নিজস্ব প্রতিবেদক
ভোলা সদর উপজেলার ১৩ নং দক্ষিণ দীঘলদি ইউনিয়নের জেলেদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাতের অভিযোগে উঠেছে ইউপি প্রশাসক ও দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযোগে বলা হয় ইউপি প্রশাসক মোঃ রকিবুল হাসান, ১৩ নং দক্ষিণ দীঘলদি ইউনিয়নের বিএনপির সেক্রেটারী ঈসমাইল কাজি ও সাবেক চেয়ারম্যান আবু নোমান মোহাম্মদ শফিউল্লাহ (যিনি এলাকায় নোমান চেয়ারম্যান নামেই অধিক পরিচিত) যোগসাজশ করে ভোলা সদরে অবস্থিত গুদাম থেকে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ৮ টন চাল আত্মসাত করে অন্যত্র বিক্রি করে ফেলেন।
নিজেদের নামে বরাদ্দকৃত চাল না পেয়ে বঞ্চিত জেলেরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইউপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
জানা যায়, গতকাল শনিবার ইউপি প্রশাসক মোঃ রকিবুল হাসান জেলেদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত চাল বিতরণের জন্য ইউনিয়ন কার্যালয়ে যান। কিছু জেলে তাঁদের নামে বরাদ্দকৃত চাল পেলেও অধিকাংশ জেলে পাননি। একপর্যায়ে বঞ্চিত জেলেরা প্রশাসক রকিবুল ইসলামকে ইউপি কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাল না পাওয়া একজন জেলে বলেন সরকার আমাদের জন্য চাল বরাদ্দ দিয়েছেন কিন্তু আমাদের তা দেয়া হচ্ছে না। ঈসমাইল কাজি ও নোমান চেয়ারম্যানের পছন্দের লোকদের দেয়া হয়েছে। এখন বলা হচ্ছে চাল নেই। তাহলে আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল গেল কোথায়?
তিনি আরও বলেন আমরা জানতে পেরেছি নোমান চেয়ারম্যান, ঈসমাইল কাজি ও ইউপি প্রশাসক যোগসাজশ করে আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল অন্যত্র বিক্রি করে ফেলেছেন।
ঐ জেলে আরও বলেন নোমান চেয়ারম্যান অত্যন্ত ক্ষমতাবান, তাকে সবাই ভয় করে, তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে ভয় পায়। তিনি এলাকায় অনেক অপকর্মের সাথে জড়িত। আমরা এই অন্যায়ের বিচার চাই।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঈসমাইল কাজি বলেন আমি অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ একটি ফোন পাই এবং জানতে পারি ইউপি কার্যালয়ে চাল বিতরণ নিয়ে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। পরে আমি সেখানে যাই। গিয়ে দেখতে পাই কিছু লোক মিছিল করেছে। পরে জানতে পারি তারা তাদের নামে বরাদ্দকৃত চাল পাননি।
এই বিএনপি নেতা বলেন আমি বঞ্চিত জেলেদের নিয়ে ইউপি প্রশাসকের রুমে গিয়ে তার কাছে জানতে চাই কেন এই জেলেরা তাদের নামে বরাদ্দকৃত চাল পাননি?
ঈসমাইল কাজি জানান ইউপি প্রশাসক তার কাছে স্বীকার করেছেন যে চাল বিতরণে কিছু অনিয়ম হয়েছে এবং তিনি নিজ উদ্যোগে এটি সমাধান করে দিবেন।
নিজের নামে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করে ঈসমাইল কাজি বলেন এর সাথে আমার নূন্যতম কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এই অনিয়মের পুরো দায় ইউপি প্রশাসকের।
যোগাযোগ করা হলে অভিযোগের ব্যাপারে নোমান চেয়ারম্যান বলেন আমি ইউনিয়নের কেউ নই। আমি কেনো সেখানে যাবো? সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে তিনিই সে ব্যাপারে দায়িত্বশীল।
সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর থেকে একবারের জন্যও আমি ইউপি কার্যালয়ে যাইনি।
তিনি অভিযোগ করেন কেউ একজন তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছে।
প্রশাসক ও একই সাথে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মোঃ রকিবুল হাসান অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন কিছু অনিয়ম হয়েছে সত্য তবে তার আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতৃত্বকে দায়ী করে বলেন ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি ও তার লোকজন এই অনিয়মের প্রধান কুশিলব। তাঁদের কারণে সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।
তিনি চাল আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন বরাদ্দ কম আসার কারণে সবাইকে দেয়া সম্ভব হয়নি।
৫ আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর নোমান চেয়ারম্যান ও ঈসমাইল কাজির বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখলের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পতিত আওয়ামী লীগের অনেককে বিএনপির রাজনীতিতে পুনর্বাসনেরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
নোমান চেয়ারম্যানকে হাইব্রিড নেতা উল্লেখ করে স্থানীয় বিএনপি অনেক ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতা জানান তিনি (নোমান চেয়ারম্যান) আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের আত্মীয়। ৫ আগষ্টের পর তিনি আওয়ামী লীগের অনেককে টাকার বিনিময়ে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন।
আরও পড়ুন
শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের সাংবাদিকদের সম্মানে হাজী সেলিম ফাউন্ডেশন এর ইফতার মাহফিল ও মতবিনিময়
ঈদকে সামনে রেখে সুন্দরবনে বাড়তি নিরাপত্তা, বনজ সম্পদ রক্ষায় কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল
একাত্তরের ২৮ মার্চ: ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করে নিহত হয় হাজারো মানুষ