খুলনা জেলা পরিষদের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত নথিপত্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সরকারি ফাইল উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস. এম. মাহাবুবুর রহমান। এ ঘটনায় তিনি আজ (১০ নভেম্বর) খুলনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ৮৪০) করেছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সারা দেশে সংঘটিত অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় খুলনা জেলা পরিষদ ভবনেও আগুন লাগে। এতে অসংখ্য সরকারি নথি, মূল্যবান কাগজপত্র ও অফিস সরঞ্জাম পুড়ে যায় বা চুরি হয়ে যায় বলে অভিযোগ ছিল। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তখনই থানায় সাধারণ ডায়েরি ও
মামলা করা হয় (খুলনা সদর থানা মামলা নং–৯,
অগ্নিকাণ্ডের পর ফাইলের ‘অদৃশ্য যাত্রা’::
এস. এম. মাহাবুবুর রহমান জানান, অগ্নিকাণ্ডের পর যে নথিপত্রগুলো আংশিকভাবে বেঁচে গিয়েছিল, সেগুলো সংগ্রহ করে একটি স্থানে স্তূপ করা হয়। জেলা পরিষদ ভবন সংস্কার কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিলি ট্রেডার্স এবং মেসার্স ফাহিম ট্রেডার্স ওই স্তূপ থেকে ২৮৪টি ফাইল শনাক্ত করে অফিস সহায়ক আবু সেলিম খোকনের কাছে হস্তান্তর করে।
খোকন পরে সবার অজান্তে ওই ফাইলগুলো জেলা পরিষদের নুরজাহান কাকলীর কক্ষে রেখে দেন বলে দাবি করেন মাহাবুবুর রহমান। পরবর্তীতে প্রধান সহকারী বদলি হয়ে মো. সহিদুল ইসলাম দায়িত্ব নেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি রাতের বেলায় জেলা পরিষদ ভবনে অবস্থান করতেন এবং এ সময়ই তার পক্ষে নথিপত্র স্থানান্তরের মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তার অজান্তে অফিসে ফাইল রাখা হয়’::
প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস. এম. মাহাবুবুর রহমান বলেন, “তিনি ধারণা করছেন, তাকে বিব্রত বা ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে সহিদুল ইসলাম ও এম. ডি. আসলাম হোসেন ওই ফাইলগুলো তার কক্ষে রেখে গেছেন। বিষয়টি তার একেবারেই অজানা ছিল।”
আজ দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে অফিসে কয়েকটি নথি খুঁজে না পেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যখন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন, তখনই তার কক্ষ থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল উদ্ধার হয়।
উদ্ধার হওয়া নথিগুলো::
জিডিতে উল্লেখ অনুযায়ী উদ্ধার হওয়া নথিগুলোর মধ্যে রয়েছে—রাজস্ব তহবিলের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন সংক্রান্ত নথি (২০২১–২২ অর্থবছর); রাজস্ব তহবিলের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন সংক্রান্ত নথি (২০২২–২৩ অর্থবছর); প্রকল্প অনুমোদন সংক্রান্ত নথি (২০১৭–১৮ অর্থবছর); প্রকল্প অনুমোদন সংক্রান্ত নথি (২০১৮–১৯ অর্থবছর);
রাজস্ব তহবিলের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন সংক্রান্ত নথি (২০১৯–২০ অর্থবছর);
এডিপি অর্থে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন সংক্রান্ত নথি (২০১৯–২০ অর্থবছর)।
এস. এম. মাহাবুবুর রহমান এই নথিগুলো খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী মো. সহিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেছেন বলে জিডিতে উল্লেখ রয়েছে।
‘আরও নথি ছড়িয়ে থাকতে পারে’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, পুড়ে যাওয়া বা ছড়িয়ে থাকা নথিপত্রের আরও কিছু অংশ এখনো বিভিন্ন স্থানে থাকতে পারে। কোনো ব্যক্তি ভবিষ্যতে সেগুলো ব্যবহার করে “উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে” তাকে বা জেলা পরিষদ প্রশাসনকে বিব্রত করার চেষ্টা করতে পারে বলেও জিডিতে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে খুলনা সদর থানার একজন কর্মকর্তা বলেন, “ঘটনাটি জিডি হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত নথিপত্র উদ্ধারের বিষয়টি পূর্বের মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত কি না, তা যাচাই করা হবে।”
২০২৪ সালের আগস্টে অগ্নিসংযোগের পর খুলনা জেলা পরিষদে প্রশাসনিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। অনেক প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া ও আর্থিক লেনদেনের তথ্য হারিয়ে যায়। প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমানের করা নতুন সাধারণ ডায়েরি ঘটনাটির তদন্তে নতুন মোড় আনতে পারে বলে স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক সূত্র ধারণা করছে।
সরকারি নথিপত্র সংরক্ষণে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

আরও পড়ুন
গাবতলী ও শাজাহানপুরে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ
কুড়িগ্রামে বিজিবির বিশেষ অভিযানে ৩৫ লাখ টাকার চোরাচালানী জব্দ, আটক ১
হোসেনপুরে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক: ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কার্যক্রম