিয়েছে বিগত সাড়ে পনের বছরের ফ্যাসিবাদি শাসনের নিগড়ে জাতি বন্দী থাকার সূত্র ধরে।

দেখা যাক, কেন এবং কিভাবে কাজটি অতি সন্তর্পণে সংঘটিত হয়েছিল। এক গভীর সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র চক্রান্তের পথ ধরে এগিয়েছে গণতন্ত্রবিনাশী শক্তি। এর পেছনের মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশকে গ্রাস করা। মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রাথমিক স্তর হচ্ছে ভোটাধিকার প্রয়োগ। সেই ভোটাধিকার প্রয়োগকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল কথিত চেতনার নামাবলী গায়ে জড়িয়ে। মানুষের সস্তা ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রতিবেশীর পাতানো জালে আটকাতে। গোটা জাতি প্রত্যক্ষ করল, কিভাবে ভোটহীন নির্বাচনহীন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে একটির পর একটি সরকার গঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই অপপ্রচেষ্টার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও ভারত নিঃশঙ্কচিত্তে সরকারের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়ে গেছে। আর যারা ভোটাধিকারের কথা বলেছে, তাদেরকেই বিরোধী, নানান তকমায় যুক্ত করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

সে পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, বিভৎস বিকৃত মানসিকতার ছিল, তার প্রমাণ এখন কিছুটা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের জেরায় পাওয়া যাচ্ছেকিভাবে বিরোধীদের ফাঁসানোর জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে জ্বালাওপোড়াও করা হয়েছে, আর এর জন্য বন্দী করা হয়েছে গণতন্ত্রের দাবিতে থাকা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে। এটা কথার কথা নয়। একটু চোখ খুললেই দেখা যাবে, জনগণের কণ্ঠ রোধ করে একদিকে জনগণের সম্পত্তি দখল করা হয়েছে, অন্যদিকে বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, আর সেই সাথে দেশকে পরনির্ভর করে তোলা হয়েছে। এসব হতে পেরেছে কারণ দেশে গণতন্ত্র ছিল না।

মানুষের কথা বলার, লেখার স্বাধীনতা ছিল না। কী অদ্ভুত আইন প্রণয়ন করা হয়েছিলচোরের কথা লিখলে অপরাধ লেখকের, চোর নিরাপদ। এক কঠিন বাস্তবতায় দেশের সংবাদপত্রমিডিয়া শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছিল। উন্মুক্ত সীমান্ত, বিডিআর হত্যা, মানুষের উপর নির্বিচার নির্যাতন, গুম, হত্যাকোনো কিছুই বলার উপায় ছিল না। এখন দেখা যাচ্ছে, সেসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তারা সবাই রাষ্ট্রের পদস্থ।

এই যে সব ঘটনা, এর মূল কারণ হচ্ছে দেশে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকা, থাকতে না পারা। এসব ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের রাজনৈতিক জীবনের সাথে সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। তারপরেও কেন ঘটেছে? এর একমাত্র জবাব হতে পারেমানুষকে অবজ্ঞা, মানুষের প্রতি সম্মানবোধ না থাকা, অর্থাৎ গণতান্ত্রিক চেতনাবোধের অভাব। বিগত সময়ের নির্যাতনের কান্না এখনো থামেনি। চারদিকের আকাশবাতাস এখনো ভারি হয়ে রয়েছে। এসব কান্না আমাদের কী বার্তা দেয়? আমাদের কোনো নির্দেশনা দেয়?

কথায় বলেমানুষ ঠেকে শিখে। আমাদের সমাজপরিচালকরা কি ঠেকে শিখেছেন, নাকি আরও বেশি হঠকারী হয়েছেন? বাকশালের প্রতিবাদে মানুষ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিল, তা থেকে যদি তারা শিখতো, তাহলে গণতন্ত্র হত্যার নীলনকশা কেউ প্রণয়ন করতে সাহস পেত নাপাবার কথাও নয়। অথচ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে গোটা জাতিকে সর্বস্বান্ত করে দেওয়া হয়েছে।

মানুষের জন্য কথা বলার অপরাধে বাকশালের বিরুদ্ধে জোরালো কণ্ঠ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে আওয়ামী সরকার গ্রেপ্তার করেছিল, হেনস্থা করেছিল। শুধু এই একটি নামই নয়, যারাই গণতন্ত্রের কথা বলেছে, যারাই মানুষের অধিকার নিয়ে মাঠে নেমেছে বা নামতে চেয়েছে, তাদেরকেই দেশদ্রোহী তকমা দেওয়া হয়েছে। সরকারবিরোধী আর দেশবিরোধিতা যে এক নয়এই সহজ কথাটা গুলিয়ে ফেলে সামগ্রিক নৈরাজ্যের এক বিস্তার করা হয়েছিল। বলা হয়চোরে শুনে না ধর্মের কাহিনি। আসলে যারা মানুষের অধিকার চুরি করেছে, হরণ করেছে, তাদের কাছে মানুষের কান্না পৌঁছাবার কথা নয়, পৌঁছেওনি।

