বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬২১টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬০৮ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে এক হাজার ১০০ জন মানুষ। এরমধ্যে ২৭১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৬৪ জন, ৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৬ জন ও দুইজন আহত হয়েছেন। ২২টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত এবং সাতজন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা যায়। সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২৬৪ জন, বাসের যাত্রী ২৮ জন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৩৪ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ১৯ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ৯০ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-টমটম) ১৮ জন এবং বাইসাইকেল-রিকশা আরোহী ১২ জন নিহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২১৪টি জাতীয় মহাসড়কে, ২৬৫টি আঞ্চলিক সড়কে, ৯৬টি গ্রামীণ সড়কে এবং ৪২টি শহরের সড়কে এবং ৪টি অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে। এরমধ্যে ১৩৩টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৫৮টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৪১টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৭৫টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৪টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৭২টি দুর্ঘটনায় ১৬১ জন নিহত হয়েছেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ৩১টি দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় ৪২টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম পঞ্চগড় জেলায়। এই জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় ২৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ৩১ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে— ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে— দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে, চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করতে হবে, পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
আরও পড়ুন
ঢাকা থেকে নিখোঁজ সুবা নওগাঁয় উদ্ধার, তরুণ আটক
ঢাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৩
পাকিস্তান-সৌদি আরবের মধ্যে ১.৬১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক চুক্তি