August 6, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, August 5th, 2025, 7:11 pm

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করলেন প্রধান উপদেষ্টা, গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকবে সংবিধানে

 

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’।

এই ঘোষণাপত্রে ফ্যাসিবাদমুক্ত, বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪’-কে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আজ বিকেলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ঘোষণাপত্রে বিগত দেড় দশকের শাসনকে ‘ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই সময়ে গুম, খুন, আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিল।

ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করা হয়। এ ছাড়া তিনটি প্রহসনের নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) এবং সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার বৈষম্যমূলক নীতির কারণে জনগণের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় এই গণবিক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়।

ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, ছাত্র-জনতার এই অদম্য অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সব স্তরের মানুষ যোগ দেয়।

ফ্যাসিবাদী বাহিনী নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে এবং অসংখ্য মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করেন। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন জানান।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। এরপর অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

জুলাই ঘোষণাপত্রে নিম্নলিখিত মূল অঙ্গীকার ও লক্ষ্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে:

রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি: ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪’-কে উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সংস্কার করা সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা: সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গঠন করা হবে।

সুশাসন ও আইনের শাসন: সুশাসন, সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।

বিচার ও জবাবদিহি: বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের দ্রুত ও উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করা হবে।

শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের সুরক্ষা: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব শহীদকে জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করা হবে এবং শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা ও আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে প্রয়োজনীয় সব আইনি সুরক্ষা দেওয়া হবে।

সাংবিধানিক সংস্কার: যুক্তিসংগত সময়ে অনুষ্ঠেয় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে।

টেকসই উন্নয়ন: পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষিত হবে।

এই ঘোষণাপত্রকে ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এনএনবাংলা/আরএম