আজকের প্রেক্ষাপটে সে ভাবনাই জরুরিকিভাবে আমরা একটি সুখী, সমৃদ্ধ বাস্তবতায় পৌঁছতে পারব।

নির্বাচন এদেশে নতুন কোনো বিষয় নয়। বহু বছর ধরে নির্বাচন হয়ে আসছে। জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন নিয়ে নতুন করে আলোচনা অর্থহীন। যেসব বিবেচনায় অতীতে নির্বাচনকে দেখা হয়েছে, সে চোখে এবারের নির্বাচন নয়। এর কারণ সংগত। এখনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়নি। নির্দলীয় সরকার প্রধান ঘোষণা করেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন সেভাবে এগুচ্ছে। এবারের নির্বাচন নানা কারণে গুরুতর হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন নিয়ে নানা কথা হয়েছে, হচ্ছে। এবারে যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তখন দেশের রাজনৈতিক আবহে ভিন্ন বাতাস বইছে।

ইতোমধ্যে জুলাই ঘোষণায় দেশে ফ্যাসিবাদ নির্মূলের অঙ্গীকার করেছে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহ। দেশে ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন বন্ধ করতে পারার পথ পদ্ধতি কী হবে, নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয় না থাকলেও কথা সত্যি যেফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে উদ্বেগ সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে, সেটি একটি গণতান্ত্রিক আবহ লালনের অনুকূল বার্তা বহন করে।

সুতরাং দেখা দরকারফ্যাসিবাদ প্রবেশ করেছে কোন রন্ধ্রপথে? ফ্যাসিবাদ কোনো ব্যক্তির নাম নয়। বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, বাকশালের প্রবর্তন, সামরিক শাসন প্রবর্তন রাতের ভোট চালুর মধ্য দিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদের যাত্রা হয়েছে। এসবই আগামীতে থাকবে তেমন নাও হতে পারে। আরও নতুন কোনো পদ্ধতি আসতে পারে নতুন কোনোভাবে। সেটা না আসা পর্যন্ত জনগণ জানতে পারবে না।

এখন বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, তা কিভাবে রক্ষিত হবে? এটা রক্ষা করা না গেলে কার্যত ফ্যাসিবাদের জয় হবে। তাহলে দেখা দরকারআমরা কোন বিষয়কে সবচেয়ে গুরুত্বের সাথে দেখব?

রাজনৈতিক অনেক আলোচনা চলছে। কে কোন পদ্ধতি চান, কে কোন লক্ষ্য অর্জন করতে চান, সেসব রয়েছে। এবারে যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক আলাদা আবহে রয়েছে। সরকার আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী হিসেবে বিবেচনা করে নিষিদ্ধ করেছে। উচ্ছেদকৃত ফ্যাসিবাদের নায়ক ভারতে অবস্থান করছে। জনতার রোষে ক্ষমতাচ্যুত হবার পর তার মিত্রের ছায়ায় রয়েছে। এই আমাদের দেশে গণতন্ত্রের জন্য, বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের জন্য একধরনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হুমকি হিসেবে কাজ করছে।

এই হুমকি মোকাবিলা করা কিভাবে যাবে, তার কোনো কর্মপন্থা আমাদের এখনো জানানো হয়নি। বাংলাদেশে অতীতের স্বৈরাচারগুলোর কেউই বিদেশের মাটিতে আশ্রয় নেয়নি। ভারতের মাটিতে শুধু বাংলাদেশ নয়, আরও বেশ কয়েকটি দেশের বিতাড়িত নেতারাও রয়েছেযেমন দালাইলামা আরও অনেকে। এদেরকে ভারত এমনি এমনি আশ্রয় দিয়েছেব্যাপারটি সে রকম ভাবার কোনো কারণ নেই।

আওয়ামী সরকারের ভাষায় তারা ভারতকে যা দিয়েছে, এটা কারো পক্ষেই দেওয়া সম্ভব নয়। এই অসম্ভব কাজটি সম্পন্ন করার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে কী ধরনের কর্মপন্থা নেওয়া হবে, তা কোনো বিবেচনাতেই পরিষ্কার নয়। এটাও ঠিকভারতই আমাদের দেশে গণতন্ত্রের একমাত্র শত্রু। এদেশে গণতন্ত্র থাকলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারত। কারণ ভারত বাংলাদেশকে তার হিন্টারল্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ভারতীয় ফেনসিডিল, মাদকসহ নানা পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে অবৈধভাবে। সীমান্ত উন্মুক্ত থাকে, যেখানে তারা নির্বিচারে বিচরণ করে।

