অনলাইন ডেস্ক :
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ৬টায়। নির্ধারিত সময়ের আগেই মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ। অভিনয়শিল্পী, গায়ক-গায়িকা, পরিচালক-প্রযোজকসহ সংশ্লিষ্ট সবার মুখেই যেন হাসির ফোয়ারা। অনুষ্ঠান শেষ হওয়া পর্যন্ত ছিল সেই খুশির রেশ। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান উপলক্ষে শিল্পীদের এই আনন্দ-উল্লাসে অন্য রকম এক আনন্দদিন দেখল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। অভিনয় ও সংগীত শিল্পীরা চলতি বছর দুইবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে এই সম্মানজনক জাতীয় পুরস্কার পেলেন। গত ৯ মার্চ দেওয়া হয়েছিল ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২১’, বছর না পেরোতেই মঙ্গলবার প্রদান করা হলো ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২’।
গত ৩১ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে সবাই জেনে গিয়েছেন এ বছর পুরস্কার পাচ্ছেন কারা। ২৭টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয় ৩২টি। পাঁচটি বিভাগে দেওয়া হয় যৌথ পুরস্কার : আজীবন সম্মাননা, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ ও ‘পরাণ’), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (জয়া আহসান ও রিকিতা নন্দিনী শিমু), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী (বৃষ্টি আক্তার ও মুনতাহা এমিলিয়া), শ্রেষ্ঠ গায়ক (বাপ্পা মজুমদার ও চন্দন সিনহা) এবং শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার (ফরিদুর রেজা সাগর ও খোরশেদ আলম খসরু)। আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন ‘ওরা ১১ জন’ খ্যাত অভিনেতা কামরুল আলম খান খসরু ও অভিনেত্রী রওশন আরা রোজিনা। তাঁদের সম্মানিত করার মাধ্যমেই শুরু হয় পুরস্কার প্রদান কার্যক্রম। তবে বিদেশে থাকায় উপস্থিত হতে পারেননি অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুল আলম খান খসরু। তাঁর হয়ে পুরস্কার নিয়েছেন গুণী অভিনেতা আলমগীর। পুরস্কার প্রদানের সময় প্রধানমন্ত্রী বিজয়ী সব শিল্পীর সঙ্গে হাসিমুখে ছবি তুলেছেন, অনেকের সঙ্গে খোশগল্পেও মেতে ওঠেন।
পঞ্চমবারের মতো এ বছর সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন জয়া আহসান। মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এর আগে গেরিলা (২০১১), চোরাবালি (২০১২), জিরো ডিগ্রী (২০১৫), দেবী (২০১৮) ছবির জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। জয়ার সঙ্গে যৌথভাবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন ‘শিমু’ অভিনেত্রী রিকিতা নন্দিনী শিমু। প্রথমবারের মতো এই অভিনেত্রী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ‘হাওয়া’র জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার নিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। এবার সর্বাধিক চার ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেনের ‘শিমু’-শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, শ্রেষ্ঠ সম্পাদক এবং শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা।
তিনটি করে পুরস্কার পেয়েছে পাঁচটি ছবি-রায়হান রাফীর ‘পরাণ’, মুহাম্মদ আবদুল কাইউমের ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’, সাইফুল ইসলাম মান্নুর ‘পায়ের ছাপ’, দীপংকর দীপনের ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ও সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ডের ‘রোহিঙ্গা’। দুটি করে পুরস্কার জিতেছে মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’ ও এস এ হক অলিকের ‘গলুই’। এ ছাড়া ‘হৃদিতা, ‘বীরত্ব’, ‘দেশান্তর’, ‘দামাল’, ‘ঘরে ফেরা’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ একটি করে পুরস্কার জিতেছে। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বিজয়ী সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি ঢাকাই ছবির ইতিহাস তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে চলচ্চিত্র খাতে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন বা বিএফডিসিতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন দেখা যায়নি। বর্তমানে সেখানে অত্যাধুনিক কমপ্লেক্স নির্মিত হচ্ছে। এটি নির্মিত হলে বদলে যাবে দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির রূপরেখা। বিশাল এই প্রকল্পের পেছনে প্রায় সাড়ে তিন শ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘টাকার অঙ্ক দিয়ে হিসাব করি না, আমাদের শিল্পীরা যাতে ভালো করে কাজ করতে পারেন, সেটাই চাই। আমরা গাজীপুরে ফিল্ম সিটি প্রতিষ্ঠা করেছি। এটাও বঙ্গবন্ধু চিন্তা করেছিলেন। এটার প্রথম পর্বের কাজ শেষ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় পর্বের কাজও হচ্ছে। সেখানে সব ধরনের শুটিং যাতে করা যায়, সেই ব্যবস্থা থাকবে। আমরা চাই, দেশের অঙ্গন ছাড়িয়ে আমাদের চলচ্চিত্র বিদেশেও সমাদৃত হোক। সেই সঙ্গে শিল্পী-কুশলী সবাইকে আমি এই আহ্বান জানাই, এদিকে আরো মনোযোগ দিন। যেহেতু মানুষের জীবনে সচ্ছলতা এসেছে, তাই তারা বিনোদনের দিকে ঝুঁকছে।’ বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’-এর শিল্পীদের প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নির্মাতা-শিল্পীরা প্রত্যেকেই চমৎকার কাজ করেছেন। বিশেষ করে অভিনয়শিল্পীরা, তাঁরা এত চমৎকার অভিনয় করেছেন।
সম্পূর্ণ অন্তর দিয়ে কাজ করেছেন। এজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, এটা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বড় অর্জন হয়ে থাকবে।’ ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যেও সময় পেলে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র দেখেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। পুরস্কার প্রদান ও বক্তব্য শেষে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। গানের সঙ্গে মঞ্চে নেচেছেন সাদিয়া ইসলাম মৌ, নুসরাত ফারিয়া, মাহিয়া মাহি ও তমা মির্জা। সাইমন সাদিক-প্রার্থনা ফারদিন দীঘি, আদর আজাদ-পূজা চেরী, সোহানা সাবা-গাজী নূর ও জায়েদ খান-আঁচলের দ্বৈত পরিবেশনাও উপভোগ করেছেন উপস্থিত সবাই। এ ছাড়া গান শুনিয়েছেন বালাম ও সোমনুর মনির কোনাল। সঞ্চালনায় ছিলেন অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ ও অভিনেত্রী দিলারা হানিফ পূর্ণিমা।
আরও পড়ুন
নায়িকা নিপুনের লন্ডনযাত্রা বাতিল
২২০ চলচ্চিত্র নিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
মুক্তি পাওয়া ৪১ সিনেমার কোনটির আয় কত