ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সোলায়মান সেলিম নামের এক ব্যক্তিকে ‘জুলাই শহীদ’ দেখিয়ে মামলা করেছে তারই বড় ভাই মোস্তফা কামাল। এ ঘটনায় সেলিম জীবিত থাকার প্রমাণ চেয়েছে আদালত। এজন্য ভাইদের সঙ্গে ডিএনএ টেষ্ট করে প্রকৃত ঘটনা যাচাইয়ে কাজ করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এদিকে মামলার বাদীকেই খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। অন্যদিকে মামলার সাক্ষী সোলায়মান সেলিমের অন্য দুই ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ঢাকার শনির আখড়ায় মো. দুলাল ওরফে সোলায়মান সেলিম নামে এক ব্যক্তি ‘গুলিতে নিহত’ হয়েছেন উল্লেখ করে যাত্রবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার ভাই মোস্তফা কামাল। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, শামীম ওসমানসহ ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে প্রায় দুইশতাধিক অজ্ঞাত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলায় উল্লেখ নিহতের গ্রামের ঠিকানায় গিয়ে জানতে পারেন তিনি (সোলায়মান সেলিম) জীবিত আছেন।
এ ঘটনা জানতে পেরে জীবিত সেলিম ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া থানার প্রাণনাশের অভিযোগে একটি অভিযোগ করেন। জানা যায়, সেলিম ও মোস্তফাসহ তারা চার ভাই। তিনি ছাড়া বাকিরা ঢাকায় থাকেন।
সোলায়মান সেলিম বলেন, তার ভাইরা সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে তাকে মৃত দেখিয়ে মামলা করেছেন। ফলে এখন তিনি প্রাণভয়ে আছেন। যেহুতু তাকে মৃত দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে, ফলে যেকোনও সময় তাকে ‘হত্যার চেষ্টা’ করা হতে পারে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
গত বছরের ৩১ আগস্ট সোলায়মান সেলিমকে জুলাই আন্দোলনে মৃত দেখিয়ে মামলা করেন ভাই মোস্তফা কামাল। মামলায় তার অন্য দুই ভাই- হেলাল উদ্দিন ও আবুল হোসেনকে সাক্ষী হিসেবে দেখানো হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট বিকাল ৫টার সময় যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার পেট্রোল পাম্পের সামনে রাস্তায় ছাত্র-জনতা সরকার পতনের দাবিতে মিছিল করছিল। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর অবৈধ অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় শরীর ও মাথায় একাধিক গুলিতে সেলিম ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মামলাটি শুরুতে তদন্ত করছিল যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। তারা মামলার প্রায় ৯ মাস পরেও কথিত নিহত সেলিমের মৃত্যুর সনদ পায়নি। এছাড়া কথিত মরদেহের প্রাথমিক প্রতিবেদন বা সুরতহালও মেলেনি। পরবর্তীতে ফুলবাড়ীয়া থানা পুলিশের মাধ্যমে তার স্থায়ী ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় জীবিত রয়েছেন। এরপর সেলিম ঢাকার আদালতে জবানবন্দি ও তার বেঁচে থাকার প্রমাণের কিছু নথিপত্র দিয়েছেন। তবে আদালত আরও অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশনা দেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ।
সোলায়মান সেলিম দাবি করছেন, গত জুলাই মাসে সংঘটিত আন্দোলনে তাকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ যখন তার ঠিকানায় ওই হত্যা মামলার তদন্তে যায় তখন তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। অর্থাৎ, জীবিত থাকা সত্ত্বেও তাকে আন্দোলনে শহীদ বলে হত্যা মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
সেলিম জানান, জীবনের নিরাপত্তার শঙ্কা থেকে সম্প্রতি ফুলবাড়ীয়া থানায় তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। হত্যা মামলার বাদীর পাশাপাশি যে দুই জন সাক্ষী তারাও তার আপন ভাই বলে ডায়েরিতে উল্লেখ করেন। তিন ভাইয়ের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব থাকার কথাও জানান সেলিম।
তিনি আরও জানা, বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তার সন্দেহ পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই তার ভাই সাজানো হত্যা মামলা দিয়ে থাকতে পারে।
সেলিম বলেন, জীবিত থাকতে যদি কেউ মৃত দেখায়, তার চেয়ে দুঃখ আর কী হতে পারে? আমার ভাইরাই দেখিয়েছে আমি নাকি মারা গেছি! আমাকে মারার জন্যই এই মামলা করেছে।
এদিকে গোয়েন্দ পুলিশের ওয়ারী জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফজলুল করিম বলেন, মামলাটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। যিনি জীবিত দাবি করছেন, তিনি প্রকৃত ব্যক্তি কিনা তা যাছাইয়ে ভাইদের সঙ্গে তার ডিএনএ টেস্ট করা হবে। কেননা এখানে অনেক দাবি উঠছে, এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
মামলার বাদী মোস্তফা কামালকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, যিনি মামলাটি করেছেন, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মামলার সাক্ষী তার ভাইদেরও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে ডিবি কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন
দুধ শুধু পণ্য নয়, আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
২ জুন বিএনপিকে যমুনায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
মেঘনা নদীতে ৩৯ যাত্রী নিয়ে ট্রলার ডুবি