বাংলাদেশকে দুর্বল করতে, বিশেষ করে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে ভারতীয় চক্রান্তের কোনো অন্ত নেই। এই অন্তহীন দূর্বৃত্তায়ণের অধিপতি তার মদদপুষ্ট প্রতিনিধির পরাজয়কে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবে বা নিয়েছেতেমনটা মনে করা অর্থহীন। তার অর্থ এই নয় যে আমরা ভারত কী করবে সে ভয়ে বসে থাকব বা বসে থাকার মতো কোনো পদক্ষেপ নেব। বরং আমাদের প্রজ্ঞা প্রয়োগের সময় এসেছে।

এই প্রজ্ঞার আলোচনা বাংলাদেশের এবারের নির্বাচনে খুবই বিবেচ্য বিষয়। আশার কথা, এবারের নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে, তারা সকলেই প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। এখন পর্যন্ত প্রধানত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি এবং এনসিপি দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বহাল রয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি বিগত সময়ে কয়েকবার ক্ষমতায় ছিল। অন্য সমালোচনা যাই থাকুক, গণতন্ত্রে তা পরীক্ষিত শক্তি। তাদের হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ।

জামায়াতে ইসলামী বিগত আমলে গণতান্ত্রিক লড়াই করতে গিয়ে প্রচণ্ড মূল্য দিয়েছে। সাজানো মামলায় তাদের নেতৃত্ব শূন্য করে দেওয়ার গভীর চক্রান্ত করা হয়েছে। আন্দোলন কী জিনিস এবং কতটা তীব্র হতে পারে, তার বিবরণ তাদের শেখানোর প্রয়োজন নেই।

এনসিপি হচ্ছে আমাদের সেই আলোকবর্তিকা, যারা নিজেদের উৎসর্গ করে গণতন্ত্র কায়েমে অবদান রেখেছে। বাংলাদেশ যতদিন টিকে থাকবে, ততদিন তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।

তিনটি দলই বাংলাদেশে একই সাথে ফ্যাসিবাদবিরোধী, গণতন্ত্রপন্থী অধিপত্যবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি। নির্বাচনে কে জিতবে, কে সরকার গঠন করবে তা নিয়ে হয়তো এখন নানা হিসাবনিকাশ চলছে। কার পাল্লা ভারি, কে বেশি ওজনদারআমরা সে আলোচনায় যেতে আগ্রহী নই।

বিবেচ্য বিষয় হচ্ছেগণতন্ত্র নিরাপদ কিনা, সেটিই দেখার ব্যাপার। গত অর্ধ শতাব্দির জের ধরে বলা যায়, যখনই আওয়ামী শক্তি বা তাদের বিশ্বাসভাজন কেউই ক্ষমতায় গিয়েছে, তখনই দেশ অস্থিতিশীল হয়েছে, গণতন্ত্র বিপদাপন্ন হয়েছে, মূল্যবোধ বিপর্যস্ত হয়েছে, মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। এটি পরীক্ষিত সত্য।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায়— “বুদ্ধিহীন মানবহৃদয় ভ্রান্তি কিছুতেই ঘোচে না। যুক্তিশাস্ত্রের বিধান বহু বিলম্বে মাথায় প্রবেশ করেদ্বিতীয় ভ্রান্তির পাশে পরিবার জন্য চিত্ত ব্যাকুল হয়ে ওঠে।

আমাদের সমাজে এখনো চৈতন্যিক ব্যাকুলতায় আক্রান্ত কেউ কেউ থাকতে পারেন। সেটি আসলে বিভ্রান্তি। আমাদের দেশের স্বাধীনতা ভৌগোলিক অখণ্ডতার সাথে বর্ণবাদবিরোধিতা আত্মার সাথে গেঁথে আছে। সাধারণ মানুষের যে ঐক্য, সেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি গভীর আস্থা সম্পৃক্ত।

যে নির্বাচন গণতন্ত্রের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে, সেটি আমাদের প্রত্যাশার সাথে মিলিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে অনুবর্তী হবে প্রত্যাশা অমূলক নয়, বরং গোটা জাতি আশায় বুক বেঁধে আছে ফ্যাসিবাদ ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মানুষের বিজয় নিশ্চিত হবে।

সিনিয়র সাংবাদিক কলামিস্ট